চমকপ্রদ
পুঁচকেদের যত রেকর্ড
আমাদের দেশে একটা ১২-১৩ বছরের ছেলে অথবা মেয়ের কাছ থেকে সর্বোচ্চ কী আশা করতে পারি? ইংরেজিতে ৯০, গণিতে ৯৫ পেলেই তো হলো! হাতে রুবিকস কিউব দেখলেই শুনতে হয়, ‘এটা কি খেলার সময়?’ হাতে স্কুলের বই বাদে অন্য কোনো বই দেখলে শুনতে হয়, ‘এখন কি গল্পের বই পড়ার সময়?’ এসব শুনে শুনেই বড় হয় আজকালকার শিশুরা। কিন্তু বাইরের দেশে পড়ালেখার পাশাপাশি অন্যান্য কার্যক্রমেও উৎসাহ দেওয়া হয় শিশু–কিশোরদের। তারা মাঝেমধ্যেই মজাদার অথবা উদ্ভট কিছু কাজ করে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডও গড়ে ফেলে। তেমনই কিছু রেকর্ড তুলে ধরা হলো এই লেখায়।
এক মিনিটে হাজার তালি
অনেক রকম পরিস্থিতিতেই হাততালি দিই আমরা। কেউ অসাধারণ কিছু করে ফেললে, অসাধারণ কিছু বলে ফেললে কিংবা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল জিতে গেলে বা কেউ সেঞ্চুরি করে ফেললে আমরা হাততালি দিই। কিন্তু কখনো কি আমরা ভেবেছি যে হাততালির মাধ্যমেও রেকর্ড গড়া সম্ভব? নয় বছর বয়সী সেভেন ওয়েড কিন্তু ভেবেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অধিবাসী সেভেন একদিন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ইউটিউব চ্যানেল ঘাঁটতে গিয়ে সে এই রেকর্ড খুঁজে পায়। আর সেদিন থেকেই সে মনস্থির করে ফেলে যে এই রেকর্ড তাকে ভাঙতেই হবে। প্রথম প্রথম আগের রেকর্ডের ধারেকাছেও আসতে পারত না সে। কিন্তু কঠোর অনুশীলন শুরু করে ওয়েড। প্রতিদিন অনুশীলনের কারণে একটা সময় তার হাতে ফোসকা পড়ে যায়। কিন্তু সে থেমে থাকেনি। কীভাবে নিজের ক্ষতি না করে অনুশীলন করা যায়, সেটা বের করে অনুশীলন চালিয়ে গেছে। ব্যাপারটা অনেকের কাছেই হাস্যকর মনে হয়েছিল। কিন্তু সবাইকে কাজের মাধ্যমে জবাব দিয়ে সেভেন ওয়েড এখন এক মিনিটে ১ হাজার ৮০ তালি বাজিয়ে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অধিকারী।
সবচেয়ে কম বয়সে ম্যাগাজিনের সম্পাদক
আট বছর বয়সী মেয়ে একটা ম্যাগাজিনের সম্পাদক, ভাবা যায়! অস্ট্রেলিয়ার রোজ্যান ডাওনস ইট গার্ল ম্যাগাজিনের সম্পাদক ছিল গোটা ছয় মাস। সম্পাদক হিসেবে তার কাজ ছিল মার্কেট রিসার্চ, ম্যাগাজিনের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা, সম্পাদনার ধারণা তৈরি করা, প্রতি মাসে সম্পাদকের চিঠি লেখা এবং ম্যাগাজিন প্রিন্টে যাওয়ার আগে পর্যালোচনা করা। রোজ্যানের কোনো রেকর্ড গড়া বা ভাঙার উদ্দেশ্য ছিল না। সে শুধু চেয়েছে বড় কিছু একটার অংশ হতে। কিন্তু না চাইলেও রোজ্যান হয়ে গেছে পৃথিবীর সবচেয়ে কম বয়সী ম্যাগাজিন সম্পাদক এবং জায়গা করে নিয়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে।
কিউবের রাজা
রুবিকস কিউব এমন একটা জিনিস, যেটার প্রতি ছোট থেকে বড় সবারই প্রবল আগ্রহ রয়েছে। সূত্র না জানা থাকায় অনেকেই মেলাতে পারে না। সবাই সবকিছু পারবে না, এটাই প্রকৃতির নিয়ম। তবে যারা রুবিকস কিউব মেলাতে পারে, তারাও হয়তো চীনের কিউ জিয়ানুর কিউব মেলানো দেখে হতভম্ব হয়ে যাবে। আমি হলে তো একটা সাধারণ কিউব সাধারণভাবে মেলাতে পারলেই খুশি হয়ে যেতাম। কিন্তু ১৩ বছর বয়সী জিয়ানু কঠিন থেকে কঠিনতর চ্যালেঞ্জ নিতে পছন্দ করে। বেশ কিছু রেকর্ডই সে ইতিমধ্যে ভেঙে ফেলেছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো জাগলিং করে তিনটা কিউব মেলানো এবং দুই হাত ও দুই পায়ে তিনটা কিউব মেলানো। জাগলিং করে তিনটা কিউব জিয়ানু মেলায় ৫ মিনিট ৬ দশমিক ৬১ সেকেন্ডে। এত দ্রুত কিউব মিলিয়েছিল সে, যে কিউব মেলানোর সময় তার হাতের আঙুল দেখাই যাচ্ছিল না! এর কয়েক মাস পরেই জিয়ানু দুই হাত ও দুই পায়ে তিনটা কিউব মেলায় মাত্র ১ মিনিট ৩৬ দশমিক ৩৯ সেকেন্ডে এবং উল্টো হয়ে একটা কিউব মেলায় ১৫ দশমিক ৮৪ সেকেন্ডে। রুবিকস কিউবের চার–চারটা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস এখন জিয়ানুর দখলে। সাধে কি আর জিয়ানুকে কিউবের রাজা বলা হয়!
সবচেয়ে কম বয়সী নাট্যকার
ছোটবেলায় আমি ভাবতাম, টেলিভিশনে যেসব নাটক হয়, না জানি কত বড় বড় মানুষেরা এই নাটক লেখেন, বানান। এমনকি এই লেখা লেখার আগেও এমনটাই ভাবতাম। একটা নাটক লিখতে হলে আসলে বয়সে বড় বা পেশাদার কেউ হতে হয় না, লিখতে জানতে হয়। ১০ বছর বয়সী ক্রশানা রাওয়াত সেটাই করে ফেলেছে। ভারতের জয়পুরের অধিবাসী ক্রশানা লিখে ও পরিবেশন করে ফেলেছে মিস্টিক্যাল ম্যাজিক্যাল অ্যাডভেঞ্চারস: দ্য লস্ট কি) নামের ৮৫ মিনিটের এক আস্ত নাটক। ঢুকে পড়েছে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সবচেয়ে কম বয়সীদের ক্লাবে। নাটকটা এক ছোট্ট মেয়ে টিংকিকে নিয়ে, যার সঙ্গে দেখা হয় চারটা রহস্যময় প্রাণীর। তারা বেরিয়ে পড়ে এক জাদুর মতন অভিযানে। মূল চরিত্রে অর্থাৎ টিংকি চরিত্রে অভিনয় করেছে ক্রশানা নিজেই। ক্রশানার এই নাটকে অভিনয় করেছে তার বন্ধুবান্ধব এবং পেশাদার অভিনেতা, অভিনেত্রীসহ ৪০ জন। ক্রশানা লেখালেখি করে আট বছর বয়স থেকেই। আর তাকে সব রকমের সহযোগিতা করেছেন তার মা। এমনকি ক্রশানার নাটকের প্রযোজক ও পরিচালকও ক্রশানার মা শ্রেয়া রাওয়াতই।