ফুটবল
প্রজন্মের দুই সেরা
ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখ। এই দিনে একজন নয়, দুই–দুইজন ফুটবলার জন্ম নিয়েছিলেন, যাঁদের দুজনকেই বিবেচনা করা হয় বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে। কীভাবে তাঁরা সেরা হয়ে উঠলেন?
রোনালদো
সময়ের সবচেয়ে পরিশ্রমী ফুটবলারদের একজন রোনলাদো। চার ভাইবোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবচেয়ে ছোট। ছোট বলেই যে খুব আদুরে ছিলেন, তা কিন্তু নয়। এক রুমে থাকতে হতো চার ভাইবোনকে। তাঁর বাবা ছিলেন গার্ডেনার, মা ছিলেন শেফ। তাঁর বাবা ডিনিসের খুব প্রিয় একজন মানুষ ছিলেন রোনাল্ড রিগান। তাঁর নামে রেখে দিলেন ছোট ছেলের নাম। ছেলেটি বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাধর হয়নি, তবে ফুটবল বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়েছেন। মাধ্যমে নিজেকে চিনিয়েছেন বিশ্বজুড়ে। নিশ্চয়ই তোমরা ধরে ফেলেছ কার কথা বলা হচ্ছে। হ্যাঁ, বলা হচ্ছে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর কথা।
তোমরা যখন রোনালদোর খেলা দেখো, স্কিল আর গতি দেখে নিশ্চয়ই মুগ্ধ হও। এই গুণ রোনালদো পেয়েছিলেন ছোটবেলা থেকেই। তাঁর বয়স যখন আট, এন্দোরিনা (Andorinha) নামের এক ক্লাবে যোগ দেন। আর তখনই তাঁর খেলায় প্রতিভার ছাপ স্পষ্ট। ছোটবেলায় ছিলেন খুবই লাজুক প্রকৃতির। আর বল নিজের নিয়ন্ত্রণে না থাকলেই কেঁদে ফেলতেন। বন্ধুরা তাই তাঁর নাম দিয়েছিলেন ক্রাই বেবি। তবে জেতার জন্য সেই ছোটবেলা থেকেই একটা জেদ কাজ করত তাঁর। আর ছোটবেলায় কিন্তু এতটা লম্বা ছিলেন না। তাঁর সাইজ আর গতির কারণে তাঁর নাম দেওয়া হয়েছিল লিটল বি। এখনো তো তা–ই। রোনালদো যখন বল নিয়ে দৌড়ান, কেউ কি ধরতে পারে! মাদিরার পাহাড়ে উড়ে বেড়ানো সেই লিটল বি–কে চিনতে ভুল হয়নি কারও। তাঁর বয়স যখন দশ, এলাকার সবচেয়ে বড় ক্লাব তাঁকে নিয়ে নেয় দলে। বয়সভিত্তিক দলে তো খেলতেনই, কয়েক বছরের বড়দের সঙ্গেও খেলতে দেখা যেত তাঁকে।
ছোটবেলার সেই রোনালদোর বড়বেলার গল্প তোমরা সবাই–ই জানো। পাঁচ–পাঁচ বারের ব্যালন ডি অর–জয়ী এই ফুটবলার বর্তমান বিশ্বের সফলতম ফুটবলারদের একজন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে অসাধারণ এক মৌসুমের সুবাদে ২০০৮ সালে প্রথম ব্যালন ডি অর জেতেন এই পর্তুগিজ তারকা। তার পরের চারবার মেসিকে নিতে দেখেছেন এই ট্রফি। থেমে যাননি। পরিশ্রমী এই ফুটবলার দেখিয়ে দিয়েছেন, পরিশ্রম একজন মানুষকে কোথায় নিয়ে যেতে পারে। ২০০৪ সালের ইউরোর ফাইনালে হেরে যাওয়ার দিন রোনালদো কেঁদেছিলেন অনেক। এক যুগ ধরে পরিশ্রম করে গেছেন। ২০১৬ সালে আর কাঁদতে হয়নি। দেশের হয়ে এই ট্রফি জিতে দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন অনেক ব্যক্তিগত সাফল্য। বর্তমানে পর্তুগাল জাতীয় দল ও ইতালির ক্লাব জুভেন্টাসের হয়ে খেলেন এই ফুটবলার।
নেইমার
পর্তুগালে সাত বছরের এক কিশোর যখন ফুটবলের মধ্যে ডুবে আছে, তখন প্রায় সাত হাজার কিলোমিটার দূরে ব্রাজিলের সাও পাওলোর এক শহরে জন্ম হলো একটি শিশুর। নাম তাঁর নেইমার। বাবার একই নাম হওয়ায় তাঁর নাম হয়ে যায় নেইমার জুনিয়র। নেইমারের বাবাও ছিলেন একজন ফুটবলার। তবে ফুটবল খেলে সংসার সামলানো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আর নিজের প্রিয় খেলা বাদ দিয়ে অন্য কাজ করা শুরু করেন। ব্রাজিলের সাও পাওলোর মগি দাস ক্রুজেস (Mogi das Cruzes), সেই শহরে তখন কাজ খুঁজেই পাওয়া খুব কঠিন ছিল। এমনও দিন গেছে, দিনে তিনটি ভিন্ন জায়গায় কাজ করে অর্থকড়ি অর্জন করতে হতো নেইমার সিনিয়রের। শুধু কি তা–ই! বাধ্য হয়ে দুই সন্তান আর স্ত্রীকে নিয়ে উঠতে হয় বাবার বাসায়। সেখানে এক ঘরে চারজন মিলে থাকতেন। পরিবারে সবার মুখে অন্ন জোটাতে হিমশিম খেতে হতো। রাতে নেইমারদের বাসায় থাকত না বিদ্যুৎ। টাকা খরচ করে বিদ্যুৎ–সংযোগ দেওয়ার কথা ভাবনায়ও আনতে পারতেন না, এমন ছিল অবস্থা।
মোমবাতি জ্বলত তাঁদের ছোট্ট ঘরে। তবে নেইমার আর তাঁর বোন দুজন মোমবাতির আলোয় বেশ মজাই পেত। সেদিন কেউ জানতই না যে সেই ঘরে এমন একজন শিশু বড় হচ্ছে, যার আলোয় একদিন গোটা ফুটবলবিশ্ব আলোকিত হবে।
এলাকার কোনো ভালো স্কুলে পড়ার সুযোগ হয়নি নেইমারের। তবে অলিতে–গলিতে নিজের প্রতিভা জানান দিতে থাকেন এই ব্রাজিলিয়ান। এগারো বছর বয়সে সান্তোসের বয়সভিত্তিক দলে সুযোগ পেয়ে যান। তবে এর কয়েক বছর পর রিয়াল মাদ্রিদের ইয়ুথ প্রোগ্রামে টিকে যান নেইমার। কিন্তু সেখানে আর যাননি। কারণ নিজ দেশের ক্লাবই তাঁকে বেশি টাকা দিয়েছিল। রিয়াল মাদ্রিদে শেষ পর্যন্ত না যাওয়া সেই ছেলেটিই আজ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়। বার্সেলোনার হয়ে ট্রেবল জেতার বিরল রেকর্ড আছে তাঁর ক্যারিয়ারে। ব্রাজিলের হয়ে তো গোল করেই চলেছেন প্রতিনিয়ত। বর্তমানে ব্রাজিল জাতীয় দলের এই ফুটবলার ক্লাবের হয়ে খেলেন ফরাসি ক্লাব পিএসজিতে।