‘না, আমি বেশি মনে রাখতে পারি’, ‘না না না আমি বেশি মনে রাখতে পারি’ এভাবেই সেদিন আমার আর অন্তরার মধ্যে ঝগড়া লেগে পড়ে। তখন আমরা দুজনই পঞ্চম শ্রেণিতে পড়তাম, ঝগড়ার একপর্যায়ে অন্তরা আমাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল। চ্যালেঞ্জটা এমন, এ মাসে যে কিআটা বের হয়েছে সেটা দুই ঘণ্টার ভেতরে পড়ে শেষ করতে হবে এবং কিআ না দেখে তার ভেতরে কী লেখা আছে, তা বলতে হবে। হুবহু বলতে না পারলেও কিছুটা হলেও সে সম্পর্কে বলতে হবে। তাহলেই বোঝা যাবে কে কম সময়ে পড়ে বেশি সময় ধরে মনে রাখতে পারে। আর এই চ্যালেঞ্জে যে হারবে তাকে আগামী এক বছরের কিআ কিনে দিতে হবে। আমি তখন গাধার মতো বললাম কিআ আবার কী? অন্তরা জ্ঞানীর মতো ভাব ধরে বলল, কিশোর আলোকে সংক্ষিপ্ত করে কিআ বলা হয়। কিআ হচ্ছে একধরনের মাসিক ম্যাগাজিন, যেখানে নানা রকমের গল্প–উপন্যাসের পাশাপাশি আরও অনেক কিছু থাকে। আমি বললাম, এই ম্যাগাজিনটার দাম কত? সে বলল, ৫০ টাকা। এখানে আমি পড়ে গেলাম চিন্তায়, কারণ আমিই একমাত্র দুর্লভ গাধা ছিলাম যে তখন পর্যন্ত কোনো গল্প–উপন্যাসের বই কিংবা ম্যাগাজিন পড়িনি, শুধু পড়েছি পাঠ্যবই। কী জানি কেমন হবে কিআ?
কিন্তু চ্যালেঞ্জ যখন দিয়েই দিয়েছে, পিছু হটা তো আর যায় না। তাই আমিও তখন বলে দিলাম চ্যালেঞ্জ অ্যাকসেপ্টেড। তো শুরু হয়ে গেল আমাদের প্রতিযোগিতা। তখন সেখানে আমাদের কিছু বন্ধু উপস্থিত ছিল। তাদের মধ্যে জ্ঞানী ফারাহ বিচারক হিসেবে কাজ করল। আমি কিআটা হাতে পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে উল্টেপাল্টে দেখে নিলাম। মনটা পুরোই আনন্দিত হয়ে উঠল। বইয়ের ভেতরে কত মজার মজার গল্প–উপন্যাস আর ছড়া। আরও কত কী। আর তার পাশে নানা রকমের রঙিন ছবি ছাপানো। দেখে মনটা রঙিন হয়ে উঠল। তারপর শুরু করলাম বই পড়া। এভাবে কখন যে দুই ঘণ্টা শেষ হয়ে গেল টেরই পেলাম না। তারপর দুজনের কিআ জমা দিলাম ফারার কাছে। প্রথমে বলা শুরু করল অন্তরা। সে প্রায় হুবহু বলল। তারপর বললাম আমি। এখন সময় এসেছে ফলাফল জানানোর। আমি আর অন্তরা প্রায় একই রকম বলেছিলাম, তাই আমাদের হার–জিত হিসাব করা হলো সময় দিয়ে। আমরা যখন বলছিলাম, তখন আমাদের বলার সময় রেকর্ড করা হয়েছিল। ফারাহ বলল, অন্তরার বলতে সময় লেগেছে ৫১ মিনিট ২০ সেকেন্ড আর আমার বলতে সময় লেগেছে ৫১ মিনিট ৫২ সেকেন্ড। সেদিন সবাই জেনেছিল আমি অন্তরার কাছে হেরে গিয়েছি। সে জন্য অনেকে অনেক কটূক্তি করেছে। তবে সে কটূক্তি আমার হৃদয়ে আঘাত হানতে পারেনি। কারণ, আমি জানি আমি সেদিন বিজয়ী হয়েছিলাম। সেদিন কিআ পড়ার কারণে আমার কিআ আর গল্প-উপন্যাসের প্রতি আগ্রহ বেড়ে যায়। আর তারপর থেকে সেই আগ্রহের টানে পড়ে ফেলি অসংখ্য গল্প–উপন্যাসের বই। সেদিনের পর থেকে শর্ত পূরণের জন্য অন্তরাকেও কিআ কিনে দিই আর আমার নিজের জন্যও কিআ কিনি। এখন পর্যন্ত আমার কাছে ৪৪টি কিআর সংখ্যা আছে। এখন পর্যন্ত কিআ আর আমি একসঙ্গে পার করেছি ৪ বছর। ধন্যবাদ কিআ, প্রতি সংখ্যায় আমাকে এত সুন্দর অনুভূতি দেওয়ার জন্য। আর জন্মদিনে তোমাকে অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সুখে–দুঃখে সব সময় পাশে থেকো আমাদের।