হুমায়ূন আহমেদের সবচেয়ে প্রিয় ম্যাজিকটি শিখবে?

সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ও হুমায়ূন আহমেদ

হুমায়ূন আহমেদ অনেক বড় লেখক ছিলেন, তা কে না জানে? কিন্তু তিনি যে অসাধারণ জাদু দেখিয়ে মানুষকে চমকে দিতে পারতেন, তা তোমরা সবাই কি জানো? পৃথিবীর অনেক বড় ম্যাজিশিয়ানের মতো তাঁরও সবচেয়ে প্রিয় জাদুটির গোপন রহস্য আজ যদি তোমাদের শিখিয়ে দিই, তাহলে কেমন মজা হবে! একদিনের কাহিনি: পশ্চিম বাংলার খ্যাতিমান লেখক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিমন্ত্রিত হয়ে হুমায়ূন আহমেদের বাড়িতে এসেছেন। আমরাও কয়েকজন আমন্ত্রিত। আড্ডার সময় হুমায়ূন আহমেদ তাঁর ড্রয়িং রুমের মেঝেতে আসনপিঁড়ি করে বসতেন; আর অনর্গল হাসি-তামাশা এবং ঠাট্টার ফোয়ারা ছোটাতেন। এর মধ্যে উপস্থিত কৌতুক, ক্লাসিক কৌতুকে নিজস্ব উপস্থাপনা, শ্রোতাদের নিয়ে কৌতুক করা, উপস্থিত গল্প বলা, ঠান্ডা-গরম খানাপিনা চলতেই থাকত। তবে যে জিনিসটি করে তিনি সবচেয়ে আনন্দ পেতেন, সেটি হলো জাদু দেখিয়ে চমকে দেওয়া।

সেই সন্ধ্যায় সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় ঘরে ঢুকে পড়তেই ভক্তরা তাঁকে এনে হুমায়ূন আহমেদের মুখোমুখি বসিয়ে দিলেন। শুভেচ্ছা বিনিময়ের পরে সবাই অবাক হয়ে দেখলেন, হুমায়ূন ভাই সুনীলদার দুই হাতের তালু উপুড় করে সামনের দিকে উঁচু করে এগিয়ে ধরতে বললেন। হুমায়ূন ভাই প্রশ্ন করলেন, ‘আপনি ডান হাতে, নাকি বাঁ হাতে কাজ করতে পছন্দ করেন?’

সুনীলদা বললেন, ‘ডান হাতেই বেশি কাজ করি।’

হুমায়ূন ভাই: তাহলে ডান হাত মুঠ করে উঁচু করে রাখুন। বাঁ হাতের তর্জনী দিয়ে সামান্য ছাই ছাইদানি থেকে তুলুন। ওই ছাইটুকু ডান হাতের মুঠের পিঠে ঘষে ঘষে ত্বকের সঙ্গে মিশিয়ে দিন।

সুনীলদা তা-ই করলেন।

হুমায়ূন ভাই: এবার হাতটা ঘুরিয়ে চিত করুন এবং ধীরে ধীরে হাতটা খুলুন।

হাতটা খুলতেই সব দর্শক বিস্ময়ে চিত্কার করে উঠল। কারণ, হাতের পিঠের ত্বকে মিশে যাওয়া ছাই ভেদ করে তালুতে চলে এসেছে। এর পরে গভীর রাত পর্যন্ত আড্ডা চলল। সুনীলদা কিন্তু থেকে থেকে ম্যাজিকটির কথাই বলতে থাকলেন। ‘এ কী করে সম্ভব!’

এবার জেনে নাও কী করে হলো: সুনীলদা আসার বেশ আগেই সবার অলক্ষ্যে হুমায়ূন ভাই তাঁর অ্যাশট্রে থেকে বাঁ হাতের মধ্যমার মাথার পর্বের প্যাডের দিকে সামান্য ছাই লাগিয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এ অবস্থায় ডান হাত দিয়ে কাউকে সালাম দেওয়া হ্যান্ডশেক করা খুবই স্বাভাবিক। হুমায়ূন ভাই সুনীলদার হাতের তালু উপুড় করে উঁচু করে ধরতে বললেন। এ সময় সুনীলদা যত কাছে বা দূরেই হাতের তালু উপুড় করে ধরুন না কেন, হুমায়ূন ভাই নিজের উভয় হাত দিয়ে সুনীলদার দুটি হাত ধরলেন। একই সঙ্গে বাঁ হাতের মধ্যমায় আগে থেকে লাগানো ছাই একটানে সুনীলদার হাতের তালুতে লাগালেন এবং হাত দুটি সত্যি সত্যি কিছুটা নিজের দিকে টেনে নিলেন। সুনীলদা বা অন্য কেউ-ই আন্দাজ করতে পারলেন না। সুনীলদার হাতের তালুতে ছাই লাগানোর কাজটি হয়ে গেছে। এর পরে তাঁর ডান হাত মুঠ করতে বলা, বাঁ হাত দিয়ে ছাই তুলে মুঠের পিঠে রাখা, সেই ছাই ঘষে ঘষে ত্বকে মিলিয়ে দেওয়া এবং সবশেষে গম্ভীরভাবে ধীরে ধীরে মুঠ ঘুরিয়ে হাতের তালু খুলতে বলা—সবটাই অভিনয়।

১ নম্বর ছবি: জাদুশিল্পীর বাঁ হাতের মধ্যমায় গোপনে আগে থেকে লাগানো ছাই।
২ নম্বর ছবি: একই সঙ্গে হাত ধরে জাদুশিল্পী দর্শকের উভয় হাত নিজের দিকে টানতে টানতে হাতের তালুতে ছাই টেনে লাগাবেন ও মুখে সামান্য কাছে আসতে বলবেন।
৩ নম্বর ছিল: মুঠ করা হাতের পিঠে অন্য হাত দিয়ে ঘষে ঘষে ছাই মিলিয়ে নিতে হবে।
৪ নম্বর ছবি: মুঠ করা হাত ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে খুলতে বললে দর্শক অবাক হয়ে ছাই ভেদ হওয়ার দৃশ্য দেখবেন।

কিছু পরামর্শ: এই ম্যাজিকটা সাধারণ ট্রিক হিসেবে দেখালে দর্শক যতটা আনন্দিত ও বিস্মিত হবেন, মেটালিজম বা মনের জাদু হিসেবে গম্ভীরভাবে উপস্থাপন করলে অনেক বেশি বিস্মিত হবেন। মুঠ খোলার আগে জাদুশিল্পী দর্শকদের মনে করিয়ে দেবেন, তিনি কখনোই নিজে ছাই স্পর্শ করেননি। সবটাই দর্শক তাঁর নিজ হাতে করেছেন। কিন্তু ছাই প্রসঙ্গে কিছু বলার অনেক আগেই যে জাদুশিল্পী নিজের আঙুলে ছাই লাগিয়ে রেখেছিলেন, তা তো আর দর্শকের জানা নেই।

আরেকটি পরামর্শ: যাঁরা সিগারেট খান না, তাঁরাও সুন্দরভাবে এটি করতে পারবেন। পকেটে হাতের পিঠের রঙের কাছাকাছি রংবিশিষ্ট একটি লিপস্টিক রাখলেই হলো। হাতের পিঠের কাছাকাছি রং কেন? কারণ, শেষ দিকে সামান্য লিপস্টিক যে ত্বকে মিলিয়ে দেওয়া হয় তা লাল রঙের লিপস্টিক দিয়ে বেশি ভালো হয় না। লাল রঙের আভা বড় বেশি চোখে লাগে। রং ভেদ করে তালুতে গেছে তা মন বিশ্বাস করতে চায় না।

(কিশোর আলোর ডিসেম্বর ২০১৩ সংখ্যায় প্রকাশিত)