টাকার গরম

অনেক কাল আগে এক দেশে দুই ভাই ছিল, অনন্ত আর জ্বলন্ত। একদিন অনন্ত ঘরের বারান্দায় চুপচাপ বসে আছে। কাজটাজ নেই, তাই মহাবিরক্ত। হঠাৎ কোত্থেকে জ্বলন্ত ছুটে এসে বলল, ‘তুই বসে বসে ভেরেন্ডা ভাজছিস, আর আমাকে দ্যাখ, আমি এত টাকা কামিয়েছি যে পাঁচ শ টাকার নোট আগুনে পুড়িয়ে দিলেও আমার কিচ্ছু যায় আসে না। এই দ্যাখ, আমার হাতে যে টাকাটা আছে, আমি এখন এটাতে আগুন ধরিয়ে দিব।’ অনন্ত বলে উঠল, ‘এ তো অসম্ভব!’ কিন্তু জ্বলন্ত সত্যি সত্যি টাকায় আগুন ধরিয়ে দিল। টাকাটা কিছুক্ষণ জ্বলার পর নিভে গেল, কিন্তু পুড়ল না! অনন্ত তো অবাক হয়ে হাঁ করে চেয়ে আছে। জ্বলন্ত কলার উঁচিয়ে বলল, ‘অসম্ভবকে সম্ভব করাই জ্বলন্তের কাজ!’।

যেভাবে করবে

আসলে জ্বলন্ত যা করল সেটা কিন্তু অসম্ভব কিছু না, চাইলে তুমিও করতে পারো। এর জন্য লাগবে চকচকে নতুন টাকার নোট আর ৫০% ইথানল। ইথানল একধরনের অ্যালকোহল। স্কুলের রসায়ন ল্যাব কিংবা ঢাকার হাটখোলাতে একটু ভালোমতো খোঁজ করলে এই জিনিস পাওয়া যাবে। বাজারে ওষুধের দোকানে অনেক সময় নীল রঙের স্পিরিট পাওয়া যায়, ওটাও ইথানল। তবে সেটা বিশুদ্ধ ইথানল না, তার সঙ্গে অন্যান্য উপাদানও থাকে। টাকার গরম দেখানোর জন্য বিশুদ্ধ ইথানলের সঙ্গে পানি এমনভাবে মেশাতে হবে, যেন পানি আর ইথানল সমান সমান থাকে। তার মানে এক চামচ ইথানল নিলে এক চামচ পানি নিতে হবে। এভাবে তৈরি হবে ৫০% ইথানল। তারপর চকচকে নতুন টাকাটা চিমটা দিয়ে ধরে ৫০% ইথানলে ভালোমতো ভেজাতে হবে। এবার টাকায় আগুন ধরিয়ে দিলেই দেখবে জ্বলন্তের ম্যাজিক!

সাবধানতা

কয়েকবার কম দামি নোট দিয়ে প্র্যাকটিস করার পর বড় অঙ্কের নোট দিয়ে এভাবে টাকার গরম দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দিতে পারো সবাইকে, ঠিক যেমন জ্বলন্ত তাক লাগিয়ে দিয়েছিল অনন্তকে। আর আগুনের ব্যাপারে সাবধান। ইথানল দাহ্য পদার্থ। তাই টাকার গরম দেখানোর আগে আশপাশের দাহ্য পদার্থগুলোও সরিয়ে নিয়ো।

আসলে কী ঘটল

আসলে সাধারণ কাগজের চেয়ে একটু আলাদা, কিছুটা আঁশযুক্ত কাগজে টাকা ছাপানো হয়। এই বিশেষ ধরনের কাগজের তুলনায় ইথানল অনেক বেশি দাহ্য। মানে ইথানলে ভেজা টাকার নোট আগুনে ধরলে টাকায় আগুন ধরার আগেই ইথানলে আগুন ধরে যায়। ইথানল পুড়ে বাষ্প হয়ে উড়ে যায় আর টাকার গায়ে রয়ে যায় ৫০% ইথানলের সঙ্গে থাকা পানি। সেই পানিতে ভেজা টাকার গায়ে আগুন তো লাগেই না, বরং আগুন নিজেই নিভে যায়।