আজ শহর থেকে শত মাইল দূরের এক রাজ্যের গল্প বলব। কল্পনা নয়, সত্যিকারের এক রাজ্য—টাঙ্গাইলের কালিহাতী সাধারণ পাঠাগার। স্কুলপড়ুয়া ছেলেমেয়েরা এখন স্মার্টফোনে সময় কাটানোর পরিবর্তে সময় কাটাচ্ছে বইয়ের এ রাজ্যে। কাটাবেই–বা না কেন? এমন আয়োজন আর কয় জায়গায়ই–বা আছে!
১৯৯২ সালে ‘জ্ঞানই আলো’ প্রতিপাদ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত এ পাঠাগার যেন শিল্পীর ক্যানভাসের মতো নতুন রূপে সজ্জিত হয়ে পাঠকদের ডাকছে বই ছুঁয়ে দেখার জন্য। এ পরিস্থিতিতেও পাঠকেরা সাড়া দিচ্ছে বেশ। বিশেষ করে শিশুদের জন্য এটা এক আনন্দের বেলাভূমি। এখানে একটি কক্ষ রাখা হয়েছে শুধুই শিশুদের জন্য, যার নাম ‘অঙ্কুর’। শিশুরা এখানে বসে বই পড়তে পারে, আঁকতে পারে, খেলতেও পারে। এ ছাড়া প্রায় ১০ হাজারের ওপর বৈচিত্র্যময় সংগ্রহের বই নিয়ে আছে ‘আলোর ভুবন’ নামের নান্দনিক পাঠকক্ষ।
তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ায় আকৃষ্ট করতে পাঠাগারেই করা হচ্ছে ‘ক্যাফে জাগরণ’ নামের একটি ক্যাফে। যেখান থেকে চা বা কফির কাপে চুমুক দিয়ে শেষ করা যাবে প্রিয় বইটি। ‘বায়োস্কোপ’ নামের বিচিত্র এক হোম থিয়েটার যুক্ত হচ্ছে শিগগিরই, যেখানে থাকবে জাতীয় ও বিশেষ দিবসগুলোতে সপ্তাহব্যাপী চলচ্চিত্র প্রদর্শনী।
পাঠাগারে সাহিত্য আড্ডা হবে না, তা কি হয়? সেমিনার ও সাহিত্য আড্ডার জন্য তৈরি করা হয়েছে ‘মুক্তচিন্তা’ নামে আরও একটি কক্ষ।
এই ব্যতিক্রমী ও নান্দনিক বইয়ের রাজ্য যাঁর পরিকল্পনায়, তিনি হচ্ছেন পাঠাগারের বিদায়ী সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শামীম আরা নিপা। পাঠাগারের বর্তমান সভাপতি ও ইউএনও রুমানা তানজিনও এর বিকাশের ধারা অব্যাহত রাখার দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।
এখন তোমার আসার পালা। পাঠাগারে আসতে পারবে প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে, যা রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে এখন অবশ্যই আসতে হবে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে। এখানে আসতে ও বই পড়তে কোনো ফি দেওয়া লাগে না, কিন্তু বই বাসায় নিতে চাইলে হতে হবে সদস্য।