গুগল ইনকরপোরেটেড মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারনেট ও সফটওয়্যার সেবাদানকারী বহুজাতিক কোম্পানি। বিশেষভাবে তাদের গুগল সার্চ ইঞ্জিন, অনলাইন বিজ্ঞাপন সেবা ও ক্লাউড কম্পিউটিং সেবার জন্য এটি প্রসিদ্ধ। গুগলের আয়ের মূল উৎস বিজ্ঞাপন, যা ‘এডওয়ার্ডস’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরিচালিত হয়। গুগলের প্রধান কার্যালয় ক্যালিফোর্নিয়ার মাউন্টেইন ভিউ শহরে। গুগলের মূল কাজ হলো ‘বিশ্বের সব তথ্য সন্নিবেশিত করে সবার জন্য সহজলভ্য করে দেওয়া’। গুগলের অপ্রাতিষ্ঠানিক স্লোগান হলো ‘Don't be evil’। স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন পিএইচডি ছাত্র ল্যারি পেজ ও সের্গেই ব্রিন গুগলের প্রতিষ্ঠাতা।
১৯৯৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর গুগল প্রথম ইনকরপোরেট প্রাইভেট কোম্পানি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং প্রথম শেয়ার (আইপিও) বাজারে আসে ২০০৪ সালের ১৯ আগস্ট। ল্যারি পেজ, সের্গেই ব্রিন ও এরিক স্কমিট গুগলে ২০ বছরের (২০২৪ সাল পর্যন্ত) জন্য একসঙ্গে কাজ করতে একমত হন। ২০০৬ সালে গুগল মাউন্টেইন ভিউতে স্থানান্তরিত হয়।
গুগল শুধু সার্চ ইঞ্জিনই নয়, অনলাইন আরও নানা ধরনের সেবা, যেমন: জিমেইল (ই-মেইল সেবা), গুগল ডকস (অফিস সেবা), ইউটিউব (ভিডিও সেবা), গুগল ড্রাইভ (স্টোরেজ সেবা), গুগল প্লে স্টোর (অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস সেবা), গুগল ক্যালেন্ডার, গুগল ম্যাপস, গুগল ট্রান্সলেটর, ব্লগার, গুগল প্লাস (সামাজিক নেটওয়ার্কিং সেবা) প্রভৃতি ছাড়া আরও অনেক সেবা প্রদান করে থাকে। গুগলের পণ্য ইন্টারনেট ছাড়াও ডেস্কটপেও ব্যবহার হয়। যেমন: গুগল ক্রোম (ওয়েব ব্রাউজার), পিকাসা (ছবি সংগঠিত এবং সম্পাদন করার সফটওয়্যার) এবং গুগল হ্যাংআউট (ইনস্ট্যান্ট ম্যাসেজিং অ্যাপ্লিকেশন) প্রভৃতি। গুগল মোবাইল অপারেটিং সিস্টেমের জন্য অ্যান্ড্রয়েড এবং গুগল ক্রোম অপারেটিং সিস্টেমের জন্য ব্রাউজার অপারেটিং সিস্টেম, যা শুধু বিশেষ ল্যাপটপ ক্রোমবুকে পাওয়া যায়। গুগলের ইলেকট্রনিকস পণ্যের মধ্যে রয়েছে গুগল গ্লাস, গুগল পিক্সেল ২ (মোবাইল ফোন), গুগল পিক্সেল বুক, গুগল হোম (স্পিকার), গুগল ওয়াই-ফাই প্রভৃতি।
গুগলকে আমরা মূলত একটি সার্চ ইঞ্জিন হিসেবেই জানি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিত্যনতুন পণ্য ও সেবা তৈরি করে গুগল প্রতিনিয়ত নিজেদের আকার ও উপযোগিতা মানুষের কাছে বাড়িয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে নতুন কোম্পানি কিনে ও ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারত্ব এবং বিজ্ঞাপন জগতে নিজেদের অবস্থান সুদৃঢ় করার মধ্য দিয়ে নিজকে বহুমুখী হিসেবে সমৃদ্ধ করেছে। ফলে তথ্য খোঁজার পাশাপাশি বর্তমানে ই-মেইল, সামাজিক নেটওয়ার্কিং, ভিডিও শেয়ারিং, অফিস প্রোডাকটিভিটি, ইলেকট্রনিকস পণ্য তৈরি, বিজ্ঞাপন প্রভৃতি বিষয়ে গুগলের সেবা রয়েছে।
বর্তমান বিশ্বে ইন্টারনেট ব্যবহার করে, কিন্তু গুগল সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহার করে না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের মধ্যে ৯১ দশমিক ৬৩ শতাংশ (২০১৮, ফেব্রুয়ারি ) মানুষ গুগল ব্যবহার করে থাকে । গুগলের মূল আয়ের উৎস হলো বিজ্ঞাপন, যা থেকে গুগলের প্রায় ৯৯ শতাংশ আয় আসে। গুগল জানায়, ২০১৭ অর্থবছরে ৩১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করেছে তারা।