হাতিরাও ভালোবাসে

১০ মার্চ ২০১২। দক্ষিণ আফ্রিকার কোয়াজুলুতে অবস্থানরত অ্যান্থনি পরিবার শোকে মুহ্যমান। তাঁদের কর্তা লরেন্স অ্যান্থনি মারা গেছেন দিন তিনেক আগে, হার্ট অ্যাটাকে। শোক তখনো কুয়াশার মতো চাদর বিছিয়ে রয়ে গেছে। এ রকম সময়ে সবাই খেয়াল করল, বন্য হাতির দুটো দল সারিবদ্ধভাবে আসছে লরেন্সের বাড়ির দিকেই। পুত্র ডিলান অ্যান্থনি বের হয়ে এসে দেখল, এরা তার বাবার হাতে বড় হওয়া হাতি। লরেন্সের মৃত্যুতে শোক জানানোর জন্য প্রায় ১২ মাইল দূরের জুলুল্যান্ডের বন থেকে এসেছে।

লরেন্স অ্যান্থনি

কী অদ্ভুত ব্যাপার! দুই দিন ধরে হাতিগুলো বাড়ির সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকল, তাদের বন্ধুকে স্মরণ করে। হ্যাঁ, ওদের বন্ধুই ছিলেন লরেন্স। ১৯৯৯ সালের কথা, এই বন্য হাতিদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে সেখানকার প্রশাসন ওদের মেরে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়। বাঁচাতে এগিয়ে আসেন লরেন্স। নিজে দায়িত্ব নিয়ে হাতির পালগুলোকে দেখাশোনা করতে থাকেন। যত্নআত্তি করে বড় করতে থাকেন। এসব করতে গিয়ে হাতিদের সঙ্গে তাঁর নিবিড় এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

তিনি যেমন হাতিদের বুঝতেন, হাতিরাও বুঝত তাঁর কথা, ইশারা। পশু আর মানুষের সেই প্রাচীন বন্ধুত্ব! হাতির সঙ্গে বন্ধুত্বের গল্প নিয়ে বইও লিখেছেন লরেন্স অ্যান্থনি। বানাতে চেয়েছিলেন ডকুমেন্টারিও। মৃত্যু সে সুযোগ দিল না। ওদিকে বন্ধুর মৃত্যু টের পেয়ে শোক জানাতে হাতিরা ছুটে এসেছিল দল বেঁধে। কিন্তু তারা কীভাবে এই খবর টের পেল, সেটা এক রহস্য! আরও অদ্ভুত ব্যাপার হলো, প্রতিবছর মার্চের ৭ তারিখ লরেন্সের মৃত্যুবার্ষিকীতে হাতিগুলো এসে উপস্থিত হয় ওই বাড়িতে। এটাকেও রহস্যময় মনে হচ্ছে? তাহলে বলি শোনো, একে বলে বন্ধুর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা।