হঠাৎ করেই সকালে ঘুমটা ভেঙে গেল অভিকের। জানালা দিয়ে আলোর উঁকিঝুঁকি দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে তার মেরুদণ্ডে ভয়ের স্রোত নেমে যেতে গিয়েও নামল না। কারণ, ঘড়িতে দেখল সাতটা ৪০ বাজে। আটটায় ক্লাস শুরু। এখনো দৌড় দিলে ক্লাসটা ধরতে পারবে। তাড়াতাড়ি তৈরি হয়ে সকালের নাশতা না করেই বের হয়ে গেল অভিক। রাস্তায় রিকশাও দেখা যাচ্ছে না। রিকশা দিয়ে গেলে ১০ মিনিটে পৌঁছানো যেত। কী আর করা, জুতার ফিতাটা ভালোভাবে বেঁধে নিজেকে উসাইন বোল্ট কল্পনা করে দৌড় শুরু করল। ৭ পুকুর ১৩ ডোবা পেরিয়ে সে যখন স্কুলের কাছাকাছি পৌঁছল, মুখে আপনাতেই বিজয়ীর হাসি ফুটে উঠল। আরও পাঁচ মিনিট পর ক্লাস শুরু। এখন আস্তে-ধীরেই যাওয়া যায়। কিন্তু কেমন যেন খালি খালি লাগছে আশপাশ। শুধু সে নিজেই এত দেরি করল? মাথা থেকে চিন্তা ঝেড়ে ফেলে গেট খুলতে গেল অভিক। তখনই কোথা থেকে যেন দারোয়ান চাচা এসে বলল, ‘আরে কোথায় যাও?’ অভিক একবার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখল তাকে স্কুলছাত্র মনে হচ্ছে কি না। কারণ, দারোয়ান চাচার গভীর প্রশ্নের মর্মকথা সে বুঝতে পারেনি। মুখে আদর্শ ছাত্রের মতো হাসি ফুটিয়ে বলল, ‘চাচা ক্লাসে যাই। এখনো তিন মিনিট বাকি, আটকাচ্ছেন কেন?’ দারোয়ান চাচা কেমন যেন খলনায়ক মার্কা হাসি দিলেন। বললেন, ‘বাবা, আজ শুক্রবার। স্কুল ছুটি।’ এটুকু শোনাই অভিকের মন ভেঙে চুরমার করার জন্য যথেষ্ট ছিল। তার সকালের আরামের ঘুম বিসর্জন দেওয়া, জুতার তলা ক্ষয় করে দৌড়ে আসা। সবই বৃথা। হঠাৎ সে নিজের বোকামিতে হো হো করে হেসে উঠল।