শুধু নিজে বাঁচা নয়, বাঁচাতে হবে অন্যের জীবন

মৃন্ময় হাসান

৫ জানুয়ারি ২০১৭ তারিখের কথা। আমি আমার স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ আমাদের এক শিক্ষক এসে ক্লাসে যেতে বললেন। স্কাউট ক্লাস শুরু হবে। আমার একদমই ইচ্ছা ছিল না। তবু শিক্ষকের কথা তো আর অমান্য করা যায় না। ক্লাসে ঢুকে গেলাম। আর কী আশ্চর্য! ক্লাস করে স্কাউটের প্রতি আগ্রহী হলাম আমি। ক্লাসগুলোতে মূলত স্কাউটের ইতিহাস, উদ্দেশ্য, কার্যক্রম এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। স্কাউটের মানবকল্যাণমূলক কাজের কথা জেনে খুব ভালো লাগল আমার। স্কাউটের নয়টি দল ছিল আমাদের স্কুলে। দ্রুতই ‘টাইগার’ উপদলের একজন সদস্য হয়ে গেলাম আমি। এই উপদলে সদস্য মোট আটজন। মিরাজ, অর্ণব, তামিম আর আমি ষষ্ঠ শ্রেণির প্রতিনিধি। বাকিরা অন্যান্য শ্রেণির শিক্ষার্থী।

কদিন ক্লাস করার পর স্কুলে খবর এল স্কাউট ক্যাম্পিং হবে। কখন কোথায় হবে ক্যাম্পিং, কী কী আনতে হবে এসব বলে দিলেন আমাদের স্কাউট শিক্ষক ওয়াহিদুল স্যার। ১৯ থেকে ২১ জানুয়ারি আমাদের স্কুলের মাঠে ক্যাম্পিং হবে, আমাদের তো উত্তেজনার শেষ নেই!

১৯ জানুয়ারি স্কুলে গিয়ে ক্যাম্পিং শুরু করলাম। স্কাউট ক্যাম্পের পরিচালক ছিলেন ওয়াহিদুল হক স্যার। তিনি আমার বাবারও স্কাউট শিক্ষক ছিলেন। প্রথম দিন তাঁবু বানালাম আমরা। একটা তাঁবুতে আমাদের উপদলের আটজন একসঙ্গে থেকেছি। এর আগে আমি কখনো বাসার বাইরে থাকিনি, তাই এটা বেশ চ্যালেঞ্জিং ছিল আমার জন্য। তবে সবার সহযোগিতায় কোনো অসুবিধাই হয়নি আমার। বরং অনেক আনন্দ করেছি সবাই মিলে। শিখেছি অনেক কিছু। যেমন স্কাউটের প্রতিজ্ঞা, আইন, বিভিন্ন গেরো, ব্যান্ডেজ বাঁধাসহ প্রাথমিক চিকিৎসা, জরুরি অবস্থা মোকাবিলা ইত্যাদি। জেনেছি প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কীভাবে সম্মিলিত চেষ্টার মাধ্যমে কাজ করতে হয়। পরবর্তী সময়ে এসবের ওপর ভিত্তি করেই আমাদের স্কাউট দীক্ষা পরীক্ষা হলো। তারপর বিকেল বেলা স্কাউট পোশাক, টাই ও ব্যাজ দেওয়া হলো আমাদের। আর সন্ধ্যার পর ক্যাম্পফায়ার! আমরা সবাই মিলে গান গেয়ে খুব মজা করলাম।

এই তিন দিনের স্কাউট ক্যাম্পিংয়ের মূল শিক্ষা হলো শুধু নিজে বাঁচা নয়, দুর্যোগ পরিস্থিতিতে অন্যদের জীবনও বাঁচাতে হবে। আর সেই প্রশিক্ষণ পেয়ে এখন খুব আত্মবিশ্বাসী আমি। ভাবতেই ভালো লাগে যে আমি আজ বাংলাদেশ স্কাউটের একজন গর্বিত সদস্য।

(কিশোর আলোর এপ্রিল ২০১৭ সংখ্যায় প্রকাশিত)