বেশ কিছুদিন আগের কথা, ফ্লাইট ধরতে বিমানবন্দরে নেইমার। সঙ্গে সঙ্গে বেধে গেল জটলা, হাজারো কথার মাঝে একটা প্রশ্ন কানে বাজল সবচেয়ে বেশি, ‘মিস্টার নেইমার, আপনি যাচ্ছেন কোথায়?’ ত্বরিত গতিতে প্রশ্নের উত্তর ছুড়ে দিলেন নেইমার, ‘আপনারা জায়গা দিলে আপাতত বাসায়।’
আপাতদৃষ্টে হাসির ছলে উত্তর দিচ্ছেন বলে মনে হলেও, উত্তরের পেছনে কি কষ্ট লুকিয়ে রেখেছেন নেইমার? রেকর্ড মূল্যে ভিড়েছিলেন পিএসজিতে। বার্সেলোনার নাম, জশ, খ্যাতি ছেড়ে পিএসজিতে ভিড়েছিলেন নতুন এক স্বপ্ন নিয়ে। তুলনামূলক নতুন একটি দলকে ইউরোপিয়ান পরাশক্তিতে পরিণত করার ইচ্ছা ছিল তাঁর। অথচ পিএসজি ক্যারিয়ারের পুরোটাই কেটেছে পাদপ্রদীপের আলোর নিচে, নিত্যনতুন স্ক্যান্ডাল আর বিতর্কের মধ্য দিয়ে। প্রতিবার দলবদলের মৌসুম আসে, আর নতুন করে প্রশ্ন ওঠে, আসলেই কি নেইমার পিএসজি ছাড়ছেন?
নেইমারের পিএসজি-যাত্রা ছিল একই সঙ্গে স্বপ্নভঙ্গ ও স্বপ্নযাত্রায়। অনেক আশা নিয়ে ব্রাজিল থেকে স্পেনে ভিড়েছিলেন নেইমার। মেসি-সুয়ারেজদের সঙ্গে একসঙ্গে ভালো মানিয়ে নিয়েছিলেনও বটে। তবে নেইমার পিএসজির চোখে পড়েন ‘রেমেন্টোডা’ দিয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট রাউন্ডে পিএসজির বিপক্ষে অসাধারণ এক কামব্যাক করে তাক লাগিয়ে দেয় বার্সা। পুরো ম্যাচে নেইমার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেও সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন লিওনেল মেসি। নেওয়াটা অস্বাভাবিক নয়, বিশ্বের সেরা তারকা, এমন একটা কামব্যাকের পর সামনের সারিতে তাঁকে দেখা অবাক করার মতো কিছু ছিল না। এরই ঠিক তিন মাস পর সেই প্যারিস থেকেই এক উড়োপ্রস্তাব আসে নেইমারের কাছে। চাইলে তার রিলিজ ক্লজ পরিশোধ করেই তাঁকে কিনতে পারে পিএসজি। শুধু দরকার নেইমারের সম্মতি। নেইমারও রাজি হয়ে যান। সেখান থেকেই শুরু নেইমার আর পিএসজির যাত্রা। আর সেই সঙ্গে নেইমারের পিএসজি ছাড়ার গল্প।
তবে এবার নেইমারের প্রস্থানের গুঞ্জন আগের থেকে অনেক বেশি। বেশ কয়েকটা দল তাঁকে ভেড়ানোর জন্য লাইনে দাঁড়িয়েও রয়েছে। প্যারিসের নীল জার্সি ছেড়ে কোথায় ভিড়তে পারেন নেইমার? সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজা যাক।
চেলসি
প্যারিসের নীল ছেড়ে লন্ডনের নীলে ভেড়ার সুযোগ আছে নেইমারের কাছে। চেলসির নতুন মালিকের কাছে টাকা যেন তেজপাতা। যাকে পছন্দ হচ্ছে, তাঁকেই কিনছেন। টাকাপয়সা খরচ করতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য নেই তাঁর। তবে তাতে দলের উপকারের থেকে অপকারই হচ্ছে বেশি, টেবিলের তলানির দিকে থাকা দলের অবস্থাও তথৈবচ। দলে তারকা বলতে কেউ নেই বললেই চলে। সেখানে নেইমার হতে পারেন নতুন চেলসি যুগের নেতা।
আল হিলাল
এখন ফুটবলে চলছে সৌদিদের দৌরাত্ম্য। যাঁকে পাচ্ছে তাঁকেই চড়া দামে কিনে নিচ্ছে সৌদি ক্লাবগুলো। রোনালদো থেকে শুরু। তাঁর পথ ধরে হেঁটেছেন বেনজেমা, কান্তে। এমনকি মেসিকেও দলে ভেরানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছিল সৌদি ক্লাব আল হিলাল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তাঁকে ছিনিয়ে নিয়ে যায় আমেরিকান সকার লিগ। তাই বলে তারকা ভেরানোর যুদ্ধে ক্ষান্ত হয়নি তারা; বরং নজর দিয়েছে নেইমারের দিকে। মেসিকে হাতছাড়া করার পর নেইমারকে দলে ভেরাতে চায় তারা। এর জন্য প্রস্তাবও তৈরি করেছে, বাকি শুধু তাঁর সম্মতি।
নিউক্যাসেল ইউনাইটেড
বছর দুয়েক আগে এই দলের নাম বললে হয়তো হেসেই উড়িয়ে দিত অনেকে। প্রিমিয়ার লিগের রেলিগেশন ব্যাটেলে লড়া দলটি রাতারাতি পাল্টে গেছে সৌদি টাকার প্রভাবে। তবে অন্যান্য দলের সঙ্গে মেলালে হবে না। তাদের প্রতিটি দলবদলই হয়েছে চিন্তাভাবনা করে, যাতে দলের উন্নতি হয়। ইংলিশ জায়ান্টদের সঙ্গে নিজেদের পাল্লা দেওয়ার জন্য।
কিন্তু আগামী মৌসুম থেকে তো শুধু ইংলিশ নয়, নিউক্যাসেলকে লড়তে হবে ইউরোপিয়ান পরাশক্তিদের সঙ্গে। ইউরোপিয়ান পরাশক্তিদের চোখে চোখ রেখে কথা বলতে গেলে তেমন খেলোয়াড় তো দরকার। সে ক্ষেত্রে নিউক্যাসেলের পছন্দ নেইমার। নেইমার যেমন নিউক্যাসেলে গেলে নিজের মতো করে দলকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন, তেমনই নেইমারকে পেয়ে ইউরোপিয়ান পরাশক্তি হওয়ার পথে নতুন করে হাঁটা শুরু করবে নিউক্যাসেল। সব মিলিয়ে নেইমারের জন্য সবচেয়ে সেরা জায়গা হবে নিউক্যাসেল।
ম্যানচেস্টার সিটি
নামটা শুনেই অবাক হতে হয়। যাদের দলে আছে হালান্ড, গ্রিলিশের মতন নাম, বেঞ্চে বসে থাকেন রিয়াদ মাহরেজ, জুলিয়ান আলভারেজের মতো খেলোয়াড়; তারা কি না দলে ভেড়াবে নেইমারকে? কিনলে খেলাবেই-বা কোথায়? সিটির গুজবটা উড়োখবর হিসেবেই এসেছিল অনেকের কাছে। গুঞ্জন আরও বেড়ে যায়, যখন পেপ গার্দিওলা নিজে স্বীকার করেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে নেইমারের সঙ্গে তাঁর কথা হচ্ছে। সিটি নেইমারকে ভেড়ানোর চেষ্টা করলেও তা খুব যে একটা সফল হচ্ছে না, তা বলে দেওয়া যায় এখনই।
ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড
সম্প্রতি মালিকানা বদল হয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের। গ্লেজার পরিবারের কাছ থেকে চড়া দামে ‘রেড ডেভিল’দের কিনে নিয়েছেন কাতারি রয়্যাল শেখ জসিম। নতুন মালিক সমর্থকদের নতুন তারকা উপহার দেবেন, এটা ভাবাই স্বাভাবিক। নতুন তারকা হিসেবে নেইমার দারুণ উপহার হতে পারেন সমর্থকদের জন্য। নতুন মালিক আসার পর থেকেই শক্তপোক্ত হয়েছে গুজবটি।
এমএলএস
একটা সময় ছিল, বয়স ৩০ পার হলেই খেলোয়াড়রা ছুটতেন আমেরিকায়। ছয় মাস ফুটবল, হলিউডের টান, সব ক্ষেত্রে টাকার ছড়াছড়ি। সব মিলিয়ে এমএলএস (মেজর লিগ সকার) যতটা না ফুটবলের জায়গা, তার থেকে বেশি আনন্দের। আর নেইমারের পছন্দ যে এই আনন্দ, তা তো নতুন করে বলতে হবে না। মেসি হেঁটেছেন এমএলএসের পথে। কে জানে, নেইমারও হাঁটবেন কি না!