আমি ভালো ছাত্র। মনে হয়, মেধা আছে ভালো কিছু করার। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠার পর একটা সমস্যা বোধ করছি আমি। পড়ার টেবিলে বসলেই যে বই দেখি তা-ই মনে হয় পড়া। কোনো অধ্যায় না পড়লেও মনে হয় ‘আরে, সবকিছু পারব’। আর এই কারণবশত আমার পড়ার প্রতি ঝোঁক কমে যাচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণিতে আমি পাঁচ ঘণ্টা পড়তাম প্রতিদিন। আর এখন দুই ঘণ্টা সময় শত ইচ্ছা করেও ব্যয় করতে পারি না। কারণটা আমি নিজে উপলব্ধি করতে পারছি। আমি চাই আগের মতো পড়তে। আগের মতো মনোযোগ দিতে। বাবা-মা খুশি থাক। বাবা-মা এখন বিরক্ত। আগে বলতেন ছেলেটা পড়ে, এখন বলেন পড়া নাকি গুলিয়ে ফেলছি। আমাকে বলে চা-স্টলে কাজে যেতে। আমার এই ‘সব পারব’ মানসিকতা আমার জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। অষ্টম শ্রেণিতে ট্যালেন্টপুল বৃত্তি ধরে রাখতে পারিনি। পেয়েছি সাধারণ বৃত্তি। নবম শ্রেণিতে অর্ধবার্ষিকে উচ্চতর গণিতে ফেল করেছি। আমি ফেসবুক চালাই না। আমার মোবাইল নেই। তবু যে কেন আমার এরূপ হয় বুঝতে পারি না। সমাধান দাও প্লিজ...।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
গৌরীপুর আর কে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।
উত্তর: মা-বাবা যদি তোমোকে ‘চায়ের দোকানে কাজ করার’ কথা বলে বক্রোক্তি করেন, তবে আমি বলব তাঁরা ভুল করছেন। এধরনের ব্যঙ্গ আর বক্রোক্তি তোমাকে আরও হতাশ করবে, পড়া থেকে তোমাকে আরও দূরে নিয়ে যাবে। এই কথাগুলো বাবা-মাকে পড়ে শোনাবে। আর দিনে দিনে তোমার রেজাল্ট খারাপ হওয়ার অর্থ তুমি মন দিয়ে পড়তে পারছ না। প্রকৃতপক্ষে পড়ার সিলেবাস তোমাকে আকৃষ্ট করতে পারছে না। আমি বলব, তোমার স্কুল আর বাসার শিক্ষকেরা এ বিষয়ে নতুন করে ভাবতে পারেন, কী করলে পড়ার বিষয়গুলো আকর্ষণীয় হতে পারে। তাঁরা হয়তো বলবেন যে অন্যরা তো পারছে। আমরা বলি, সবার ধারণার জগত্ একরকম নয়। তোমার মতো করেই তোমাকে পড়াতে হবে। আর তুমি নিজেও চিন্তা করে দেখো, কেন তোমার পড়া ভালো লাগছে না। ‘সব পারব’ এমনটা না ভেবে তুমি ভাবো যে ‘নিয়মিত পড়লেই সব পারব’। এই ‘সব পারব’র সঙ্গে ‘নিয়মিত পড়া’কে যুক্ত করলে আসলেই তুমি সব পারবে। মনে করো আজকের সকালটি তোমার জন্য বিশেষ সকাল, আজকের সূর্যটি বিশেষ সূর্য। আজ থেকেই নতুন করে মন দিয়ে পড়ো। পেছনের হতাশা ভুলে যাও। আর হ্যাঁ, স্কুলে পড়ার পাশাপাশি গল্পের বই পড়তে ভুলো না। আর নিয়মিত মাঠে গিয়ে খেলার চেষ্টা করো।
২০১৬ সালে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় ক্লাসের একটা মেয়েকে ভালো লাগে আমার। একটা বান্ধবীর মাধ্যমে তাকে জানাই সেটা। সব সময় ওকে নিয়ে ভাবি, কোচিংয়ের পরীক্ষা না দিয়ে তাড়াতাড়ি স্কুলে যাই ওকে দেখার জন্য। মেয়েটার কর্মকাণ্ড দেখে মনে হয় আমার প্রস্তাবে ১০০ ভাগের মধ্যে ৫ ভাগ সাড়া দিয়েছে সে। জেএসসি পরীক্ষায় আমি সাধারণ এ+ পেলাম আর মেয়েটা সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি পেল।
২০১৭ সালে নবম শ্রেণিতে ওঠার পর নিজেকে মনে হচ্ছিল একটু বড় হয়ে গেছি। তারপর প্রায়ই ওর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করি। এভাবে নবম শ্রেণির অনেক দিন কেটে গেল। একদিন ওকে একা পেয়ে জিজ্ঞেস করায় সে (আমার প্রস্তাবে রাজি) উত্তর দেয়। তারপর থেকে দেখা হলে কথা বলা, ফোনে এসএমএস আদান-প্রদান চলে বেশ কিছুদিন। আমি কয়েকটা চিঠিও দিয়েছিলাম ওকে। তারপর বিভিন্ন কারণে ওর সঙ্গে আমার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, দেখা হলেও কথাবার্তা হয় না। মেয়েটা আমাকে এড়িয়ে চলতে শুরু করে।
মেয়েটার জন্য আমি যে সময়গুলো নষ্ট করেছি, তা ভেবে এখন আমার আফসোস হয়। সে বরাবরই আমার চেয়ে অনেক ভালো রেজাল্ট করে। ওর এসএমএসের কথাগুলো মনে হলে আমার খুব খারাপ লাগে। ওর কথা মনে হলে আমার মধ্যে অন্য রকম অনুভূতি জাগে।
এখন বুঝতে পারছি এই বয়সে কাজটা করা ঠিক নয়। আমি জীবনে অনেক বড় হতে চাই। আমি ওকে ভুলে যাওয়ার জন্য ওর সব এসএমএস নম্বর আমার ফোন থেকে মুছে ফেলি। আমরা একই ক্লাসে একই প্রাইভেট ব্যাচেও পড়ি। আমি কখনোই চাই না মেয়েটা আমার চেয়ে ভালো রেজাল্ট করুক। ওর চেয়ে আমি ভালো রেজাল্ট করতে চাই। আমার মনে হয় মেয়েটা আমাকে ভুলে গেছে, কিন্তু আমি কেন মেয়েটাকে ভুলতে পারছি না?
আমি মেয়েটাকে একেবারেই ভুলে গিয়ে আমার জীবনের নির্দিষ্ট লক্ষ্যের দিকে অগ্রসর হতে চাই। এ জন্য জনাব আপনার সুপারমর্শ একান্ত কামনা করছি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
ভেন্ডাবাড়ী, পীরগঞ্জ, রংপুর।
উত্তর: তোমাদের মতো বয়সে এ ধরনের ভালো লাগা বা মোহ হতেই পারে। তা দোষণীয় নয়। আর রেজাল্টের দিক থেকে আমি মনে করি তুমিও খুব ভালো ফল করেছ। কিন্তু তুমি চাইছ মেয়েটি কখনো যাতে তোমার চেয়ে ভালো রেজাল্ট না করে, তোমার এই ইচ্ছাটা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়। তুমি বরং চেষ্টা করো, যাতে তুমি ওই মেয়েটির মতো বা তার চাইতে ভালো ফল করতে পারো। আরেকজনের ফল খারাপ হোক এটা চাওয়ার চাইতে নিজের ফল ভালো করার দিকে জোর দেওয়াই উচিত। আর তোমার মনের মধ্যে এখন যেটা হচ্ছে, সেটা একধরনের হতাশামিশ্রিত রাগ। মেয়েটি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করছে না বলে তুমি রেগে গেছ। কিন্তু মেয়েটি প্রথমে তার কর্মকাণ্ডে ৯৫ শতাংশ সাড়া দেয়নি! এরপর তোমার সঙ্গে তার স্বল্প সময়ের জন্য যোগাযোগ হলেও পরে তা বন্ধ হয়ে যায়। মেয়েটি তার পড়ালেখা আর ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দিচ্ছে। আরেক দিকে তুমি প্রাধান্য দিচ্ছ সেই মেয়েটিকে। ভুলটা এখানেই। তুমিও মেয়েটির মতো নিজের পড়ালেখা আর ক্যারিয়ারকে প্রাধান্য দাও, নিয়মিত পড়ো, তাহলেই তোমার রেজাল্ট ভালো হবে। আর যত বেশি পড়ালেখায় মনোনিবশ করবে, ততই তার চিন্তা তোমার মন থেকে বের হয়ে যাবে।
এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - ‘মনোবন্ধু’, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।