এবার অসাধারণ একটি ‘ক্লোজআপ ম্যাজিক’ শিখিয়ে দেব। এটি একদিকে যেমন চ্যালেঞ্জিং, অন্যদিকে দর্শকের আকর্ষণ বাড়ানোর জন্য ম্যাজিশিয়ান সত্যিকার ৬০০ টাকা পুরস্কার হিসেবে সামনে এগিয়ে দেবেন। দর্শক চ্যালেঞ্জ জিতলে ওই টাকা পেয়ে যাবেন। বুঝতেই পারছ। ম্যাজিকটিতে যেমন রয়েছে বিস্ময়, তেমনি রয়েছে চ্যালেঞ্জ জয়ের উত্তেজনা। এবং জিতে গেলে টাকা পাওয়ার আনন্দ। আর টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে সব দর্শকের মধ্যে একধরনের টান টান উত্তেজনা কাজ করে। ম্যাজিকটির আকর্ষণ বেড়ে যায় বহুগুণ।
দর্শকেরা যা দেখবেন
ম্যাজিশিয়ান দর্শকদের মধ্য থেকে যেকোনো একজন আকর্ষণীয় দর্শককে তাঁর সামনের চেয়ারে বসতে বললেন। এ ক্ষেত্রে আমি কোনো মেয়ে দর্শকের অংশগ্রহণ বেশি পছন্দ করি। কারণ, মেয়েরা যথেষ্ট বুদ্ধিদীপ্ত কিন্তু কোনো চ্যালেঞ্জের সামনে ভব্যতা হারায় না। উল্টাপাল্টা আচরণ করে না। কিন্তু দু-একজন ছেলে কখনো কখনো একটু মাত্রাতিরিক্ত করে ফেলে। বিশেষ করে তারা যদি কম বয়সী ম্যাজিশিয়ানকে বাগে পায়, তাহলে দর্শক হিসেবে একটু বেশি বাহাদুরি দেখাতে চেষ্টা করে। এ অবস্থায় অভিজ্ঞ ম্যাজিশিয়ান তাঁর দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতার ভান্ডার থেকে বিবিধ রতন বের করে পরিস্থিতিকে অনেক বেশি মজাদার করতে পারেন। নতুনেরা হয়তো তা না-ও পারতে পারে।
ম্যাজিশিয়ান এখন একটা চেয়ারে দর্শকের মুখোমুখি বসেছেন। তাঁর সামনে ছোট্ট একটা টেবিল। দর্শকের মধ্য থেকে আসা ভলান্টিয়ার দর্শকটি অন্য দর্শকদের দিকে পেছন দিয়ে তাঁর জন্য রাখা চেয়ারে বসে পড়লেন। চেয়ার দুটো যত ছোট হবে, ততই ভালো। ছোট টুল হলে আরও বেশি ভালো। ম্যাজিশিয়ান তাঁর পকেট থেকে ছয়টা ১০০ টাকার নোট বের করে তিনখানা নোট দর্শকের দিকে ঠেলে রাখলেন। বাকি তিনখানা নিজের দিকে রেখে দিলেন। তবে প্রথম দিকে কয়েক দিন ১০ টাকার নোট দিয়ে করা ভালো। আত্মবিশ্বাস তৈরি হওয়ার পরে ১০০ টাকার নোট বা হাজার টাকার নোট ব্যবহার করা যাবে। টাকার মূল্য যত বাড়াতে পারবেন দর্শকের দৃষ্টি তত বেশি আকর্ষণ করতে পারবেন।
এবার পকেট থেকে একটা ছোট্ট চকলেট ক্যান্ডি বের করে ম্যাজিশিয়ান টেবিলে রাখলেন। আস্তিন গুটিয়ে সবাইকে ক্যান্ডিটি দেখিয়ে বলে নিলেন, ‘আমি এই চকলেট ক্যান্ডিটি সবার চোখের আড়ালে আমার দুই হাতের যেকোনো একটির মুঠে লুকিয়ে রাখব। মুঠ দুটি আপনার সামনে আনব। আপনি আপনার স্বতঃস্ফূর্ত অনুভূতি দিয়ে বলে দেবেন, ক্যান্ডিটা কোন হাতের মুঠোয় লুকানো। যদি আপনার অনুমান সঠিক হয় তাহলে আপনি আমার টাকা থেকে ১০০ টাকার একটা নোট পুরস্কার হিসেবে নিয়ে আপনার ৩০০ টাকার অংশে রেখে দেবেন। অর্থাত্ আপনার হয়ে যাবে ৪০০ টাকা। আর আপনার অনুমান ভুল হলে আমি আপনার ভাগ থেকে ১০০ টাকা এনে আমার ভাগে রেখে দেব। খেলা হবে তিন রাউন্ড। শেষ রাউন্ডে যিনি জিতবেন, তিনি সব টাকা পেয়ে যাবেন।
‘কী, খেলার নিয়ম পরিষ্কার?’
‘জি, পরিষ্কার।’ দর্শকের উত্তর।
শুরু হলো খেলা। দুই হাত নিজের পিছে নিয়ে ম্যাজিশিয়ান দু-একবার এমনভাবে হাত বদল করলেন যেন দর্শক আন্দাজ করতে না পারে হাতের কোন মুঠোয় ক্যান্ডিটি রাখা আছে। মুঠ দুটো সামনে এনে প্রশ্ন করা হলো, ‘বলুন, কোন হাতের মধ্যে ক্যান্ডিটি আছে!’
দর্শক যে হাত দেখিয়ে দিলেন, ম্যাজিশিয়ান সেই হাত খুললেন। যদি দর্শকের আন্দাজ সঠিক হয়, তাহলে ম্যাজিশিয়ান খুশি হয়ে ক্যান্ডিটি টেবিলে ‘টপ’ করে ফেলেই হাততালি দিলেন এবং দ্রুত নিজের ভাগ থেকে ১০০ টাকার একটা নোট সবাইকে দেখিয়ে দর্শকের ভাগে ফেলে দিলেন। দর্শক ইতিমধ্যে খুশি হয়ে হাততালি দিতে শুরু করেছেন।
এবার দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা। ম্যাজিশিয়ান আবার আগের মতো হাত পিছে নিয়ে ক্যান্ডিটি দু-তিনবার হাতবদল করে হাত মুঠ করে দর্শকের সামনে এনে আবার প্রশ্ন করলেন, ‘কোন হাতে ক্যান্ডি?’ দর্শক তাঁর পছন্দের হাতটি দেখানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই হাত খুলে দেখিয়ে দিলেন, এবারও দর্শক জিতে গেছেন। সব দর্শক তখন আরও খুশি। ম্যাজিশিয়ান কিছুটা মুখ মলিন করে আরও একটা নোট উঁচু করে তুলে নিজের ভাগ থেকে দর্শকের ভাগে ড্রপ করলেন। তালি বেড়েই চলল। ম্যাজিশিয়ান বলছেন, ‘আমি আসলে একটা বোকা ম্যাজিশিয়ান। আমার কাছে এখন মাত্র ১০০ টাকা, আর ওনার ৫০০ টাকা। অথচ শুরুর পার্টনারশিপে বড় বোকামি আমিই করেছি। আমার একার ৬০০ টাকা মূলধন দিয়ে ওনাকে সমান ভাগের পার্টনার নিয়েছি। ঠিক আছে, এবার শেষ ঢিল। উনি (দর্শক) যদি এবারও জিতে যান তাহলে সব টাকা অর্থাত্ ৬০০ টাকাই ওনার হবে। আর উনি যদি হেরে যান তাহলে সব টাকা আমার হবে।
‘ঠিক আছে?’
‘ঠিক আছে।’
এবার ম্যাজিশিয়ান শেষবারের মতো চকলেট ক্যান্ডিটাকে শরীরের পিছে নিয়ে কয়েকবার এ হাত-ও হাত বদলাবদলি করে মুঠ দুটো সামনে এনে জিজ্ঞেস করলেন, ‘বলুন, ক্যান্ডিটা কোন হাতে।’ দর্শক একটা হাত দেখিয়ে দিলেন। ম্যাজিশিয়ান জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনি কি নিশ্চিত?’ দর্শক বললেন, ‘হ্যাঁ, আমি নিশ্চিত।’
যে হাতে ক্যান্ডি আছে বলে দর্শক নিশ্চয়তা দিচ্ছিলেন, সেই হাত পরিষ্কার খুলে ফাঁকা দেখিয়েই দর্শকের দিকের ৫০০ টাকা নিজের দিকে টেনে এনে নিজের ১০০ টাকাসহ পুরোটা দ্রুত নিজের পকেটে ঢুকিয়ে ফেলবেন। অন্য হাতের মুঠোয় ক্যান্ডিসহ বিপরীত পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে দাঁড়িয়ে সমাপ্তির ভঙ্গি করবেন। দর্শকেরাও একটা নাটকীয় ম্যাজিক দেখে জোরে হাততালি দেবেন। ম্যাজিশিয়ান দর্শক-ভলান্টিয়ারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিদায় জানানোর সময় পকেট থেকে চকলেট ক্যান্ডিটা স্যুভেনির হিসেবে দিয়ে ম্যাজিকটি শেষ করবেন।
ম্যাজিকটি করতে যা যা দরকার হবে
ছয়টা ১০০ টাকার নোট। (জোগাড় করতে অসুবিধা হলে ছয়টা ১০ টাকার নোট হলেও চলবে।)
চারটা প্রায় ইরেজার সাইজের চকলেট ক্যান্ডি। তবে এই ক্যান্ডির বাইরে যেন সুন্দর করে কভার করা থাকে। পাতলা সেলোফেনে মোড়া সস্তা ক্যান্ডি খচমচ শব্দ করলে ম্যাজিশিয়ানের বিপদ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে সরাসরি চারটা ইরেজার ব্যবহার করলে সবকিছু সহজ হয়ে যায়।
ম্যাজিশিয়ানকে বসতে হবে রুমের কোনার দিকে পেছন ঘুরে। যেন ম্যাজিকটি দেখানোর সময় সরাসরি পেছনে গিয়ে কেউ রহস্যটা দেখতে না পায়।
ম্যাজিক শুরু করার আগে গোপনে একটা ক্যান্ডি বা ইরেজার ছবির মতো মেরুদণ্ডের পিছে প্যান্টের কোমরের আড়ালে লুকিয়ে রাখতে হবে। আধা ইঞ্চি গভীরে রাখলেই তা আর দর্শকের চোখে পড়বে না। (ছবি দেখলেই বোঝা যাবে।) আর বাকি তিনটা ক্যান্ডি (বা ইরেজার) দুই পাশের দুই পকেটে রাখা থাকবে।
কী করতে হবে
ক. পকেট থেকে ছয়খানা নোট এবং একটা ক্যান্ডি (বা ইরেজার) বের করে টেবিলে রাখো। নোট ছয়টার অর্ধেক অর্থাত্ তিনটা দর্শক ভলান্টিয়ারের দিকে ঠেলে দাও। বাকি তিনটা নিজের দিকে টেনে রাখো। দর্শক যেন সব সময় টাকাগুলো টেবিলের ওপর দেখতে পান।
খ. দর্শক যা দেখতে পাবেন না তা হলো পিঠের দিকে গোপনে লুকিয়ে রাখা একটা ক্যান্ডি (বা ইরেজার) এবং আরও দুটো ক্যান্ডি (বা ইরেজার) পকেটের মধ্যে চোখের আড়ালে থাকা এই তিনটা ছাড়া চতুর্থ ক্যান্ডিটা পকেট থেকে তুলে ম্যাজিক শুরু করবে। দর্শক ভাববেন, তুমি একটাই মাত্র ক্যান্ডি নিয়ে খেলছ।
উপস্থাপনা
প্রথম রাউন্ড খেলার সময় কোনো কৌশল করার দরকার নেই। দর্শকের সামনের ক্যান্ডিটিই পিঠের দিকে নিয়ে আড়ালে হাতবদলের অভিনয় করবে। মুঠ দুটো সামনে এনে জিজ্ঞেস করবে, ‘বলুন, কোন হাতে ক্যান্ডিটা আছে। দর্শকের আন্দাজ ঠিক হলে তোমার টাকার ভাগ থেকে একটা নোট উঁচু করে তুলে দর্শকের ভাগে ড্রপ করো। ক্যান্ডিটি টেবিলে রেখে সবাইকে দেখিয়ে দুই হাতে তালি বাজাও। স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রমাণিত হলো তুমি মাত্র একটাই ক্যান্ডি নিয়ে খেলছ। কোনো কৌশলের আশ্রয় নাওনি। বিপরীতভাবে দর্শক যদি ভুল হাত দেখিয়ে দেন, তখনো তুমি একইভাবে হাততালি দিয়ে তাঁর ভাগের একটা নোট তুলে এনে নিজের ভাগে ড্রপ করবে।
এবার দ্বিতীয় রাউন্ড। ক্যান্ডিটা পিছে নিয়ে হাত বদলাবদলি করার অভিনয় করার সময় প্যান্টের বেল্টের আড়ালে লুকানো ক্যান্ডিটা খালি হাতে তুলে উভয় হাতের মুঠ সামনে এনে জিজ্ঞেস করবে, ‘এবার কোন হাতে?’
দর্শক যে হাতেই তর্জনী নির্দেশ করবেন, ম্যাজিশিয়ান আনন্দের অভিনয় করে সেই মুঠখানা সামনের দিকে এগিয়ে দিয়ে বেশ জোরের সঙ্গে হেসে বলবে, ‘আবারও আপনি জিতলেন,’ বলেই হাতটা সামনে বাড়িয়ে মুঠ খুলে সেই হাতে ক্যান্ডি দেখাবে। আবারও একটা নিজের ভাগের নোট তুলে দর্শকের ভাগে ড্রপ করে দেবে। কিন্তু বিপরীত হাতে যে আরও একটা ক্যান্ডি মুঠ করে ধরা আছে, সেটা দর্শক যেন ঘুণাক্ষরেও আন্দাজ করতে না পারেন। এ জন্য টাকা পুরস্কারের চ্যালেঞ্জ করে অনেক দিন ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের নিয়ে অনুশীলন করবে; তার আগে অনুশীলন করবে আয়নার সামনে। নিখুঁত অভিনয় হলে তবেই সাধারণ দর্শকদের সামনে দেখাবে।
তৃতীয় রাউন্ড
বিপরীত হাতটা কেউ দেখতে চাওয়ার আগেই তৃতীয় রাউন্ড শুরু করতে হবে। খুব দ্রুত হাত দুটো পেছনে নিয়ে গিয়ে ক্যান্ডিটা হাত বদলাবদলি করার অভিনয় করার সময় এবার উভয় ক্যান্ডিই বেল্টের আড়ালে রেখে ফাঁকা মুঠ দুটো ফোলা ফোলা অবস্থায় সামনে নিয়ে আসো। মুঠ দুটো ফোলা ফোলা না রেখে টাইট অবস্থায় আনলে দর্শক বুঝে ফেলতে পারেন হাতের মধ্যে কিছুই নেই। তাহলে ম্যাজিকের বিস্ময় আর আনন্দ তো নষ্ট হবেই, তুমি হারাবে তোমার সম্মান। আর একদল কঠিন দর্শক থাবা দিয়ে তোমার টাকাগুলো ছিনিয়েও নিতে পারে।
হ্যাঁ, যা বলছিলাম। তৃতীয় রাউন্ডে অর্থাত্ ক্লাইমেক্স রাউন্ডে এসে দুই হাতের মুঠ দুটো দর্শকের সামনে তুলে ধরে প্রশ্ন করবে, ‘ক্যান্ডিটা কোন হাতে?’ দর্শক যে হাতই দেখাক সঙ্গে সঙ্গে সেই হাত খুলে ফাঁকা দেখিয়েই খুশিতে চিত্কার করে দাঁড়িয়ে উঠে জোরে বলবে, ‘আমি জিতে গেছি।’ ভঙ্গিটা হবে এমন যেন তুমি লাখ টাকার লটারি পেয়ে গেছ; যা পাবে কি পাবে না সে সম্পর্কে নিশ্চিত ছিলে না। মুহূর্ত বিলম্ব না করে সব টাকা থাবা মেরে তোমার প্যান্টের পকেটে ঢুকিয়ে দেবে। অন্য হাতটি প্যান্টের বিপরীত পকেটে ঢুকিয়ে সেখানে আগে থেকে থাকা ক্যান্ডিটা শান্তভাবে তুলে হাতটা বের করে আনবে। সেই হাতের আঙুল ফাঁক করে সেই দিকে তাকিয়ে হাতের তালু ঘুরিয়ে দেখে নাও, ক্যান্ডিটা যেন সব সময় ওই হাতেই ছিল। ভলান্টিয়ার দর্শককে ম্যাজিকটিতে সাহায্য করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানাবে। স্যুভেনির হিসেবে ক্যান্ডিটা বা ইরেজারটা তাকে বিনয়ের সঙ্গে উপহার দেবে।
একটা চমৎকার চ্যালেঞ্জিং নাটকীয় ম্যাজিক দেখে দর্শকেরা খুব খুশি হবেন। সবচেয়ে বড় কথা, তুমি এমন অভিনয় করবে, যেন তোমার ম্যাজিক ভুল হওয়া এবং টাকা হারানোর ভয়ে তুমি খানিকটা ভিতু। কিন্তু সাবধান! অতি অভিনয় পুরো ম্যাজিকটাকে মাটি করে ফেলতে পারে।