ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ১৯৮৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। নেইমারের সঙ্গে একই দিনে জন্মদিন হলেও ফুটবলীয় অর্জনে তাঁর একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী লিওনেল মেসি। পর্তুগালের মাদেইরা দ্বীপপুঞ্জে জন্ম গ্রহণ করা রোনালদো রাশিয়া বিশ্বকাপে তৃতীয়বারের মতো দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। রেকর্ড পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর বিজয়ী এই ফুটবলার অনেকের চোখেই বিশ্বসেরা। তিনবারের প্রিমিয়ার লিগ জয়ী রোনালদো দুবার জিতেছেন লা লিগা। এছাড়া চারবারের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী রোনালদো বিশ্ব ক্লাবকাপও জিতেছেন চারবার। একটি এফএ কাপ, দুটো লিগ কাপ ও দুবারের কোপা দেল রে জয়ী এই ফরোয়ার্ড অবশ্য নিজের সসেরা সাফল্য হিসেবে পর্তুগালের হয়ে ২০১৬ ইউরো জেতার কথাই বলেন। ২০১৫ সালেই পর্তুগালের ইতিহাসের সেরা ফুটবলার হিসেবে রোনালদোর নাম ঘোষণা করেছে দেশটির ফুটবল ফেডারেশন।
ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে সর্বোচ্চ গোলের মালিক রোনালদো দেশের হয়েও সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকার তিনে আছেন। এক পঞ্জীকাবর্ষে সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গোল (৩২) তাঁর। চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের (২৯) সর্বোচ্চ গোলদাতাও রোনালদো। প্রথম ফুটবলার হিসেবে ম্যাচের প্রতি মিনিটে গোলের রেকর্ড করেছেন এই রিয়াল মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা সাতটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় (ইউরো-২০০৪,০৮,১২,১৬ ও বিশ্বকাপ-০৬,১০১৪) গোল করেছেন। প্লেমেকার হিসেবেও তিনি কম যান না, চ্যাম্পিয়নস লিগ ও ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে সতীর্থদের দিয়ে সবচেয়ে বেশি গোল করানোর রেকর্ডও পর্তুগিজ অধিনায়কের।
১৯৮৫ সালে মাদেইরার রাজধানী ফানচালে জন্ম গ্রহণ করেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ডস সান্তোস অ্যাভেইরো। মালী বাবা ও রাধুনী মায়ের ঘরের সর্বকনিষ্ঠ সন্তান রোনালদো। যুক্তরাস্ট্রের সাবেক রাস্ট্রপতি রোনাল্ড রিগ্যানের নাম থেকেই রোনালদো নামটা বেছে নিয়েছেন জোসে দিনিস ও মারিয়া ডলোরেস। শৈশবটা অভাব অনটনে কেটেছে রোনালদোর। স্থানাভাবে অ্যাভেইরো পরিবারের চার সন্তানই একই রুমে বেড়ে উঠেছে। আর ২০১৬ ও ২০১৭ সালে ফোর্বস সাময়িকীর সর্বোচ্চ আয় করা অ্যাথলেটদের তালিকার শীর্ষে ছিলেন রোনালদো।
রোনালদোর ফুটবলার হওয়ার পেছনে তাঁর বাবা-মার অবদান সবচেয়ে বেশি। পরিবারের খরচ জোগাতে পৌরসভার মালির চাকরির বাইরে স্থানীয় ক্লাব অন্দোরিনহার কিট ম্যানও ছিলেন রোনালদোর বাবা জোসে। সে সুবাদেই মাত্র ৭ বছর বয়সে আন্দোরিনহায় যোগ দেন রোনালদো। ১২ বছর বয়সে স্পোর্টিং সিপির তিন দিনের এক ট্রায়ালে যাওয়াটাই রোনালদোর জীবনের গল্পটা পালটে দেয়। মেদেইরা ছেড়ে লিসবনে স্পোর্টিংয়ের ইয়ুথ একাডেমিতে যোগ দেন ক্রিস্টিয়ানো। ১৪ বছর বয়সেই ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে নিঃসন্দেহ হয়ে যাওয়ায় মায়ের সঙ্গে কথা বলে লেখাপড়ায় ইস্তফা দেন। পরের বছরই শারীরিক সমস্যায় ফুটবল থেকে বিদায় নেওয়ার উপক্রম হয়েছিল তাঁর। হৃদস্পন্দনের সমস্যায় ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে শঙ্কায় পড়েছিলেন রোনালদো। অস্ত্রোপচার করে সে শঙ্কা কাটিয়ে আর কখনো পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি রোনালদোকে।
পেশাদার ক্যারিয়ারের অভিষেকে জোড়া গোল করা রোনালদো ক্লাব ফুটবলে স্পোর্টিং সিপির পর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ও রিয়াল মাদ্রিদে খেলেছেন। আর এ যাত্রায় গড়েছেন অসংখ্য রেকর্ড।
রিয়াল মাদ্রিদীর ইতিহাসের সর্বোচ্চ গোলদাতা এখন রোনালদো। মাত্র ৯ মৌসুম খেলেই লা লিগায় রেকর্ড ৩৩টি হ্যাটট্রিক তাঁর। এতেই লা লিগায় দ্রুততম দেড় শ, দুই শ ও তিন শ গোলের রেকর্ডটি এখন রোনালদোর দখলে। একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে টানা ৬ মৌসুমে কমপক্ষে ৫০ গোল তাঁর। টানা ৭ পঞ্জীকাবর্ষে ৫০ গোল করার রেকর্ডটিও শুধুই রোনালদোর। মেসির সঙ্গে যুগ্মভাবে ফিফার বর্ষসেরা দলে এগারোবার জায়গা পেয়েছেন, তবে রোনালদোই একমাত্র খেলোয়াড় যিনি দুই ক্যাটাগরিতে ফিফার দলে নাম লিখিয়েছেন।
ইউরোপিয়ান ফুটবলে রোনালদোর আধিপত্য আরও ভয়ংকর। মোট ১২বার উয়েফার বর্ষসেরা দলে জায়গা পেয়েছেন রোনালদো। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী মেসি যা করতে পেরেছেন মাত্র ৯ বার। এর পেছনে চ্যাম্পিয়নস লিগে রোনালদোর অর্জনই ভূমিকা রেখেছে। ইউনাইটেড ও রিয়ালের হয়ে চারবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার পথে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে এ প্রতিযোগিতায় ১০০ গোল করেছেন। কোনো নির্দিষ্ট ক্লাবের হয়ে ১০০ গোল করা প্রথম ফুটবলারও রোনালদো। গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচে গোল করার অনন্য অর্জনটিও শুধুই তাঁর।
ব্যক্তিগত জীবনে চার সন্তানের জনক রোনালদো। সাত বছরের রোনালদো জুনিয়র ২০১৭ সালের জুনে এক বোন ও এক ভাই পেয়েছে সঙ্গী হিসেবে। আর বছরের শেষভাগে বান্ধবী জর্জিনা রদ্রিগেজের গর্ভে রোনালদোর দ্বিতীয় কন্যার জন্ম হয়েছে।