নেইমার

নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়র : প্রথম আলো

নেইমার দ্য সিলভা জুনিয়রের জন্ম ৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৯২ ব্রাজিলের সা্ও পাওলো রাজ্যের মোগি দাস ক্রুজেস শহরে। প্যারিস সেন্ট জার্মেই তারকা বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দামি ফরোয়ার্ড। বার্সেলোনায় খেলার সময় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার হিসেবে। ব্রাজিলের খ্যাতনামা ক্লাব সান্তোসের যু্ব প্রকল্পে বেড়ে উঠেছেন নেইমার। এ ক্লাবটির হয়েই পেশাদার ফুটবলে পা রাখেন ১৭ বছর বয়সে। সান্তোসের হয়ে টানা পাউলিস্তা (শীর্ষ লিগ) জিতে নজর কাড়েন ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোর।


২০১১ সালে সান্তোসকে ৪৮ বছর পর জেতান লাতিন আমেরিকান ক্লাব ফুটবলের সেরা আসর কোপা লিবারোদোরেস। ২০১৩ সালে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনায় পাঁচ বছরের চুক্তিতে যোগ দে্ওয়ার আগের দুই বছর জিতে নেন লাতিন আমেরিকার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরষ্কার। ২০১৩-১৪ মৌসুমে লা লিগায় বার্সার হয়ে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচে অভিষেক ঘটে নেইমারের। বার্সার আক্রমণভাগে লি্ওনেল মেসি ও লুই সুয়ারেজের সঙ্গে জুটি বেঁধে আটটি শিরোপা জিতেছেন নেইমার। দুটি লা লিগা, তিনটি কোপা ডেল রে, একটি করে চ্যাম্পিয়নস লিগ, সুপার কোপা ডিএসপানা ও ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ।


২০১৪-১৫ মৌসুমে জিতেছেন মহাদেশীয় ‘ট্রেবল’- লা লিগা, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও কোপা ডেল রে। এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের অষ্টম খেলোয়াড় হিসেবে দুটি মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট (কোপা লিবারোতদোরেস্ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ) জয়ের নজির গড়েন তিনি। এ দুটি টুর্নামেন্টের ফাইনালে গোল করা প্রথম খেলোয়াড়্ও নেইমার। বার্সায় পরের মৌসুমে (২০১৫-১৬) জিতেছেন ঘরোয়া ‘ডাবল’। ২০১৫ সালে ফিফা ব্যালন ডি’অর পুরষ্কারে মেসি, রোনালদোর পর তৃতীয় হন নেইমার। বার্সায় থাকতে মেসি-সুয়ারেজের সঙ্গে তাঁর জুটি খ্যাতি পেয়েছিল ‘এমএসএন’ নামে। তৎকালীন ফুটবল বিশ্বের অন্যতম সেরা এই আক্রমণভাগ ২০১৪-১৫ মৌসুমে ১২২ গোল করেছিল। স্প্যানিশ ফুটবলের ইতিহাসে কোনো ‘ত্রিফলা’ আক্রমণভাগের এটাই সরোবচ্চ গোলের রেকর্ড।

নেইমারকিন্তু ২০১৭ সালের আগস্টে রেকর্ড ২২ কোটি ২০ লাখ ইউরো ট্রান্সফার ফি-তে বার্সা ছেড়ে নেইমার যোগ দেন প্যারিস সেন্ট জার্মইয়ে (পিএসজি)। এখন পর্যন্ত এটাই বিশ্বের সবচেয়ে দামি ট্রান্সফার। পাঁচ বছরের চুক্তিতে পিএসজিতে যোগ দিয়েই (২০১৭-১৮) জিতেছেন লিগ ওয়ান ও ফ্রেঞ্চ লিগ কাপ। তবে মৌসুমটা মাঠে থেকে শেষ করতে পারেননি। ২৫ ফেব্রুয়ারি অলিম্পিক মার্শেইয়ের বিপক্ষে পায়ের পাতার হাড় ভেঙে নেন নেইমার। অস্ত্রোপচারের পর থেকেই মাঠের বাইরে রয়েছেন ২৬ বছর বয়সী খেলোয়াড়টি। সম্মোহনী ড্রিবলিং, গতি, দুই পায়েই বল নিয়ন্ত্রনের ক্ষমতা আর নিখুঁত ফিনিশিংয়ের জন্য নেইমার নজর কেড়েছিলেন শৈশবেই।

২০১০ বিশ্বকাপ ব্রাজিল দলে তাঁকে অর্ন্তভুক্তির অনুরোধ করেছিলেন পেলে ও রোমারিও। কিন্তু সেবার ভাগ্যে শিঁকে না ছিঁড়লেও খেলেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপ।  ব্রাজিলের ইতিহাসে চতুর্থ সরোচ্চ (৮৩ ম্যাচে ৫৩ গোল) এ গোলদাতা ফিফা কনফেডারেশনস (২০১৩) কাপ ও অলিম্পিকে সোনা (২০১৬) ছাড়া বড় কোনো সাফল্য পাননি। ২০১০ সালের ১০ আগষ্ট ১৮ বছর বয়সে তাঁর অভিষেক ঘটে ব্রাজিলের জার্সিতে। ২০১৪ সালে ঘরের মাঠে বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত ৪ গোল করেছিলেন নেইমার। কলম্বিয়ার বিপক্ষে সেই ম্যাচে মারাত্মক চোট পা্ওয়ায় সেমিফাইনাল খেলতে পারেননি। সেমিতে জার্মানির কাছে ১-৭ গোলের ঐতিহাসিক পরাজয় বরণ করে ব্রাজিল।

সেই বিশ্বকাপের সেরা একাদশে জায়গা করে নেওয়ার সঙ্গে ‘ব্রোঞ্জ বুট’ (যৌথভাবে তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা) জেতেন নেইমার। ২০১৫ কোপা আমেরিকায় সেভাবে ভালো করতে পারেননি। কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নেয় ব্রাজিল। ব্রাজিলের রাস্তায় ‘স্ট্রিট ফুটবল’ ও ফুটসাল খেলে বেড়ে উঠেছেন নেইমার। তাঁর বাবা নেইমার সিনিয়র নিজেও ফুটবলার ছিলেন। মায়ের নাম নাদিন সিলভা। শৈশবে দারিদ্রতার শিকার হলেও ফুটবল প্রতিভায় ভাগ্য পাল্টে ফেলেনে নেইমার। ১৬ বছর বয়সে তাঁর আয় ছিল মাসিক ১ লাখ ২৫ হাজার রিয়াল। পরের বছর করেন প্রথম স্পন্সর চুক্তি।

নেইমার ব্যক্তিগত জীবনে খ্রিষ্টান ধর্মরে অনুসারী। সাবেক বান্ধবি ক্যারোলিনা দান্তাসের সঙ্গে সম্পর্ক থাকতে ডেভিড লুকা নামে এক ছেলের বাবা হন। এরপর ব্রাজিলের অভিনেত্রী ব্রুনা মারকুয়েজর সঙ্গে সম্পর্ক চলছে তাঁর। ক্যারিয়ারে বিতর্কও সঙ্গী হয়েছে। ২০১৩ সালে তাঁর ট্রান্সফার ঘিরে কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল বার্সার বিপক্ষে। ব্রাজিলের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফুটবলারটি এবার ২০১৮ বিশ্বকাপে ‘সেলেকা্ও’দের মূল ভরসা।