পৃথিবীতে এক অক্ষরের সবচেয়ে সুন্দর শব্দ হলো ‘মা’। আনিসুল হকের মা বইটি কেবল একটি উপন্যাসই নয়, এক সংগ্রামী নারীর জীবনের মহাকাব্যিক অধ্যায়ের গভীর স্মৃতিচারণা। মায়ের নিঃস্বার্থ জীবনের একটি চিত্র ফুটে উঠেছে এ বইটিতে। বইয়ের বাস্তব ঘটনাটির প্রেক্ষাপট ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ। শহিদ আজাদের মাকে নিয়ে লেখা। আজাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে সব সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে তিনি চলে আসেন যাযাবর জীবনে। একসময় মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। আজাদ মুক্তিযুদ্ধে যায় কিন্তু শেষ পর্যায়ে সে ধরা পড়ে। আজাদের মা ঘরে বসে থাকতে না পেরে শশব্যস্ত হয়ে ছুটে যান ছেলের কাছে। গিয়ে দেখলেন ছেলে মাটিতে শুয়ে আছে। তাকে খাবার খেতে দেওয়া হয়, তবে তা শুধু শুকনা রুটি। তিনি বাড়ি ফিরে এসে ছেলের জন্য রান্না করেন কিন্তু পরদিন গিয়ে দেখেন তাঁর ছেলে আর নেই। একসময় দেশ স্বাধীন হয়। সবাই বলে আজাদ যুদ্ধে শহিদ হয়েছে কিন্তু তিনি তা মানতে নারাজ। এরপর তিনি যত দিন বেঁচে ছিলেন কখনো খাটে শোননি, ভাত খাননি। একসময় তিনি বুঝতে পারেন আজাদ শহিদ হয়েছে। মৃত্যুর পর তার কবরের পাশে তার ইচ্ছানুযায়ী লেখা হয়েছিল শহিদ আজাদের মা।
মা উপন্যাসের ভালো-মন্দ বিচারের ধৃষ্টতা আমার নেই, তবু বলব, মা পড়ার সময় আমার মনে বারবার আজাদের জন্য অপেক্ষা করে যাওয়া ওর মায়ের কথা মনে পড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের কথা আমরা জানলেও সে সময় প্রতিটি মায়ের আত্মত্যাগের কথা আর আত্মত্যাগের কষ্ট উপলব্ধি করতে মা উপন্যাসটি পড়া উচিত।