বিচিত্র
অদ্ভুতুড়ে যত মামলা (প্রথম পর্ব)
মামলা মানেই ঝামেলা। অন্তত কিছু মানুষের মামলা করার ধরন দেখলে এমনটাই মনে হয়। তেমনি কিছু অদ্ভুতুড়ে মামলা নিয়ে লিখেছেন এইচ এম ফজলে রাব্বী।
মনে করো, রেডিওতে কুইজ কুইজ খেলা হচ্ছে। সবাইকে হারিয়ে তুমিই জিতে নিলে প্রথম পুরস্কার! তা–ও কিনা বিলাসবহুল এক গাড়ি! মনের খুশিতে ব্যাঙের মতো লাফাতে লাফাতে গাড়ি বুঝে নিতে চলে গেলে রেডিও স্টেশনে। তারপর দেখলে ইঞ্চি চারেক সাইজের একটা খেলনা গাড়ি। কী করা যায়?
সে বিষয়ে আমাদের আলোর পথ দেখিয়েছেন ইংল্যান্ডের ক্যাথি ম্যাকগোয়ান। রেগে গেলেও মাথা ঠান্ডা রাখায় হেরে যাননি তিনি। সরাসরি মামলা করে বসলেন আসল গাড়ির মূল্যের ক্ষতিপূরণসহ। এবং একবারও আসল না খেলনা গাড়ি, সেটা কোথাও উল্লেখ না করায় রেডিও স্টেশনকেও দিতে হলো মজা করার শাস্তি।
কুকুরের কামড় খেয়ে হয়তো চিন্তাশক্তিই লোপ পেয়ে গিয়েছিল ৬২ বছর বয়স্ক অ্যান্টন পুরিসীমার। নাহলে কি নিউইয়র্ক সিটি ট্রানজিট অথরিটির বিরুদ্ধে ঠুকে বসেন দুই আনডিসিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ! যা কিনা পৃথিবীর সব সম্পদের অর্থমূল্যের কাছাকাছি। তিনি মামলায় আরও উল্লেখ করেন, দাবি করা ক্ষতিপূরণ কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত মধ্যাঙ্গুলির ক্ষতি কখনোই পূরণ করতে না পারলেও খানিকটা মানসিক প্রশান্তি দিতে পারে। তাই তিনি এই ‘অল্প’ কয়টা টাকাই দাবি করেছিলেন।
এক আলোকচিত্রী বনে গেলেন প্রকৃতির ছবি তুলতে। হুট করে এক বাঁদর বাঁদরামি করে তাঁর ক্যামেরা শুধু টেনেই নিল না, ফটাফট সেলফিও তুলে ফেলল! সেই ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে কই ভাইরাল হবেন আলোকচিত্রী, উল্টো হয়ে গেলেন মামলার আসামি। আর সেই মামলা করল প্রাণী অধিকার সংস্থা পেটা। পেটার এক কথা, এই ছবির কপিরাইট বাঁদরের। এটি ওর ব্যক্তিগত ছবি। আলোকচিত্রী ওর অনুমতি ছাড়া এই ছবি ভাইরাল করতে পারেন না। শেষ পর্যন্ত দুই পক্ষের সমঝোতার মধ্য দিয়েই শেষ হয় এই মামলা।
কিছু মানুষ মামলা করে। মামলার পর মামলা করতেই থাকে। কিন্তু তাদের সবাইকে ছাড়িয়ে গেছেন জোনাথন লি রিচেস। প্রায় চার হাজার মামলা করেছেন তিনি। সে মামলায় কার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলেননি তিনি? জীবিত, মৃত, জড় পদার্থ—কাউকেই ছাড়েননি জোনাথন। হিটলার, আইফেল টাওয়ার, প্লুটো গ্রহ, জর্জ ডব্লিউ বুশ—সবার বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তিনি। এমনকি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস যখন তাঁকে পৃথিবীর সবচেয়ে মামলাবাজ ব্যক্তিত্বে ভূষিত করতে যায়, তিনি তাদের বিরুদ্ধেও চট করে একটা মামলা করে ফেলেন। কারণ, তারা বলেছিল তিনি নাকি পাঁচ হাজারের ওপরে মামলা করেছেন। আসলে তো তিনি করেছেন চার হাজারের ওপরে মাত্র।
তবে আশার কথা এই যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্টাকি–ভিত্তিক অ্যাটর্নি অফিস তাঁকে বিচার–সংক্রান্ত সম্পদ অপচয়ের অভিযোগের শাস্তি হিসেবে তাঁর কাছ থেকে মামলা করার ক্ষমতা কেড়ে নেয়। ভাগ্যিস কেড়ে নিয়েছিল, নইলে হয়তো তাদের বিরুদ্ধেও একটা মামলা করে ফেলতেন।
ধরো, তোমার প্রিয় খালামণি বাসায় এসেছেন। তাঁকে দেখে আনন্দে লাফাতে লাফাতে খালামণিইইই বলে তুমি তাঁকে জড়িয়ে ধরতে গেলে। কিন্তু টাইমিংয়ের গন্ডগোলে তোমার হাত তাঁর চোয়ালে লেগে গেল। চোয়ালও গেল ভেঙে। এখন তোমার খালামণি কি তোমার বিরুদ্ধে মামলা করবেন?
তোমার খালামণি না করলেও ঠিক এ কাজটাই করেছিলেন শেন টারালার খালামণি। অবশ্য তাঁর উদ্দেশ্য ছিল মূলত ইনস্যুরেন্সের টাকা পাওয়া। তাই ইনস্যুরেন্সের টাকার জন্য ১২ বছর বয়সী শেনের বিরুদ্ধে মামলা করতে দ্বিধা করেননি তার খালামণি।