মায়ের ডাকে ঘুম থেকে উঠল আকিরো। স্কুলের জন্য চটপট তৈরি হয়ে বাসে উঠে পড়ল। স্কুলে বিশেষ ড্রিল ক্লাস আছে আজ। উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক। স্যার ঢোকার কয়েক সেকেন্ড আগে ক্লাসে ঢুকল আকিরো। হঠাৎ স্কুলের অ্যালার্ম বেজে উঠল। কাঁধের ব্যাগ হাতে নিয়ে ক্লাসের বেঞ্চগুলোর নিচে বসে পড়ল সবাই। আর মাথার ওপরে হাত দিয়ে চেপে রাখল ব্যাগ। কেউ কেউ বড় জায়গা নিল পিলারের নিচে। কিন্তু আসলে কিসের প্রস্তুতি চলছে?
ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ জাপান। জাপানে প্রতিবছরই সুনামি ও ভূমিকম্প আঘাত হানে। এ জন্য স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীদের ভূমিকম্পকালে করণীয় কাজগুলো শেখানো হয়। যেহেতু দ্বীপদেশ জাপানে প্রতিবছর এক হাজারের বেশি ভূমিকম্প আঘাত হানে, এ জন্য এই প্রস্তুতি তো দরকারই।
জাপান সিংকস: ২০২০ মুভিটির প্রথম দৃশ্যও এমন। প্রায়ই ভূমিকম্প দেখে অভ্যস্ত মানুষ যখন ভূমিকম্প দেখে, তখন বেশ শান্তই ছিল। প্রায়ই তো এমন হয়—ব্যাপারটা এমন বলতে পারো। মাসাকি ইউয়াসার ১০ পর্বের অ্যানিমে সিরিজটি ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত একই নামের উপন্যাস থেকে তৈরি। উপন্যাসটি লিখেছিলেন সাকিয়ো কোমাতসু।
মুভিতে ভূমিকম্পবিধ্বস্ত দেশের মধ্যবিত্ত এক পরিবারের সদস্যদের টিকে থাকার গল্প ফুটে উঠেছে। সিরিজের প্রথম ১০ মিনিটেই দেখতে পাবে বিশাল বিশাল বিল্ডিং ভেঙে পড়ছে। উড়ন্ত একটি বিমান পানির মধ্যে পড়ে যাচ্ছে। মর্মান্তিক এই দৃশ্যগুলো মনকে নাড়া দেবেই। কিন্তু করোনাভাইরাসের এই মহামারির মধ্যে এ ধরনের সিরিজ মুক্তি দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত? তবে সর্বশেষ এক গবেষণা বলছে, এ ধরনের মুভি মানুষকে বাস্তব সমস্যা মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। কন্ট্যাজিওন–এর কথা তো বলতেই হয়, এই মহামারির শুরুতে সেটিই ছিল অনলাইনে সবচেয়ে বেশিবার দেখা মুভি।
উপন্যাসে মূলত দেখানো হয় যে বিজ্ঞানী ও রাজনীতিবিদেরা জাপানকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু সিরিজে সম্পূর্ণ কেন্দ্রীভূত থাকে একটি পরিবার। টোকিও থেকে উঁচু ভূমিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে পরিবারটি। জাপান ডুবে যাবে যেকোনো সময়, উঁচু ভূমিতে পৌঁছাতে পারলে হয়তো সবাই বেঁচে যাবে।
ধীরে ধীরে দেখা যায় জাপান ডুবে যাওয়ার চেয়েও বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া। পরিবারটি এই দুর্যোগ থেকে বাঁচতে পারবে কি না, সেই প্রশ্ন তো আছেই, তার চেয়ে বড় প্রশ্ন হলো জাপান কি তাহলে পানিতে তলিয়ে যাবে?
জানতে হলে দেখে নিতে পারো ৯ আগস্ট মুক্তি পাওয়া নেটফ্লিক্সের জাপান সিংকস: ২০২০ সিরিজটি।