সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত কোথায় হয়?
কিশোর আলোর মজার প্রশ্ন ভাইরাল, সংবাদ হলো এপার-ওপার দুই বাংলায়
বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত মাসিক কিশোর ম্যাগাজিন কিশোর আলোর জুন ২০২১ সংখ্যায় প্রকাশিত এক মজার প্রশ্নের উত্তর নিয়ে মেতে উঠেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরা। বাংলাদেশ পেরিয়ে প্রশ্নটি ভাইরাল হয়েছে ভারতেও। তারপর রীতিমতো সংবাদে পরিণত হয়েছে দুই বাংলার শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যমগুলোতেও!
৫ জুন প্রকাশিত কিশোর আলোর ৯০ তম সংখ্যায় ‘বুদ্ধির ঝিলিক’ বিভাগে ৬টি মজার প্রশ্ন প্রকাশিত হয়। যার একটি হলো, ‘সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত কোথায় হয়?’ উত্তর হিসেবে চারটি বিকল্প ছিল এতে। সেগুলো হলো: ক. ভারতীয় সিরিয়ালে, খ. গুলিস্তানে, গ. রাজশাহীতে এবং ঘ. ওপরের কোনোটিই নয়।
৭ জুন কিশোর আলোর পাঠক ইশরাতুল সাইমা ছাপা হওয়া এই প্রশ্নটির ছবি তুলে ম্যাগাজিনটির অফিশিয়াল ফেসবুক গ্রুপে পোস্ট করে। আর তারপরই তা ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুকের বিভিন্ন গ্রুপ ও পেজে। বাংলাদেশের ফেসবুক পেজ ও গ্রুপগুলো থেকে সেটি চলে যায় পশ্চিম বঙ্গের বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে। সেখানকার শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রশ্নটি নিয়ে রীতিমতো প্রতিবেদন ছাপা হয়। আনন্দবাজারের শিরোনাম ছিল: ‘Viral: সবচেয়ে বেশি বজ্রপাত কোথায় হয়? সমীক্ষায় উত্তর এল, ভারতীয় ধারাবাহিকে’। আনন্দবাজার অবশ্য এটিকে কোনো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ভেবেছে। প্রতিবেদনে তারা লিখেছে: ‘প্রশ্নপত্রের নিয়ম অনুযায়ী বিকল্প উত্তরগুলির মধ্যে পরীক্ষার্থীদের বেছে নিতে হবে সঠিক উত্তরটি। কিন্তু পরীক্ষার এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পারলেন না নেটাগরিকদের একাংশ। যাঁরা বেছে নিয়েছেন ‘ভারতীয় ধারাবাহিকে’ উত্তরটি। নেটমাধ্যমের সমীক্ষায় শীর্ষ স্থান পেল প্রথম উত্তরটি।‘
শুধু তা-ই নয়, মজার ছলে এই প্রতিবেদন করলেও এ বিষয়ে আনন্দবাজার সিরিয়াল-সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য নিতে ভোলেনি। জনপ্রিয় ধারাবাহিক ‘করুণাময়ী রাণী রাসমণি’র পরিচালক রুপক দের একটি বক্তব্যও প্রকাশ করে তারা। রুপক দের মতে, ‘গল্পের নাটকীয়তা বাড়লেই বজ্রপাতের মতো আবহ শোনা যায়। এ ছাড়া মনঃসংযোগ বৃদ্ধি করতে এমন শব্দের প্রয়োগ হয়।’ এ ছাড়া তিনি মনে করেন, বাংলা ধারাবাহিকে নয়, বরং হিন্দি ধারাবাহিকে বজ্রপাতের আবহ বেশি ব্যবহৃত হয়।’ রূপক দে আরও বলেন, ‘ভারতীয় টেলিভিশনে যদি নেটফ্লিক্সের মতো কাজ দেখানো হয়, তবে ভারতীয় সমাজ ও সংস্কৃতি সেই কাজের স্বীকৃতি দেবে না।‘
পাঠকদের বিনোদন দিতে আমরা প্রায়ই এ রকম মজার কুইজ আয়োজন করে থাকি। অতীতেও প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিন আলপিন ও রস+আলোতে এ রকম প্রশ্ন ছাপা হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বকাপের সময় ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ প্রশ্ন’ শিরোনামে ছাপা হওয়া কুইজগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। কিশোর আলোতেও মাঝে মাঝে এমন কুইজ আয়োজন করা হয়। এ প্রশ্নটিও তেমনই একটি বিভাগের। পাঠকেরা এ ধরনের প্রশ্নে আনন্দ পায়, আবার সঠিক উত্তরও পাঠায়।
আনন্দবাজারের এ প্রতিবেদনের পর বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় অনলাইন সংবাদমাধ্যমগুলোও এ বিষয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। বেশিরভাগ সংবাদমাধ্যম প্রায় হুবহু আনন্দবাজারের প্রতিবেদনটিই নিজেদের মতো করে প্রকাশ করে। একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যম অবশ্য আরও এক ধাপ এগিয়ে। তারা লিখেছে: ‘প্রশ্নের ধরন দেখে ধারণা করা হচ্ছে, ভাইরাল হওয়া অদ্ভুত এই এমসিকিউ বাংলাদেশের কোনও পরীক্ষার। তবে সেটি কোন ক্লাস বা পরীক্ষার, নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’
তবে এত আলোচনা যে প্রশ্নটি নিয়ে, সেটি আসলে কেন করা হয়েছিল? জানতে চাইলে কিশোর আলোর সহকারী সম্পাদক পাভেল মহিতুল আলম বলেন, “পাঠকদের বিনোদন দিতে আমরা প্রায়ই এ রকম মজার কুইজ আয়োজন করে থাকি। অতীতেও প্রথম আলোর ফান ম্যাগাজিন আলপিন ও রস+আলোতে এ রকম প্রশ্ন ছাপা হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বকাপের সময় ‘পৃথিবীর সবচেয়ে সহজ প্রশ্ন’ শিরোনামে ছাপা হওয়া কুইজগুলো ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। কিশোর আলোতেও মাঝে মাঝে এমন কুইজ আয়োজন করা হয়। এ প্রশ্নটিও তেমনই একটি বিভাগের। পাঠকেরা এ ধরনের প্রশ্নে আনন্দ পায়, আবার সঠিক উত্তরও পাঠায়।”
উল্লেখ্য, ভাইরাল হওয়া এই প্রশ্নটি কিশোর আলোর ‘বুদ্ধির ঝিলিক’ বিভাগে প্রকাশিত হয়। প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের সৌজন্যে প্রকাশিত এই বিভাগে পাঠকেরা প্রতি মাসেই স্বতস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে বলে জানান কিশোর আলোর আরেক সহকারী সম্পাদক আদনান মুকিত।
তবে আলোচিত এই প্রশ্নটির সঠিক উত্তর আসলে কী? আদনান মুকিত অবশ্য সে উত্তরটা দিলেন না। বললেন, ‘উত্তরটি জানতে অপেক্ষা করতে কিশোর আলোর জুলাই সংখ্যা পর্যন্ত!’
কিশোর আলোর ঠিকানায় এই বিভাগের সঠিক উত্তর পাঠিয়ে পুরস্কার জিতে নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে। উত্তর পাঠানোর নিয়মাবলি পাওয়া যাবে এই লিংকে।