পানিপুরি নিয়ে গুগলের ডুডল
পানিপুরি দেখলে কি তোমার জিভে জল আসে? রাস্তার পাশে পানিপুরি বিক্রি করা মামাকে ছুটে গিয়ে বলো, মামা এক প্লেট পানিপুরি, প্লিজ! মামা যত্ন করে একটা পুরির মতো খালি আবরণের ভেতরে পুরে দেন আলুবাটা, ছোলাবাটা, মসলা, মরিচ আর জিবে জল আনা পানীয়? পানিপুরির খোসাটা থাকে মুচমুচে। ভেতরটায় ঝকমারি উপকরণ।
তৈরি হয়ে গেলে প্লেটটা নিয়ে একটু সরে দাঁড়াও? আস্ত পুরিটা মুখের মধ্যে পুরে দিতে হবে তো! তাই একটু প্রাইভেসি দরকার। এক কামড়েই মুখের ভেতর ছড়িয়ে যায় স্বাদ। পানিপুরি নিয়ে এত কথা কেন? উত্তর হলো, এটি অনেকের পছন্দের খাবার।
পানিপুরি নিয়ে সুন্দর একটি ডুডল গেম বানিয়েছে গুগল। ডুডল বানিয়ে পানিপুরিকে উদ্যাপন করা হচ্ছে। গুগলের সার্চ বক্সের ওপরে ডুডলটি দেওয়া আছে। ডুডলে ক্লিক করলে গেমটি চালু হবে। খেলার নিয়ম খুব সোজা। অনেকগুলো পানিপুরি দেওয়া থাকবে। অনেক রকম। কোনোটার ভেতরে সবুজ। কোনোটাই ভেতরে দই ফুচকার উপকরণ। তো পানিপুরির প্লেটের ওপরে একজন এসে অর্ডার করবে। সে কোন ধরনের পানিপুরি চায়, কতগুলো চায়, সেটা তোমাকে সার্ভ করতে হবে। সঠিকভাবে দিতে পারলে পয়েন্ট দেওয়া হবে তোমাকে। লেখাটি পড়ার সময় যদি ডুডলটি বদলে ফেলা হয়, তবে মন খারাপ কোরো না। সার্চ করে ডুডল গেমটি পরেও খেলতে পারবে।
পাড়া-মহল্লায় রাস্তার পাশে পানিপুরি পাওয়া যায়। কোথাও একটু বেড়াতে আসা মানুষের ভিড় থাকলেই পাশে একজন পানিপুরিওয়ালা মামাকে পাওয়া যায়। মামা এক মনে পানিপুরি বানিয়ে চলেছেন। একটু পরপর জিজ্ঞেস করছেন, কোন ঝোল দিব? দই মাখাটা? নাকি মিষ্টি টক? কেউ কম ঝাল পছন্দ করে। কেউ চায় একটু বেশি মিষ্টিঝাল। কেউ বলে, মামা একটু টক বাড়িয়ে দিয়েন।
পানিপুরি ভারতীয় উপমহাদেশের খাবার। সাধারণত রাস্তার পাশে ফেরি করে খাবারটি বিক্রি হয়। জনপ্রিয়তার কারণে ফুডকোর্টগুলো এখন পানিপুরি বিক্রি করে। ২০১৫ সালের ভারতের মধ্যপ্রদেশের ইন্দোরের একটি রেস্তোরাঁ ৫১টি বিভিন্ন ধরনের পানিপুরি বিক্রি করে বিশ্ব রেকর্ড গড়েছিল।
উপমহাদেশজুড়ে পানিপুরি পাওয়া যায়। আঞ্চলিক বৈচিত্র্যের কারণে খাবারটি বিভিন্ন নামে চলে। মহারাষ্ট্র ও অন্ধ্র প্রদেশে এটি পানিপুরি নামে পরিচিত। এতে সেদ্ধ ছোলা, একটি সাদা ডালের ঘুগনি মিশ্রণ ইত্যাদি থাকে। খোসার আকারে ভিন্নতা দেখা যায়। মসলাদার পানিতে ডোবানো ফুচকা এক কামড়ের খাবার এটি। পাঞ্জাব, জম্মু ও কাশ্মীর এবং নয়াদিল্লির উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে একে গোল গাপ্পে বা গোল গাপ্পা বলা হয়। আলু এবং ছোলা ভর্তি করা থাকে। মসলাদার পানিতে ডুবিয়ে দেওয়া হয়। পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহার ও ঝাড়খন্ডের কিছু অংশে এটিকে ফুচকা হিসেবে ডাকে। তেঁতুলের জল থাকে ফুচকায়। দেখতে ও খেতে ভালো লাগে।
ঢাকায় ফুচকা ও পানিপুরি আলাদাভাবে ডাকা হলেও দুটি জিনিসে সামান্য পার্থক্য দেখা যায়। পানিটুকুতে পার্থক্য থাকে। পানিপুরিতে মসলাদার বা মিষ্টিজাতীয় চাটনি থাকে। ফুচকার ভেতরে থাকে বিভিন্ন রকমের টপিংস। টপিংস মানে ওপরে যে উপকরণ দেওয়া হয়। ঝাল-টক থাকে ফুচকায়। আমাদের দেশে শুধু পুরির আকৃতির পার্থক্য দেখা যায়। অন্য সব উপকরণ সাধারণত একই।
কিংবদন্তি অনুসারে প্রাচীন মহাকাব্য মহাভারত থেকে জানা যায়, পানিপুরি আবিষ্কার করেছিলেন দ্রৌপদী। তিনি এক পরিবারে নববধূ হয়ে এসেছিলেন। সংসারের অল্প আয়ে পাঁচজন পুরুষকে খাওয়াতে হবে। চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছিলেন। বেঁচে যাওয়া আলু, সবজি এবং অল্প পরিমাণ গমের আটা ব্যবহার করে দ্রৌপদী এই নতুন মুখরোচক খাবার তৈরি করেছিলেন। আলু ও সবজির মিশ্রণে ভাজা ময়দার ছোট ছোট টুকরা পুরে দিয়ে তিনি তৈরি করেছিলেন পানিপুরি।
পানিপুরি, ফুচকা, দই ফুচকার মতো খাবারগুলোর ভিন্ন ভিন্ন স্বাদ আছে। মুখে দিলে নানা স্বাদ পাওয়া যায়। তবে পানিপুরি গোষ্ঠীর এই জলখাবারের মূল নীতি দুটি। পুরিটিকে ভিজে যাওয়া বা ফুটা হওয়া থেকে বাঁচাতে হবে। তাই বানানোর সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত খেয়ে নিতে হবে। আর এলোমেলো হয়ে ভেঙে যাওয়া এড়াতে সব সময় এক কামড়ে খেতে হবে। তাহলে এই দুই নীতি মেনে পানিপুরি উপভোগ করো।