ঝোড়ো বাতাসেও কি পদ্মা সেতু দিয়ে যান চলবে?
পদ্মা সেতু তো ফাঁকা নদীর ওপরে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ। বাতাস বইবে বাধাহীনভাবে। বাংলাদেশের সেতু কর্তৃপক্ষ এরই মধ্যে জানিয়ে দিয়েছে, সেতুতে গাড়ির সর্বোচ্চ গতিসীমা হবে প্রতি ঘণ্টায় ৬০ কিলোমিটার। ২৫ জুন ২০২২ পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হচ্ছে। তবে শুরুতে চলবে শুধু বাস-ট্রাক-গাড়ি। ট্রেন কবে চলবে, এই প্রশ্নের উত্তর এখনো জানা যায়নি। ২০২২ সালের মে মাসে রেলমন্ত্রী বলেছেন, ২০২৩ সালের মার্চেও ট্রেন চলতে পারে, জুনেও চলতে পারে। নকশাকারী প্রতিষ্ঠান যাত্রীবাহী ট্রেন ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার বেগে চলাচলের উপযোগী করেই সেতুটাকে নকশা করেছে। এ ছাড়া মালবাহী ট্রেনও চলতে পারবে সেতু দিয়ে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি ঝোড়ো বাতাস বইতে থাকে, তাহলে সেতুতে কি যানবাহন চলতে থাকবে?
পদ্মা সেতুর নকশা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এইসিওএম করপোরেশনের প্রকৌশলীদের প্রকাশিত প্রবন্ধ থেকে জানা যাচ্ছে, পদ্মা সেতু খারাপ আবহাওয়াতেও গাড়ি এবং ট্রেন চলাচলের উপযোগী করেই তৈরি করা হয়েছে। তবে চরম খারাপ আবহাওয়ায় যান চলাচলের ওপরে বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। খুব জোরে বাতাস বইতে শুরু করলে প্রথমে বাস-ট্রাকের মতো ‘পাশে বড়’ (লার্জ সাইডেড) যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। ঝোড়ো বাতাসের সর্বোচ্চ গ্রহণযোগ্য সীমা হলো ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার (যা বেড়ে ঘণ্টায় ৮৫ কিলোমিটার হয়)। অর্থাৎ তখন যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। এ নিয়ম গাড়ির জন্য। অবশ্য বাস্তবে বাতাসের বেগ কত হলে যান চলাচল বন্ধ করা হবে, তার নিয়ম প্রণয়ন ও প্রয়োগ করবে বাংলাদেশ সেতু বিভাগ।
ট্রেনের জন্য, নকশাকাররা একই সীমা (ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার) পর্যন্ত বাতাসের বেগ গ্রহণীয় বললেও পদ্মা সেতুর বিশেষজ্ঞ প্যানেলের সদস্য অধ্যাপক আইনুন নিশাত জানাচ্ছেন, ৬০ কিলোমিটার বেগে বাতাস বইতে শুরু করলেই ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে এই নিয়ম তৈরি ও প্রয়োগ করবে রেলওয়ে বিভাগ। পদ্মা সেতুর রেললাইন একমুখী। কাজেই ট্রেন আসা-যাওয়া রেল বিভাগকে কঠোর শৃঙ্খলার সঙ্গেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
যুক্তরাজ্যের একটা গবেষণাপত্রে জানা যাচ্ছে, সেখানে বিভিন্ন সেতুতে বাতাসের বেগ অনুযায়ী বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হয়। যেমন অরওয়েল সেতুতে পাশের বাতাসের বেগ ঘণ্টায় ৫০ মাইল আর সামনের বাতাসের বেগ (হেড উউন্ড) ঘণ্টায় ৬০ মাইল হলে সেতু বন্ধ করে দেওয়া হয়।
কাজেই শিরোনামের প্রশ্ন ‘ঝোড়ো বাতাসেও পদ্মা সেতুতে কি ট্রেন চলবে?’ এই প্রশ্নের উত্তর হলো, বাতাস প্রবল হলে চলবে না। কত বেগের বাতাসকে প্রবল বলা হবে, তা জানার জন্য আমাদের বিজ্ঞপ্তি বা প্রজ্ঞাপন পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।
জরুরি প্রয়োজনে ট্রেন খালি করে দিতে হলে কী হবে?
পদ্মা সেতু নিরাপত্তার সব রকমের সুবিধা রেখেই তৈরি করা হয়েছে। সেতুর ওপরে যদি জরুরি প্রয়োজনে রেলগাড়ি থেকে যাত্রীদের নামতে হয়, তবে সে সুবিধা সেতুতে থাকবে।
সেতু সব সময় বিভিন্ন স্তরের নজরদারির মধ্যে থাকবে। রক্ষণাবেক্ষণের কাজও চলবে অতন্দ্রভাবে। ধরা যাক, সেতুর ওপরে কোনো গাড়ি দুর্ঘটনার শিকার হলো বা দুর্ঘটনা সৃষ্টি করল বা স্টার্ট বন্ধ হয়ে দাঁড়িয়েই গেল, সঙ্গে সঙ্গে তা দেখা হবে, জানা যাবে, এবং ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স, জরুরি সেবাদানকারী গাড়ি ছুটে যাবে। সেতু কর্তৃপক্ষ কোনো একটা লেন বন্ধ করে দিতে পারে। সমস্যা হলে কোনো একমুখী পথও বন্ধ করে দেওয়া যেতে পারে। হেঁটে কেউ পদ্মা সেতু পার হতে পারবে না। কিন্তু মেরামত বা তদারকের জন্য রেললাইনের পাশ দিয়েও চলাচলের ব্যবস্থা থাকবে। মাঝেমধ্যেই পিলার বা পিয়ার থেকে সিঁড়ি থাকছে সেতুতে ওঠার।