দক্ষিণ কোরিয়ায় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কবলে বাংলাদেশিসহ ৪০ হাজার স্কাউট
দক্ষিণ কোরিয়ার বুয়ান অঞ্চলে ১ আগস্ট পর্দা উঠেছে স্কাউটের সবচেয়ে বড় বৈশ্বিক আয়োজন ২৫তম ওয়ার্ল্ড স্কাউট জাম্বুরির। ১৫৮টি দেশ থেকে প্রায় ৪৩ হাজার স্কাউট এবার অংশ নিচ্ছে এই আসরে। দেশের প্রতিনিধিত্ব করতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেও দক্ষিণ কোরিয়ায় পাড়ি জমিয়েছে ৭৫০ জনের বিশাল স্কাউট দল।
কিন্তু গিয়েই বিপাকে পড়তে হয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছোট–বড় স্কাউটকে। প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়েছে জাম্বুরিতে অংশ নেওয়া অনেক স্কাউট। বিবিসির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের যে উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে এবারের আয়োজন, সেখানকার তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশে ওঠানামা করছে। এবারের ওয়ার্ল্ড জাম্বুরির আয়োজন নিয়ে কিশোর আলোকে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানায় বাংলাদেশ স্কাউট দলের সদস্য নাহিয়ান নানজীবা কবির। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ছাত্রী নাহিয়ান কিশোর আলোকে জানায়, তীব্র দাবদাহে নাজেহাল সেখানে অবস্থানকারী স্কাউটরা। সেই সঙ্গে নানা অব্যবস্থাপনা ও জটিলতার অভিযোগও পাওয়া গেছে অংশগ্রহণকারীদের কাছ থেকে। জ্বর, পানিশূন্যতাসহ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাদের। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ বাজে আবহাওয়া ও অব্যবস্থাপনার কথা বলে নিজেদের স্কাউট দল ও কর্মকর্তাদের মূল ক্যাম্প সাইট থেকে সরিয়ে নিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত প্রায় ১৩৮ জনকে স্থানীয় ক্লিনিক ও হাসপাতালে ভর্তি করার খবর পাওয়া গেছে। সেই সঙ্গে তীব্র গরম আবহাওয়া ও দম বন্ধ করা পরিবেশের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে প্রায় ৭০০ স্কাউট।
তবে বিপদ শেষ হচ্ছে না এখানেই। অতি প্রবল এক ঘূর্ণিঝড় ‘খানুন’ ধেয়ে আসছে দক্ষিণ কোরিয়ার দিকে। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলে আঘাত হানতে পারে এই ঘূর্ণিঝড়। ফলে দেশটির জাম্বুরিতে অংশগ্রহণকারী স্কাউটদের দ্রুত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আয়োজক কর্তৃপক্ষ। ইতিমধ্যে উপকূলীয় ক্যাম্প সাইট থেকে স্কাউটদের সরিয়ে নেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। জাম্বুরির বাকি আনুষ্ঠানিকতা রাজধানী সিওল কিংবা আশপাশের এলাকায় আয়োজন করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রতি চার বছরে অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের স্কাউটদের নিয়ে আয়োজিত সবচেয়ে বড় এই মিলনমেলা। করোনা মহামারির পর এবারই প্রথম আয়োজিত হচ্ছে ওয়ার্ল্ড স্কাউট জাম্বুরি। তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও নানা অব্যবস্থাপনার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা ছোট–বড় স্কাউটের জন্য এই জাম্বুরির অভিজ্ঞতা যে খুব একটা সুখকর হচ্ছে না, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে এত দুর্যোগের মধ্যেও বাংলাদেশসহ অন্য সব স্কাউট দল সব বিপর্যয় মোকাবিলা করে বিশ্বের সামনে প্রতিনিধিত্ব করে যাচ্ছে নিজ নিজ দেশের। এরই মধ্যে গত ৪ আগস্ট পালিত হয়েছে ‘বাংলাদেশ ডে’। যেখানে উপস্থিত ছিলেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।
বিশ্ব স্কাউট জাম্বুরির চলতি আসরের পর্দা নামবে আগামী ১২ আগস্ট।