‘একটা গল্প আছে। একটা ছেলেকে তার বাবা পাঠিয়েছেন পৃথিবীর সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তির কাছে। ছেলেটি পাহাড় ডিঙিয়ে, মরুভূমি পাড়ি দিয়ে গেল ওই ব্যক্তির বাড়ি। জ্ঞানী ব্যক্তিকে ছেলেটি বলল, আমাকে উপদেশ দিন। জ্ঞানী বললেন, উপদেশ তো দেব, তবে তার আগে পুরো বাড়িটা ঘুরে এসো তুমি। কিন্তু একটা শর্ত আছে, বাড়ি ঘুরে আসার সময় তোমার মুখে থাকবে একটা চামচ। আর চামচে থাকবে তেল। তুমি এমনভাবে ঘুরবে, যেন চামচ থেকে তেল না পড়ে যায়। ছেলেটি জ্ঞানী ব্যক্তির কথামতো পুরো বাড়ি ঘুরে এসে বলল, আমি পুরো বাড়ি ঘুরে এসেছি। এবার আমাকে উপদেশ দিন। জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, তোমার পাশের ঘরে কী আছে? ছেলেটা বলল, আমি জানি না। তার পাশের বাড়িতে কী আছে? ছেলেটি বলল, জানি না। কেন জানো না? ছেলেটি বলল, আমি সারাক্ষণ চামচের দিকে তাকিয়ে ছিলাম যেন তেল পড়ে না যায়। জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, তুমি আরেকবার যাও এবং পুরো বাড়িটা ঘুরে এসো। কিন্তু চামচ থেকে যেন তেল পড়ে না যায়। ঘুরে এসে বলতে হবে কোন ঘরে কী আছে। ছেলেটি এবার ঘুরে দেখল, ঘরগুলোতে ফুল, ছবি, হরিণের ছবি রয়েছে। এবার ছেলেটি এসে বললেন, আমি বলতে পারব, কোন ঘরে কী আছে। জ্ঞানী ব্যক্তিটি বললেন, কিন্তু তোমার চামচের তেল কই? ছেলেটি তাকিয়ে দেখল, চামচ থেকে সব তেল পড়ে গেছে। তখন জ্ঞানী ব্যক্তি বললেন, এটিই তোমার প্রতি আমার উপদেশ। আমরা আমাদের চারপাশের যা কিছু উপভোগের, দেখার, অংশগ্রহণ করার সব কিছু করব, শুধু চামচ থেকে যেন তেল পড়ে না যায়।’
গল্পটি বলছিলেন কিআ সম্পাদক আনিসুল হক। আর মুগ্ধ হয়ে তা শুনছিল জাপান ও নারায়ণকুল ড্রিম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। গাজীপুরের পুবাইলের নারায়ণকুল এলাকায় অবস্থিত এই স্কুলে প্রতিবছর অনুষ্ঠিত হয় ‘স্বপ্নের বক্তব্য দিবস’। করোনার কারণে গত কয়েক বছর অনুষ্ঠানটি বন্ধ ছিল। দীর্ঘদিন পর অনুষ্ঠিত হলো ‘স্বপ্নের বক্তব্য দিবস- ২০২২’। কিআ সম্পাদক আনিসুল হক ছিলেন এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি।
জ্ঞানী ব্যক্তি আর চামচের গল্প বলে শিক্ষার্থীদের একটা উপদেশ দিয়েছেন তিনি—আমরা সব কিছু করব; কিন্তু আমাদের পরীক্ষার রেজাল্ট যেন ভালো হয়। ঠিক ওই গল্পের মতো। সবই করব, কিন্তু চামচ থেকে তেল যেন পড়ে না যায়। এ জন্য মনোযোগ দিয়ে নিয়মিত পড়াশোনা করতে হবে। পাশাপাশি পড়তে হবে বই। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, গান, বিতর্ক, ক্লাব—সবই জীবনকে নানা রঙে রাঙিয়ে তুলতে সহায়তা করা। আমরা বেগম রোকেয়ার মতো আলোকিত হব, যেন সবাইকে আলোকিত করতে পারি।
৩১ আগস্ট জাপান ও নারায়ণকুল ড্রিম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ কাৎসুশি ফুরুসাওয়া, উপাধ্যক্ষ (উচ্চমাধ্যমিক) আনিসুর রহমান, উপাধ্যক্ষ (মাধ্যমিক) সামসুদ্দোহা চঞ্চল, উপাধ্যক্ষ সৈয়দ ইকবাল হাসান ও ড্রিম প্রজেক্টের ব্যবস্থাপক সাদিকুল ইসলাম।
অধ্যক্ষ কাৎসুশি ফুরুসাওয়া বক্তব্য দেন জাপানি ভাষায়। একজন দোভাষী তাঁর বক্তব্য বাংলায় অনুবাদ করে দেন। ফুরুসাওয়া বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠান প্রতিবছর ‘স্বপ্নের বক্তব্য দিবস উদ্যাপন করে। কিন্তু করোনার কারণে দুই বছর এই অনুষ্ঠান করা সম্ভব হয়নি। অনেক দিন পর এই অনুষ্ঠান করতে পেরে আমরা অনেক আনন্দিত। আমাদের মাঝে আনিসুল হক স্যার উপস্থিত থাকায় শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা দারুণ উচ্ছ্বসিত। তাঁর সম্পর্কে আমি পড়েছি এবং জেনেছি। স্বপ্ন দেখে কীভাবে পূরণ করতে হয় তা তিনি জানেন। তাই স্বপ্ন পূরণে তাঁকে আমরা মডেল হিসেবে নিতে পারি।’
শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণও ছিল উল্লেখযোগ্য। সুন্দর উপস্থাপনায় পুরো অনুষ্ঠান মাতিয়ে রেখেছিল জাপান ও নারায়ণকুল ড্রিম মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার। বক্তব্য দেয় সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী নুসরাত জাহানও। নুসরাত বলে, ‘আমি জানি, স্বপ্ন মানুষের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। স্বপ্ন থাকলে একজন মানুষ অনেক কিছু করতে পারে।’ নিজের স্বপ্নের কথাও বলেছে নুসরাত। বড় হয়ে সে হতে চায় একজন জেলা প্রশাসক। কারণ, জেলা প্রশাসকের কাঁধে অনেক দায়িত্ব থাকে। দক্ষ জেলা প্রশাসক হতে এখন থেকেই জেলা প্রশাসকের কাজগুলোর বিষয়ে ধারণা নিচ্ছে নুসরাত। ‘আমি আমার স্বপ্নের জন্য অনেক পরিশ্রম করছি। আমি আমার প্রতিদিনের কাজ আমার ড্রিম ডায়েরিতে লিখে রাখি।’
স্বপ্নের এত গল্পগুলো নিশ্চয়ই নতুন স্বপ্নের বীজ বুনে দেবে শিক্ষার্থীদের মাথায়। তারাও হয়তো স্বপ্নের কথা লিখে রাখবে নিজের ড্রিম ডায়েরিতে। সেই স্বপ্নগুলো বাস্তবে পরিণত হলেই আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ।