ভূতের ভয়

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

ডিসেম্বরে স্কুল ছুটিতে প্রতিবছরই কাজিনদের সঙ্গে গ্রামে যাওয়া হয়। কাজিনরা একসঙ্গে হলে সারা দিন অনেক মজা হয়, এমনকি রাতেও কোনো অংশে কম মজা হয় না। রাতে সবাই একসঙ্গে উঠানে চাদর বিছিয়ে গল্প করে। কেউ বলে সুখের গল্প, কেউ বলে দুঃখের গল্প। যার যখন যেটা বলতে ইচ্ছা করে সে সেটাই বলে। একবার আমার একটা ভাই বলল ভূতের গল্প। আমার আপন ছোট বোন, সে আবার ভূত ভয় পেত। তাই সে উঠে চলে গেল। আমিও একটু একটু ভয় পেতাম। কিন্তু উঠে চলে যাইনি এই ভেবে যে এখন যদি উঠে চলে যাই, তাহলে সবাই আমাকে ভিতু ভাববে। তাই বুকে সাহস নিয়ে, শুনতে লাগলাম ভূতের গল্প। গল্পের নাম ছিল ‘নিশির রাত’। গল্পে নিশি একটা মেয়ের মায়ের কণ্ঠ ধারণ করে মেয়েটাকে ডাকে, মেয়েটি যখন মা মনে করে ভূতটির কাছে যায়, ভূতটি তখন তাকে মেরে ফেলে। গল্পটা প্রথমে শুনে ভয় না পেলেও, মনের ভেতরে কেমন জানি ভয় ভয় অনুভব হচ্ছিল। গল্প শেষে সবাই খেয়ে শুয়ে পড়লাম। তবে বড়রা ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছিল। তাই বেডরুমে আমি আর আমার ছোট বোনই ছিলাম। ছোট বোন এতক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছিল। কিন্তু আমি ঘুমাতে পারছিলাম না। বারবার ভূতের গল্পটার কথা মনে পড়ছিল। আমি উঠে গেলাম ড্রয়িংরুমে, আম্মুর কাছে। আম্মু বলল,‘তুই ঘুমাসনি?’ আমি উত্তরে বললাম, ‘না মা, ঘুম আসছে না।’ আম্মু বলল, ‘চোখ বন্ধ করে চিন্তাহীনভাবে শুয়ে থাক ঘুম আসবে।’ আমি কিছু না বলে ঘুমাতে চলে গেলাম। এখনই শোব, এমন সময় দিদা ডাকল ড্রয়িংরুম থেকে। আমি ভয় পেয়ে গেলাম। ভাবলাম, নিশি আমাকে দিদার কণ্ঠ ধারণ করে ডাকছে। দু-তিনবার ডাকার পরও ভয়ে এক চুলও এগোতে পারলাম না আমি। একটু পর আম্মু এসে কী যে একটা বকা দিল আমকে। বলল, ‘দিদা ডাকছে শুনতে পাচ্ছিস না? কানে কম শুনিস নাকি?’ আমি কিছু না বলে চুপ করে বসে রইলাম। কারণ আমার বলার মতো কিছুই ছিল না।

লেখক: পঞ্চম শ্রেণি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, ঢাকা