খুব শখ করে একটা হলুদ মুরগির বাচ্চা কিনে নাম দিলাম টুনটুনি। এর পর থেকে আমার নাম হয়ে গেল ‘টুনির মা’। বন্ধুরা আমাকে দেখলেই গেয়ে ওঠে, ‘ও টুনির মা, তোমার টুনি কথা শোনে না।’
টুনটুনি দেখতে একদম ছোট্ট একটা হলুদ পুতুলের মতো। একবার আমার এক পিচ্চি খালাতো ভাই বাসায় এসে ওকে খপ করে ধরে এদিক-সেদিক নাড়িয়ে জিজ্ঞেস করল, ‘আপু, যে চাবিটা ধরে ঘোরালে এটা হাঁটে, সেটা কই?’ ওর প্রশ্ন শুনে হেসেছিলাম খুব। আমরা সবাই মিলেও ওকে বোঝাতে পারিনি যে টুনটুনি আসলে খেলনা না!
টুনটুনিকে রুমে ছেড়ে দিলেই আমার পেছন পেছন ঘোরে। একবার আমার বিছানায় ওকে ছেড়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার চুলের বারোটা বাজিয়ে এর ভেতর বাসা বানিয়ে টুনটুনিও দিব্যি ঘুমাচ্ছে।
একসময় মনে হলো, ওর একটা সঙ্গী দরকার। তাই নিয়ে এলাম টুকটুকিকে। টুকটুকির ওপর সে যেমন কর্তৃত্ব দেখাত, তেমনি তাদের মধ্যে ভাবও ছিল প্রচুর। কিন্তু টুকটুকিকে আনার প্রায় দুই মাস পর একদিন হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে দেখি টুকটুকি নিস্তেজ হয়ে পড়ে আছে। ওকে হাতে নিয়ে খানিকটা পানি মুখে দেওয়ার পর একটু নড়েই মারা গেল। তখন আমি পাগলের মতো কান্না শুরু করি। সামান্য একটা মুরগির বাচ্চার মৃত্যুও এত করুণ হতে পারে, তা বুঝেছিলাম সেদিন।
আমি আর টুনটুনি ওকে অনেক ভালোবাসি। আমরা ওকে ভীষণ মিস করি।
(কিশোর আলোর ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সংখ্যায় প্রকাশিত)