প্রথম কোনো কিছুর অনুভূতি সব সময়ই আলাদা। কারণ, প্রথম সব সময়ই প্রথম হয়। প্রথমের মজা শুধু প্রথমেই পাওয়া যায়।
সবচেয়ে লোভনীয় প্রথম আমার কাছে, প্রথম ছাপার অক্ষরে নাম দেখতে পাওয়া। ক্লাস ফাইভে থাকতে স্কুল ম্যাগাজিনে একবার আঁকা, কবিতা, ছড়া চাইল। যদিও জানতাম, আহামরি কিছু আঁকি না আমি। পরের দিন কাউকে না জানিয়ে দুরু দুরু বুকে স্যারের কাছে গিয়ে বললাম, ‘স্যার, আমি একটা ইয়ে, মানে ইয়ে...’
স্যার বিরক্ত হয়ে বললেন, ‘কী ইয়ে ইয়ে করছিস!’
‘না মানে আমি আঁকা জমা দিতে এসেছি।’
‘ও আচ্ছা, দে।’
আমি স্যারের হাতে আঁকা ধরিয়ে দিয়েই দৌড়।
এরপর ভুলেই গিয়েছিলাম আমি আঁকাও জমা দিয়েছি। ম্যাগাজিন যখন পেলাম, নেড়েচেড়ে দেখছি। হঠাৎ আঁকার পাতায় দেখি আমার ছবি। আমি যারপরনাই অবাক। আমার ছবি এল কোত্থেকে? তারপর আর পাতা ওল্টানো হয়নি ম্যাগাজিনের। আনন্দে ঘুরেফিরে নিজের নামই দেখতাম একটু পরপর। বাসায় এসে যখন মাকে দেখলাম, মা তো আমার চেয়েও কয়েক গুণ বেশি খুশি। ছাপার অক্ষরে ছোট একটু নাম কেউ হয়তো খুঁজে দেখবে না। কিন্তু মনে হলো বিশ্বজুড়ে রটে গেল নামটা। একটা গা-গরম ব্যাপার চলে আসে, এই ব্যাপারটার জন্যই লেখা-আঁকা বাদ পড়লেও খারাপ লাগে না।
ছাপার অক্ষরে নাম দেখা একটা লোভনীয় নেশা। প্রথমবার কাউকে ছুঁয়ে গেলে ছাড়ে না। শুধু ছোট করে লেখা নাম দেয় অদ্ভুত এক শান্তি।