বলতে গেলে কিআ অনেক কষ্ট করে অর্জন করেছি আমি। তবু এটাকে অর্জন বলা যায় কি না, সেটা নিয়ে দ্বন্দ্বে থাকি মাঝেমধ্যে। আমি প্রথম কিআ দেখি একটা বইয়ের দোকানে। সেবার আব্বুর সঙ্গে কিছু জরুরি জিনিস কিনতে গিয়েছিলাম। তখন দোকানে ঝোলানো আরও অনেক ম্যাগাজিনের মধ্যে চোখে পড়ে কিআ। তখনো জানতাম না ‘কিশোর আলো’টা আসলে কী। শুধু নামেই যা শুনেছিলাম আরকি। কিন্তু কিআ প্রথম আমার নজর কাড়ে ২০১৭ সালের জুলাই সংখ্যা দিয়ে। শিরোনাম ছিল ‘আমাকে কেউ বুঝতে পারে না’। ওই সময়টা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। অনেক ঘাত–প্রতিঘাত ও কারণে-অকারণে বিষাদগ্রস্ত থাকতাম। তাই ভেবেছিলাম হয়তো কিআ পড়ে কিছুটা ভালো লাগবে, বুঝতে পারব নানা বিষয়। কিন্তু ভয় ছিল একটাই, আমার পরিবার। আমার পরিবার বরাবরই অনেক কড়া আর রক্ষণশীল।
এমনকি পুরোটা পড়ে ফেলব বলে ঘরে খবরের কাগজও আনা হতো না। পুরো পৃথিবী থেকে নিজেকে আলাদা মনে হতো তখন। মনে হতো, সবাই এই খবরটা জানে, আমি কেন জানি না! রাগ লাগত নিজের ওপর। তা–ও সাহস করে একদিন আব্বুকে জুলাই সংখ্যাটা কিনে দেওয়ার কথা বলি। সবকিছু শুনে আব্বু বলেন, কারও সঙ্গে কখনো মিশবে না, তাহলেই ভালো থাকবে, এসবের দরকার নেই। খুব কষ্ট লেগেছিল সেদিন। তবু হাল ছাড়িনি আমি। কাজিনকে জানাই কিআর কথা। সে একদিন আমাকে বলে, ‘আমার একজন কলিগ বলেছে কিআ খুব ভালো। তিনিও তার ছেলেকে পড়তে দেন। তাই এখন থেকে প্রতি মাসে আমিও তোমাকে কিআ কিনে দেব।’
সেই থেকে শুরু। এখন পর্যন্ত আমার কাছে কিআর ৩৮টির মতো সংখ্যা আছে। তার মধ্যে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসের ‘গোয়েন্দা’ সংখ্যা আমার সবচেয়ে প্রিয়। খুব ভালো লাগে কিআ পড়তে, পুরোনো কিআর পাতা ওল্টাতে। সমসাময়িক অনেক বিষয় জানতে পারি বলে এখন আর নিজেকে পৃথিবী থেকে আলাদা মনে হয় না। মন খারাপ হলেই বসে যাই কিআ নিয়ে। আর তাই আমার মতো অসংখ্য ‘বন্দী থেকেও না থাকা’ মানসিক বিষাদগ্রস্ত টিনএজারদের পাশে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ কিআ এবং এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে। একই সঙ্গে কিশোর আলোর সপ্তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সবাইকে অভিনন্দন।