১৬/১২/২০১৩
আজ মহান বিজয় দিবস। বি. হোমসের (ভারতেশ্বরী হোমস) কথা খুব মনে পড়ছে। জেএসসি পরীক্ষার্থী না হলে এতক্ষণ পিপিএম হলেই থাকতাম। কারণ, আজ প্রতিভা মুত্সুদ্দির জন্মদিন (প্রতিভা মুৎসুদ্দি, ভারতেশ্বরী হোমসের সাবেক অধ্যক্ষ, ভাষাসৈনিক এবং ২০০২ সালে শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য একুশে পদকপ্রাপ্ত মহীয়সী নারী)। ইশ্, আজকে রান্নার দায়িত্ব থাকলে কতই না মজা হতো! মাসিদের হাতের রান্না, বিশেষ করে পায়েস...উফ! আর মনে করতে চাই না। এখনই খেতে ইচ্ছে করছে। এমনিতেই সকাল থেকে বি. হোমসের জন্য মনটা খুব খারাপ লাগছে। তার ওপর কেমন জানি কারাগার কারাগার লাগে বাসায় বসে থাকতে। অবশ্য একেবারে যে বাসায় বন্দী তা নয়, বর্ষাকে আজ স্টেডিয়ামে নিয়ে গিয়েছিলাম, ওদের বিজয় দিবসের প্রোগ্রাম ছিল আজ।
ভাগ্যটা আসলেই অনেক ভালো আমার। বি. হোমসে এসে জীবনে প্রথম কোনো ভাষাসৈনিককে এত কাছ থেকে পেলাম। সারাটা জীবন নির্যাতিত-নিপীড়িত ও পিছিয়ে পড়া নারীদের নানা সামাজিক-রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামে বিভিন্নভাবে যুক্ত ছিলেন যিনি। তিনি যখনই কোনো বক্তব্য দেন, তখনই ভাষা আন্দোলনের কথা (১৯৫২ সালে উচ্চমাধ্যমিক ছাত্রী থাকা অবস্থায় চট্টগ্রাম থেকে ভাষা আন্দোলনে যোগ দেন তিনি), মুক্তিযুদ্ধের কথা, জ্যাঠামণি দানবীর রণদা প্রসাদ সাহার কথা। রণদা প্রসাদ সাহা কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা। নারী শিক্ষা প্রসারে বাংলাদেশে প্রথম মেয়েদের জন্য আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন তিনি, যার বর্তমান নাম ভারতেশ্বরী হোমস। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যম ছিল প্রতিষ্ঠানটি। তৎকালীন সমাজে মেয়েদের জন্য আলাদা ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা রীতিমতো চ্যালেঞ্জের বিষয় ছিল। সবাই তাই ভালোবেসে তাঁকে জ্যাঠামণি বলে ডাকেন। সেই প্রতিষ্ঠানেই আমি পড়ছি—সৌভাগ্য তো বটেই। ক্যাডেট কলেজে চান্স না পেয়েও যে এমন সৌভাগ্য আসবে, ভাবিনি।
স্বপ্নটা ছিল বাবার। কলেজে পড়াকালে বি. হোমসের ড্রিল, ড্রেসআপ, সুশৃঙ্খলা দেখে মনের মধ্যে ইচ্ছা জেগে যায়। যদি মেয়েসন্তান হয়, তাহলে বি. হোমসে অবশ্যই পড়াবেন। বেশ! কেমন কেমন করে যেন স্বপ্নটা সত্যি হয়ে গেল!