চন্দ্র থেকে চন্দ আর চাঁদের কাহিনি

সে অনেক কাল আগের কথা। তখন পৃথিবীতে বাস করত ‘ভাষা’ নামের এক মিষ্টি মেয়ে। তখন তার বয়স ছিল খুবই অল্প। আস্তে আস্তে সে পৃথিবীর বুকে বেড়ে উঠতে লাগল। একসময় পুরো পৃথিবী তার রাজত্বে পরিণত হলো। তারও অনেক পরে ‘ভাষা’ মায়ের তিন মেয়ে সংস্কৃত, প্রাকৃত ও বাংলা পৃথিবীতে এল। সংস্কৃত মায়ের বড় মেয়ে হওয়ায় চলত আলাদা ভাবগাম্ভীর্য নিয়ে আর সঙ্গে থাকত মেজো বোন প্রাকৃত আর ছোট বোন বাংলা। একদিন রাতের বেলা আকাশে তিন বোন গোলাকার একটা উজ্জ্বল বস্তু দেখতে পেল। পরে মায়ের কাছ থেকে জানতে পারল যে ওটা হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ। তিন বোনই উপগ্রহটাকে খুব পছন্দ করত। এক রাতে সংস্কৃত ঠিক করল সে উপগ্রহটার একটা সুন্দর নাম দেবে। অনেক ভেবেচিন্তে সে উপগ্রহটার নাম দিল চন্দ্র। নাম দিতে পেরে সে তো মহাখুশি। এভাবে দিনের পর দিন কেটে যেতে লাগল। হঠাৎ একদিন বেঁকে বসল প্রাকৃত। সে বলল, চন্দ্র নামটা নাকি মানানসই নয়। তা ছাড়া এর উচ্চারণটাও যেন কেমন! তাই সে ঠিক করল চন্দ্রের বদলে এখন থেকে এর নাম হবে চন্দ। কিন্তু এ কথা কিছুতেই মানতে রাজি নয় সংস্কৃত। এ নিয়ে দুবোনের মাঝে তুমুল তর্কবিতর্ক হলো। শেষে উভয়ই সিদ্ধান্ত নিল যে তারা আলাদাভাবে বসবাস করবে। ব্যস, যেই কথা সেই কাজ। আলাদা হয়ে গেল দুবোন। মাঝখান থেকে একা হয়ে পড়ল বাংলা। এভাবে একা একা তিন বোনের দিন কাটতে লাগল। বাংলা মায়ের ঘরে একসময় এল দুই মেয়ে সাধু ও চলিত। সাধু ও চলিত তাদের মাকে খুবই ভালোবাসত। আবার সাধু তার সংস্কৃত খালাকে খুবই পছন্দ করত আর প্রাকৃত খালাকে দুচক্ষে দেখতে পারত না। অন্যদিকে চলিত ছিল তার সম্পূর্ণ উল্টো। তাই সাধু উপগ্রহটিকে ডাকত চন্দ্র আর চলিত ডাকত চন্দ বলে। মা বাংলা তাদের মধ্যে সম্ভাব্য বিবাদ মেটানোর জন্য একদিন তাদের ডেকে বললেন যে আজ থেকে চন্দ্রও নয় চন্দও নয় বরং নতুন নাম হবে চাঁদ। চলিত তার মায়ের আদেশ মেনে নিল। কিন্তু সাধু মেনে নিল না। ফলে মা ক্ষুব্ধ হয়ে সাধুকে শাপ দিলেন যে তার বংশধরদের অস্তিত্ব পৃথিবীতে বেশি দিন থাকবে না। বাস্তবেও তাই হয়ে গেল। আর চলিত শাসন করতে লাগল তার বাংলা মায়ের রাজত্ব। চলিত মায়ের খুবই ইচ্ছা ছিল ওই চাঁদে কী আছে তা দেখার! কিন্তু তার সে ইচ্ছা আর পূর্ণ হয়নি। কিন্তু তাতে কী হয়েছে, চলিত মা তার ইচ্ছার বীজ বুনে দিয়েছেন তাঁর প্রতিটি বংশধরের নিউরনে। হয়তোবা কোনো এক কালে কোনো চলিত মায়ের সন্তানের পদচিহ্ন পড়বে চাঁদে। আর সেই চাঁদের বুক চিরে লেখা থাকবে—‘চন্দ্র হতে চন্দ আর চাঁদের কাহিনি’।