তুমি কতটা তর্কপ্রিয়

পৃথিবীর সব প্রাণী সুখী হোক—এমনটাই সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু সুখ আর থাকে কীভাবে, যদি ঝগড়াঝাঁটি, মারামারি, বিবাদ লেগে থাকে? ঝগড়া–বিবাদ কেউই পছন্দ করে না, কিন্তু তাও কেমন করে যেন ঝগড়া–বিবাদে জড়িয়ে পড়ে মানুষ। তা তুমিও কি অনেক ঝগড়া করো? ঝগড়াটে অপবাদ কি তোমাকে প্রায়ই শুনতে হয়? ঠিক আছে, এখন আবার তর্ক শুরু কোরো না। আগে প্রশ্নগুলোর ঝটপট উত্তর দাও। তারপর স্কোর মিলিয়ে জেনে নাও আসলেই তুমি ঝগড়াটে কি না!

তা তুমিও কি অনেক ঝগড়া করো? ঝগড়াটে অপবাদ কি তোমাকে প্রায়ই শুনতে হয়?
অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

১. ধরো, বন্ধুরা সব সময় একটা নির্দিষ্ট স্থানে আড্ডা দাও। একটা দিন খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেদিন ওখানে বসে আড্ডা দাওনি। প্রতিদিনের মতো সেখানে আড্ডা দিতে গিয়ে দেখলে, অন্য কেউ আগে থেকেই বসে আছে ওখানে। কী করবে?

ক. আরে, এটা মগের মুল্লুক নাকি? আমরা সোজা গিয়ে বলব জায়গা ছেড়ে দিতে। প্রয়োজনে তর্ক করব...

খ. প্রতিদিন যেহেতু আড্ডা দিই, এক দিন না দিলেই–বা কী? কিছুই বলব না। অন্য কোথাও গিয়ে আড্ডা দেব।

গ. প্রথমে ভদ্রভাবে বলব, জায়গা ছেড়ে দিতে। না শুনলে মেনে নেব, আর কী!

২. সকালবেলা নাশতা করতে গিয়ে দেখলে, চায়ে চিনি বেশি। এমন অবস্থায় তুমি যা করবে...

ক. এটা একটা প্রশ্ন হলো? চায়ে চিনি কমবেশি হতেই পারে, এটাই তো স্বাভাবিক!

খ. কী? চায়ে চিনি বেশি কেন হবে? আমি কি বেশি চিনি খাই? যে বানিয়েছে তাকে জিজ্ঞেস করব। নাকি এটা নিয়ে কথা বললেও আমার দোষ?

গ. যে বানিয়েছে তাকে বিষয়টি জানাব, যেন পরবর্তী দিন একই বিষয় না ঘটে।

৩. বৃষ্টির দিন, হেঁটে বাসায় ফিরছ। এমন সময় একটা গাড়ি শাঁ শাঁ করে তোমার সামনে দিয়ে চলে গেল। যাওয়ার সময় সব কাদাপানি ছিটিয়ে দিয়ে গেল। তোমার অনুভূতি যা হবে—

ক. মেজাজ খারাপ না হয়ে উপায় আছে? সম্ভব হলে গাড়িচালককে বলব আরও সাবধানে গাড়ি চালাতে।

খ. রাখেন অনুভূতি, ওই গাড়িচালকের একদিন কী আমার একদিন। আমার কথার হাত থেকে বাঁচতে পারবে না, তার গাড়ি যদি উসাইন বোল্টের মতো দ্রুত বেগে ছুটে তা–ও...!

গ. এমন ঘটনা কত ঘটেছে। বাসায় চুপচাপ ফিরে এসে পরিষ্কার হয়ে নিই।

৪. ইয়ে না মানে বলছিলাম...তুমি নাকি কথায় কথায় ঝগড়া শুরু করে দাও?

ক. আমি? আমি ঝগড়া করি? কে বলেছে? আজকাল ন্যায্য কথা বলাও ঝগড়া হয়ে গেল নাকি? এখন কি ছেড়ে কথা বলব? অসম্ভব, আমি ছেড়ে কথা বলার লোক নই।

খ. মাঝেমধ্যে টুকটাকও তর্ক করে না, এমন লোক দুনিয়ায় কজন আছে? টুকটাক তর্ক করি তবে সেটাকে ঝগড়া বলা যাবে কি না, সেটা নিয়েও একটা তর্ক হতে পারে!

গ. আমি তেমন একটা কথাই বলি না, ঝগড়া তো অনেক পরের কথা!

৫. ধরো, তোমার বাসায় ছয়–সাত বছর বয়সী কোনো মুরব্বি (!) বেড়াতে এসেছেন। নিজের সব প্রতিভা ঢেলে দিয়ে তোমার বইয়ে বেশ আঁকিবুঁকি করলেন। এর প্রতিক্রিয়ায় তুমি যা বলবে—

ক. প্রথমে একটু বিরক্ত হব। তারপর আম্মুকে বলব আমার বইখাতায় কেউ যেন হাত না দেয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে।

খ. বাচ্চারা তো এমন করবেই। উল্টো আরেকটা বইও দিয়ে দিতে পারি আঁকাআঁকি করতে!

গ. আমার বইয়ে আঁকাআঁকি? শুনেই তো মেজাজটা বিগড়ে যাচ্ছে। বাচ্চাটাকেই বলব অন্য কারও বইপত্র ধরা একদম ঠিক না। জিজ্ঞেস করব, কেন সে অনুমতি ছাড়া বইয়ে আঁকাআঁকি করল?

৬. মুরগি আগে না ডিম আগে? এ ধরনের বিতর্কিত প্রশ্ন উঠলেই তোমার মনোভাব হয়—

ক. এড়িয়ে যাই। তর্ক করে কোনো লাভ আছে?

খ. নিজের যুক্তি ও ব্যাখ্যা দিই। অন্যের যুক্তি শুনি। একমত হওয়ার হলে হই, না হলে সে কথা জানাই।

গ. বিতর্কিত? আমি যা বলি তা–ই ঠিক। কারণ, যুক্তির কথা বলি তো। আমার যুক্তির পর সেইটা আর কোনো বিতর্কিত বিষয় থাকে না, পানির মতো সহজ হয়ে যায়। আমার মতামতের পর অন্য কারও যুক্তি খাটেই না!

৭. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো একটা বিষয় নিয়ে তর্ক চলছে। তুমি যে কাজটি করো—

ক. তর্কের বিষয় হলে তর্ক তো হবেই। আমিই তো শুরু করি, অনেক সময় নিজেই পোস্ট দিই। ভুল কিছু দেখলে, সেখানে দুকথা না শোনালে আমার চলেই না।

খ. বসে বসে সব মন্তব্য পড়ি, দেখি। কিন্তু নিজে কিছুই বলি না। খুব বেশি হলে একটা মন্তব্য করতে পারি।

গ. আমার এ জন্যই হোমপেজ দেখতে বিশেষ ভালো লাগে না। এড়িয়ে যাই এমন কিছু দেখলে।

৮. যে কাজটা তোমার দ্বারা কখনোই করা সম্ভব হয় না—

ক. কারও সঙ্গে ঝগড়াঝাঁটি করা!

খ. কাউকে কথায় ছেড়ে দেওয়া!

গ. প্রয়োজন ছাড়া তর্ক করা!

৯. একদিন সকালে ঘুম ভেঙে দেখলে, কেউ কারও সঙ্গে ঝগড়া–বিবাদ করছে না। পুরো পৃথিবীটাই ঝগড়া–বিবাদমুক্ত হয়ে গেছে। ব্যাপারটা কেমন?

ক. এহহ? স্বপ্নেও এমন ভাবতে পারি না। এই কথাটা একদমই মেনে নিতে পারলাম না। বুঝায় বলি আপনাকে...

খ. এমনটাই তো চাই আমি! কী সুন্দর হতো, ভাবতেই ভালো লাগছে।

গ. জানি, ব্যাপারটা সম্ভব না, কিন্তু হলে ভালোই লাগত।

১০. শেষ কবে ঝগড়া করেছ?

ক. এই যে প্রশ্নটা পড়েই মনে হচ্ছে জিজ্ঞেস করি, ঝগড়া ঝগড়া করছেন কেন? মানে, কে ঝগড়া করে? আমি? তখন থেকে যুক্তি–তর্ক আর ঝগড়াকে গুলিয়েই যাচ্ছেন?

খ. এটা মনে করতে আমার টাইম মেশিন লাগবে! অত পুরোনো কথা মনেও নেই।

গ. মাঝেমধ্যে টুকটাক তর্ক তো হয়, সেটার হিসাব ধরলে খুব আগে না আবার খুব সম্প্রতিও না।

নম্বর

১. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫

২. ক. ০ খ. ১০ গ. ০৫

৩. ক. ৫ খ. ১০ গ. ০

৪. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০

৫. ক. ৫ খ. ০ গ. ১০

৬. ক. ০ খ. ৫ গ. ১০

৭. ক. ১০ খ. ৫ গ. ০

৮. ক. ০ খ. ১০ গ. ৫

৯. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫

১০. ক. ১০ খ. ০ গ. ৫

তুমি যেখানে দাঁড়িয়ে

০–৩৫

নাসা যদি তোমাকে রকেটে করে মহাকাশে পাঠিয়ে দেয়, তাতেও তুমি কোনো আপত্তি করবে না। কারণ, আপত্তি করতে গেলেই তর্ক করতে হবে। আর যা–ই হোক, তোমার দ্বারা তর্ক-বিবাদ করা একেবারেই সম্ভব নয়। এটা নিশ্চয়ই ভালো বিষয় ঝগড়া–বিবাদ না করা। কিন্তু এমনও অনেক দিন গেছে, তুমি তর্ক করোনি বলে তোমারই ক্ষতি হয়েছে। তবু তুমি মুখ বুজে সহ্য করেছ। ঝগড়া–বিবাদ ভালো নয়, তবে ক্ষেত্র বুঝে যুক্তি দিয়ে কথা বলাও প্রয়োজন। এটাও মাথায় রেখো।

৪০–৭০

কোথায় কতটুকু বলতে হবে, সেটা তোমার চেয়ে ভালো আর কে জানে? তুমি ঝগড়া কোরো না, কিন্তু নিজের মতামতটা ঠিকই অন্যকে জানিয়ে দাও। আবার অন্যের মতামতে দ্বিমত থাকলে সহিংস কোনো আচরণ কোরো না, বরং নিজের মনোভাবটা যতটুকু সহজভাবে বোঝানো সম্ভব, সেভাবে প্রকাশ করো। তবে এটাও ঠিক, কখনো কখনো নিজের প্রয়োজনের বাইরেও কথা বলতে হয়, যেটা তুমি একেবারেই করো না। তোমাকে তার্কিক বলা যেতে পারে, কিন্তু ঝগড়াটে বলা চলে না।

৭৫–১০০

ইয়ে, না মানে...তর্ক করার জন্য বলছি না, তবে কী বলো তো, নিজের ভাবনা সব সময় সঠিক নাও হতে পারে। অন্যের মতামতকেও একটু গুরুত্ব দিয়ে শোনা উচিত। কেউ একই মত সমর্থন করছে না মানেই এই নয় যে তার সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িয়ে যেতে হবে। সব মানুষের চিন্তাভাবনা এক হলে পৃথিবীটা কি এত বৈচিত্র্যময় হতো, বলো? তোমাকে কেউ ঝগড়াটে বললে সেটা নিয়েও ঝগড়া শুরু করে দিয়ো না। তাহলে তো তার কথাটাই ঠিক হয়ে দাঁড়াবে। বরং নিজের মতামতকে আরও অন্যভাবে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করো, যেন সেটা আর শুনতে ঝগড়ার মতো মনে না হয়।