ওপরের দিকে তাকালে আমরা যে ফাঁকা জায়গা দেখি, তা আমাদের কাছে আকাশ নামে পরিচিত। যদিও আকাশ বলতে কিছু নেই। তুমি যতই ওপরের দিকে উঠবে, দেখবে আকাশের কোনো শেষ নেই। কারণ, আকাশ মানেই শুধু ফাঁকা জায়গা। তাহলে এই ফাঁকা জায়গাকে কেন নীল দেখায়? আরেকটি প্রশ্ন মাথায় আসতে পারে। এত রং থাকতে আকাশকে কেন নীল হতে হলো?
অনেকে মনে করেন, আকাশ নীল কারণ সূর্যের আলো সমুদ্রে প্রতিফলিত হয়ে আকাশে ফিরে যায় তাই। কিন্তু একটু বুদ্ধি খাটিয়ে চিন্তা করলেই ভুলটা তুমি নিজেই ধরতে পারবে। গ্রামাঞ্চলে সব জায়গায় নদী বা সমুদ্র থাকে না। তাহলে সেখানকার আকাশ কেন নীল থাকে? কিংবা মরুভূমির আকাশও তো নীল। ফলে বোঝাই যাচ্ছে, আকাশের নীল হওয়ার সঙ্গে সমুদ্রের কোনো যোগাযোগ নেই। তাহলে আকাশ কেন নীল?
এটা বুঝতে হলে প্রথমে জানতে হবে, আকাশ আমরা কোনটাকে বলি। শুরুতেই বলেছি, আকাশ মানে শুধু ফাঁকা জায়গা। তবে এই ফাঁকা জায়গায় থাকে বায়ুমণ্ডল। মানে পৃথিবীর চারপাশে ঘিরে থাকা বিভিন্ন গ্যাসমিশ্রিত স্তরই এই বায়ুমণ্ডল। এ বায়ুমণ্ডলে থাকে বায়ুর অণু ও অতিক্ষুদ্র ধূলিকণা। ধূলিকণার আকার এত ছোট যে খালি চোখে দেখাই যায় না। সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসার সময় এই ধূলিকণাকে আঘাত করে। মানে এই ধূলিকণার ভেতর দিয়েই সূর্যের আলো পৃথিবীতে আসতে হয়। তখন ঘটে একটা মজার ঘটনা। সেই মজার ঘটনা বুঝতে হলে আলো ও প্রিজমের খেলাটা বুঝতে হবে।
বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৩৮০ থেকে ৪২৪ ন্যানোমিটার। নীল আলোর ৪২৪ থেকে ৪৫০ ন্যানোমিটার। আবার সবচেয়ে বেশি লাল আলোর ৬৪৭ থেকে ৭৮০ ন্যানোমিটার। যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, সেই আলো সবচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত হয়।
প্রথমে বলি আলোর কথা। আমরা যে আলো দেখি বা সূর্য থেকে যে আলো আসে, তা কিন্তু একটা রং নয়। সাত রঙের মিশ্রণ। এই সাতটি রং হলো বেগুনি, নীল, আসমানি, সবুজ, হলুদ, কমলা ও লাল। মুখস্থ রাখার জন্য ‘বেনীআসহকলা’ মনে রাখতে পারো। মানে বে = বেগুনি, নী = নীল…। আর প্রিজম হলো এমন একটা বস্তু, যার মধ্যে আলো ঢুকলে এই সাত ভাগে ভাগ হয়ে যায়। বস্তুটা বাজারে কিনতে পাওয়া যায়। চাইলে কিনে নিজেই পরীক্ষা করে দেখতে পারো।
যা-ই হোক, বায়ুমণ্ডলে থাকা ধূলিকণা ওই প্রিজমের কাজ করে। মানে সূর্য থেকে আলো পৃথিবীতে আসার সময় এই ধূলিকণার মধ্য দিয়েই আসে। আর তখনই সাদা আলোটা ভেঙে নীল আলো ছড়িয়ে পড়ে। এখন প্রশ্ন করতে পারো, সাতটা রঙের মধ্যে শুধু কেন নীল আলোকেই আকাশে দেখা যায়?
সে প্রশ্নের উত্তর বুঝতে আরেকটুখানি বিজ্ঞান বুঝতে হবে। তা হলো র্যালে স্ক্যাটারিং বা র্যালে বিচ্ছুরণ। আসলে আলোর বিভিন্ন তরঙ্গদৈর্ঘ্য আছে। যেমন বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য ৩৮০ থেকে ৪২৪ ন্যানোমিটার। নীল আলোর ৪২৪ থেকে ৪৫০ ন্যানোমিটার। আবার সবচেয়ে বেশি লাল আলোর ৬৪৭ থেকে ৭৮০ ন্যানোমিটার। যে আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম, সেই আলো সবচেয়ে বেশি বিক্ষিপ্ত হয়। যেহেতু নীল আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম, তাই আকাশে আমরা শুধু নীল আলোই দেখি। এটা বেশি বিক্ষিপ্ত হয়।
খুব মনোযোগ দিয়ে লেখাটা পড়লে আরেকটা প্রশ্ন তোমার মাথায় আসবে। নীল আলোর চেয়ে তো বেগুনি আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য কম, তাহলে আমরা আকাশকে কেন বেগুনি দেখি না? কারণ, আমাদের চোখ নীল রঙের ওপর বেশি সংবেদনশীল। তাই আমাদের চোখে আকাশ নীল দেখায়। আরও কিছু প্রশ্ন তোমার মাথায় আসতেই পারে। যেমন সন্ধ্যায় কেন আকাশ লাল থাকে কিংবা মেঘের রং সাদা কেন? এসব প্রশ্নের উত্তর আবার অন্য কোনো দিন দেব। আজ এখানেই শেষ করা যাক।
সূত্র: কিউরিয়াস কিডস/ দ্য কনভারসেশন ডট কম