বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর আরণ্যক বইটিতে লিখেছিলেন, ‘যেখানে সেখানে যে-কোনো গল্প শোনা চলে না, গল্প শুনিবার পটভূমি ও পারিপার্শ্বিক অবস্থার উপর উহার মাধুর্য যে কতখানি নির্ভর করে, তাহা গল্পপ্রিয় ব্যক্তিমাত্রই জানেন।’ ভরদুপুর, ব্রহ্মপুত্রের বুকে ছোট্ট নৌকায় বসে এটাই প্রথমে মনে এল। ভ্রমণপ্রিয় ব্যক্তি মাত্রই জানেন, প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগের জন্য নিজেকে প্রকৃতির একদম কাছে আনাটা দরকার, সেটা একা হলে হয়ত আরও ভালো হয়। আর তাই একা একাই বেরিয়ে পড়া।
হাওর, জঙ্গল আর মহিষের শিং—এই তিনে ময়মনসিং। প্রবাদটা পড়েছিলাম অনেক আগে। মহিষ বা হাওরের দেখা পাইনি কিন্তু জয়নুল আবেদিন পার্কের ধার ঘেঁষা ব্রহ্মপুত্রের সৌন্দর্য দেখেছি সেদিন। যদিও নদের সেই পানি এখন আর নেই। কিন্তু এক ঘণ্টার জন্য নৌকা ভাড়া করে পানিতে ঘুরে বেড়ানোর অভিজ্ঞতা লিখে প্রকাশ করা কষ্ট।
ময়মনসিংহের শশীলজ আর মুক্তাগাছার জমিদারবাড়ি তো রয়েছেই। জমিদার নেই, কিন্তু ৯ একর জমির ওপর শহরের কেন্দ্রস্থলে নির্মাণ করা শশীলজ বেঁচে আছে এখনো। বাইরের ব্যস্ত শহর থেকে শশীলজ আর মুক্তাগাছা জমিদারবাড়িতে প্রবেশ করে মনে হয়েছিল, শত শত বছর আগের সেই বাংলায় প্রবেশ করলাম। শশীলজ মূলত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি বা ময়মনসিংহের রাজবাড়ি নামেও বেশি পরিচিত। ১৯৫২ সাল থেকে শশীলজ ব্যবহৃত হচ্ছে মহিলা শিক্ষক–প্রশিক্ষক কেন্দ্র হিসেবে।
মহারাজা সূর্যকান্ত বাড়িটি নির্মাণ করলেও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তা পুনর্নির্মাণ করেন তাঁর দত্তকপুত্র শশীকান্ত। মূল ফটক দিয়ে প্রবেশের পরেই রয়েছে ১৬ টি গম্বুজ। সাধারণ বাসার সঙ্গে বাড়িটিতে ছিল আলাদা নাচঘর, স্নানঘর। স্নানঘরের সঙ্গে ছিল একটি সুড়ঙ্গ। অনেকেই মনে করে, এই সুড়ঙ্গ দিয়ে মুক্তাগাছা যাওয়া যেত। শশীলজে ঢুকলেই একটি বাগান চোখে পড়বে, যার মাঝখানে রয়েছে শ্বেতপাথরের ফোয়ারা। আর তার মাঝখানে রয়েছে গ্রীকদেবী ভেনাসের একটি মূর্তি। শশীলজের পেছনের অংশে রয়েছে একটি পুকুর। হয়তো পুকুরঘাটে বসে একসময় রানি হাঁসেদের খেলা দেখতেন।
মুক্তাগাছা জমিদারবাড়ি ময়মনসিংহ থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।রাজবাড়ির সামনেই রয়েছে ঘাটবাঁধানো বিশাল এক পুকুর। পুকুরের পাড়জুড়ে রয়েছে বিশাল বিশাল বিলুপ্তপ্রায় বৃক্ষ, নাম নেগুরা। গাছে ফোটা ফুলগুলো যে কারোরই নজর কাড়ার কথা।
একদিনে ময়মনসিংহের এই জায়গাগুলো দেখে ফেলতে পারো। কারণ শশীলজ, জয়নুল আবেদীন পার্ক ও ব্রহ্মপুত্র নদের অবস্থান বেশ কাছাকাছি। তাই অল্প সময়ে বা পায়ে হেঁটে যেতে পারো। পরীক্ষা শেষে তল্পিতল্পা নিয়ে দলবেঁধেও বেরিয়ে পড়তে পারো চাইলে।