দেবদাস চক্রবর্তী আমার দাদু। দাদুকে আমি খুব ভালো করে দেখতে পারিনি। আমার যখন ছয় বছর বয়স, তখন উনি আমাদের ছেড়ে চলে যান (৫ ফেব্রুয়ারি ২০০৮)। কিন্তু এর চেয়েও বড় কথা হলো, এই ছয় বছরে আমি ওনাকে শুধু আলঝেইমারে আক্রান্ত একজন রোগী হিসেবেই দেখেছি। আসলেই লজ্জার ব্যাপার যে আমি এ দেশের একজন খ্যাতিমান শিল্পীর ছায়ায় বড় হয়েছি, কিন্তু ওনার তুলির জাদু নিজের চোখে দেখতে পারিনি। দেখতে পারিনি মানুষটাকেও। আমি শুধু শুনেছি, দাদু একুশে পদক পেয়েছেন, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের পোস্টার এঁকেছেন। স্মৃতিতে কিছুটা আছে, শেষবিদায়ে তিনি রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়েছিলেন।
আমার বন্ধুবান্ধব কেউ কেউ সব সময় আমাকে খ্যাপায়। বলে, আমি মা–বাবার আড়ালে থাকি। কিন্তু আমি সেটা করি ভিন্ন কারণে। আমি তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হতে চাই। যেভাবে দাদু বাবাকে অনুপ্রাণিত করেছেন একজন সফল মানুষ হতে, ভালো মানুষ হতে। আমিও সে রকম হতে চাই।
আমাদের বাসার চালচলন, আচরণ সবই দাদুর থেকে প্রভাবিত। আমাদের বাসায় সব সময় অতিথিরা আসেন, যার শুরুটা দাদুর হাত ধরেই। খুব বন্ধুপ্রিয় মানুষ ছিলেন আমার দাদু। আমি শুনেছি, তিনি যখন সুস্থ ছিলেন, অনেক চেনা–অচেনা মানুষ প্রায়ই আসতেন আমাদের বাসায়। তরুণ থেকে প্রবীণ—সব বয়সের বন্ধুই ছিল দাদুর।
দাদু চলে যাওয়ার পর বাবা মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিলেন। দীর্ঘদিন অসুস্থ দাদুকে সেবা করেছিলেন বাবা। তাই বাবাকে খুশি করার জন্য আমি দাদুর একটা পোর্ট্রেট এঁকেছিলাম। প্যাস্টেল দিয়ে। তখন বয়স ছিল ছয়। নানা কারণে আঁকাআঁকি থেকে দূরে ছিলাম। অনেক বছর পর সেই ইচ্ছা আবার জেগে ওঠে। তাই দাদুর আরেকটি পোর্ট্রেট আঁকলাম গত বছরের ২৫ ডিসেম্বরে দাদুর জন্মদিনে শ্রদ্ধা জানাতে। এবার কলমের কালিতে। বয়সে একটু পরিপক্ব হয়েছি তো!
পোর্ট্রেটগুলো খুবই সাদামাটা, কিন্তু এর পেছনে অনেক গল্প আছে; যা কাগজে–কলমে বোঝা যাবে না, দেখে বুঝতে হবে। দেশের মানুষের শৈল্পিক চোখ তৈরি হোক, এটা ছিল দাদুর একটা অপূর্ণ ইচ্ছা।