বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হয়েছে তানজীনের। পিসিতে গেম খেলেই সময় কেটে যায় ওর। প্যাকমান, রোড র্যাশের মতো গেম খেলতে খেলতে তানজীনের হাত ব্যথা হয়ে যাওয়ার অবস্থা। নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে দিয়ে গেম খেলছে শুধু। মা এসে ঘরে একবার উঁকি দিয়ে যান, পরীক্ষা শেষ হয়েছে ভেবে আর কিছু বলেন না। কিন্তু গেম খেলতে খেলতেই একসময় ওর মনে চিন্তা আসে, এই গেম আমি বানালে কীভাবে বানাতাম? নিজের মতো করে কোন কোন জায়গায় পরিবর্তন আনতাম। এসব ভাবতেই ভাবতেই ছোট্ট তানজীনের মাথায় ঢুকে গেল, তাকে গেম বানাতে হবে!
অনেকেই ভাবছ, এ ধরনের চিন্তাভাবনা তো আমরা সকাল-বিকেল করি, কিন্তু ভাবলেই সত্যিই হয়ে যায় নাকি? কিন্তু ওর স্বপ্ন আসলেই সত্যি হওয়া শুরু করেছে। কীভাবে হয়েছে, সেটা বলি।
তানজীন মাহমুদ ও মাহিয়া তাসনিম—দুজনই রাজউক উত্তরা মডেল কলেজের শিক্ষার্থী ছিলেন। ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে পরিচয়। স্কুল-কলেজ পেরিয়ে তানজীন মাহমুদ ভর্তি হয়ে গেলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগে। আর মাহিয়া তাসনিম স্যাট পরীক্ষায় অংশ নিয়ে বৃত্তি নিয়ে চলে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড ইউনিভার্সিটিতে। এক বছর অপেক্ষা করে তানজীনও ওই পথেরই পথিক হলেন।
মাহিয়ার বড়ই শখ ছিল আর্কিটেক্ট হওয়ার। কিন্তু ভার্সিটির প্রোগ্রামিংয়ের একটা ক্লাস করেই ভালো লেগে গেল। এরপর সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার ইচ্ছা থেকেই কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়ালেখা। আবেদন করলেন গুগলে ইটার্নশিপের জন্য। নির্বাচিত হয়ে অংশও নিলেন! প্রিয় বান্ধবী তানজীনও ইন্টার্নশিপের জন্য পরের বছর আবেদন করলেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে একসঙ্গে পড়ালেখা করা দুই বান্ধবীই ইন্টার্নশিপ করলেন গুগলে। ১০ বছরের পথচলাকে আরও দৃঢ়তা দিল একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের হাওয়ার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা ও গুগলে ইন্টার্নশিপের সুযোগ পাওয়া।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মেয়েদের বিজ্ঞানে পড়ার ব্যাপারটি নিয়ে মাহিয়া বলেন, মেয়েরা চাইলে পারবে না, এমন কিছু নেই। এটা নিয়ে ছেলেমেয়ে ভেদাভেদ করাটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক। সঠিক সুযোগের অভাবেই মেয়েরা মেধাকে কাজে লাগাতে পারছে না। একইভাবে যারা ভবিষ্যতে এ ধরনের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চায়, তাদের উদ্দেশেও মাহিয়া বলেন, নিজেদের চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। ইচ্ছাশক্তি, মেধা আর পরিশ্রমকে কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আর এই ইন্টারনেটের যুগে থেমে থাকার সুযোগ নেই। নিজের পছন্দের জায়গাটি সম্পর্কে জানতে হবে আর তা কাজে লাগাতে হবে।
তানজীনের ইচ্ছা ভবিষ্যতে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে কাজ করবেন। সহজভাবে বললে, তাতে আধুনিকতার ছোঁয়া পৌঁছে দেওয়ার স্বপ্ন দেখেন তিনি। তাঁর মতো আরও অনেকেই হয়তো এ স্বপ্ন দেখে। আরও শত শত তানজীন-মাহিয়ার মতো মেয়েরা যেন সুযোগ পায়, এগিয়ে আসে, সেই আশাই ব্যক্ত করেন তাঁরা।