কাজী নজরুল ইসলামের মজার ঘটনা
কাজী নজরুল ইসলাম (১৮৯৯-১৯৭৬) বাংলাদেশের জাতীয় কবি এবং অবিভক্ত বাংলার সাহিত্য, সমাজ ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে অন্যতম শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্ব। তাঁর জন্ম পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে ও মৃত্যু বাংলাদেশের ঢাকায়। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে তিনি ‘বিদ্রোহী কবি’ এবং আধুনিক বাংলা গানের জগতে ‘বুলবুল’ নামে খ্যাত। তাঁর দুটি ঐতিহাসিক ও বৈপ্লবিক সৃষ্টিকর্ম হচ্ছে ‘বিদ্রোহী’ কবিতা ও ‘ভাঙার গান’ সংগীত। তাঁর উল্লেখযোগ্য কবিতা ও গানের বই হচ্ছে: অগ্নিবীণা, বিষের বাঁশি, ছায়ানট, সঞ্চিতা, বুলবুল, জিঞ্জির, সিন্ধু-হিল্লোল ইত্যাদি। এ ছাড়া তিনি বেশ কটি উপন্যাস ও নাটক লিখে গেছেন।
নজরুল তখন গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে সংযুক্ত। একদিন তিনি ওই কোম্পানির অফিসের দোতলায় অবস্থান করছিলেন, এমন সময় তৎকালীন বিখ্যাত গায়িকা ইন্দুবালা দেবী নিচের তলায় এসে উপস্থিত হলেন। কাজী সাহেব দোতলায় অবস্থান করছেন জানতে পেরে ইন্দুবালা দেবী তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চাইলে কে একজন তাঁকে ডাকতে দোতলায় এলেন।
সেই ব্যক্তি দোতলায় এসে কাজী সাহেবকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘কাজীদা, ইন্দুদি আপনাকে নিচে ডাকছেন।’ কাজী সাহেব সঙ্গে সঙ্গে সহাস্যে বলে উঠলেন, ‘আর কত নিচে নামব, ভাই?’
২.
কবি সুফিয়া কামাল তখন স্বামীর সঙ্গে কলকাতায় বাস করতেন। সে সময়ে কাজী নজরুল ইসলাম প্রায়ই সুফিয়া কামালের বাড়িতে বেড়াতে যেতেন। সুফিয়া কামাল তাঁকে নাকি ‘দাদু’ বলে ডাকতেন। এক কবির প্রতি আরেক কবির অন্তরের টান থাকাটাই স্বাভাবিক।
সে সময়ে নজরুলের পেছনে গোয়েন্দা লাগানো ছিল। তিনি কবি সুফিয়া কামালের বাড়িতে গেলে সেখানে গানের আসর বসত এবং সে আসরে পাড়ার অনেকেই এসে উপস্থিত হতেন। কয়েকজন গোয়েন্দাও এঁদের সঙ্গে মিশে যেতেন। তো একদিন এক ভদ্রলোকের মুখের ওপর বিদ্রোহী কবি কবিতা আওড়ালেন—
‘তুমি টিকটিকি, জানি ঠিকঠিকই।’ তক্ষুনি লোকটি রক্তরাঙা মুখে সে স্থান পরিত্যাগ করতেই কবি সুফিয়া কামাল জিজ্ঞেস করে বসলেন, ‘কী করে তুমি চিনলে দাদু?’
‘গায়ের গন্ধে। বড় কুটুম্ব যে!’ বিদ্রোহী কবি হেসে জবাব দিলেন।