চাঁদের পাহাড় ও পথের পাঁচালীর লেখক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় একবার এসেছিলেন পূর্ববঙ্গে, গোরক্ষক্ষণী সমিতির প্রচারকাজে নিযুক্ত হয়ে। চাকরি দিয়ে তাঁকে এখানে পাঠিয়েছিলেন কেশোরাম পোদ্দার নামের এক মাড়োয়ারি ব্যবসায়ী। পূর্ববঙ্গ ভ্রমণের শৈল্পিক আখ্যান উঠে এসেছে তাঁর অভিযাত্রিক নামের স্মৃতিকথার বইয়ে। কুষ্টিয়ার গড়াই নদের ব্রিজ দেখার সাধ ছিল বিভূতিভূষণের। গড়াইতীরে মাঠ, বাঁশবনের শোভা তাঁকে মুগ্ধ করে, বেতঝোপ দেখে বিস্মিত হন। একুশ শতকেও ভগ্নদশায় টিকে থাকা মোহিনী মিল না দেখার আফসোস ছিল বিভূতিভূষণের।
কুষ্টিয়া ভ্রমণ শেষে গোয়ালন্দ যাওয়ার পথে প্রাণ যেতে বসেছিল বিভূতির, ট্রেনের কামরায় মাতাল পুলিশের খপ্পরে পড়ে। সেই কামরায় তিনি আর শুধু দুই পুলিশ; পাঁড় মাতাল। বিভূতিভূষণের উপস্থিতি সহ্য হচ্ছিল না তাঁদের। এই কামরায় আর কেউ উঠতে সাহস করল না, কোথাকার কোন হরিদাস পালের এত সাহস! সুতরাং একজন বললেন, ‘চল ফেলে দিই ব্যাটাকে।’ অন্যজনও রাজি। দুজন দুদিক থেকে ধরে টেনেহিঁচড়ে বিভূতিভূষণকে নিয়ে গেলেন দরজার কাছে। চলন্ত গাড়ি থেকে ফেলে দিলে যে লোকটা মারা যাবে, দুই মাতালের সে হুঁশ নেই। ফেলে দিতেই হবে, যেকোনো মূল্যে। দরজার ঠিক কাছাকাছি গিয়ে বিভূতি একটা লোহার খুঁটি পেলেন। দুহাত দিয়ে সেটাকেই ধরলেন শক্ত করে। কিন্তু দুই মাতাল জোর করে তাঁর হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করলেন। বিভূতিভূষণ তখন উপায় না পেয়ে তাঁদের ধর্মের বাণী শোনালেন। নরহত্যা কত বড় পাপ, নরকে হত্যাকারীদের কী শাস্তি হবে, সেসব শোনালেন। কিন্তু মাতালেরা সেসব শুনবেন কেন! ফেলতেই হবে ব্যাটাকে। কিন্তু বিভূতিভূষণ কিছুতেই খুঁটি ছাড়লেন না। ধস্তাধস্তি চলল, ব্যয় হলো অনেকটা সময়। ততক্ষণে রাজবাড়ী স্টেশনে পৌঁছে গেছে গাড়ি। বিভূতিভূষণ দেরি না করে সে কামরা থেকে নেমে অন্য কামরায় চলে যান। রক্ষা পায় পৈতৃক প্রাণটা।