টাইম মেশিনে চড়তে চাও, এই যে এখানে...
টাইম মেশিনে চড়তে চাও? আসলে টাইম মেশিনে চড়ে অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ ঘুরে আসতে পারলে ভালোই হতো।
ধরো, এখন যদি একটা টাইম মেশিনে চড়ে আমরা যদি ২০২৬-এর বিশ্বকাপ ফুটবলের ফাইনাল ম্যাচটা দেখে আসতে পারি, জেনে যাব আর্জেন্টিনার হাত থেকে কাপটা কে নিচ্ছে। নাকি আর্জেন্টিনাই রেখে দিচ্ছে। বা ২০২৬ সালে আমরা জানতে পারব, বাংলাদেশে কি নির্বাচন হলো? হলে কে হলেন প্রধানমন্ত্রী।
আইসাক আসিমভ নামের বিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন লেখক (১৯২০-৯২) তাঁর ‘ইমরটাল বার্ড’ বা ‘অমর কবি’ নামের গল্পে দারুণ একটা মজার কাহিনি ফেঁদেছিলেন। উইলিয়াম শেক্সপিয়ার এই সময়ের একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ইংরেজি সাহিত্যের ক্লাসে ছাত্র হয়ে ঢুকলেন। ক্লাসে শেক্সপিয়ারই পড়ানো হচ্ছে। পরীক্ষাও হলো। শেক্সপিয়ার শেক্সপিয়ার-বিষয়ক পরীক্ষায় ফেল করলেন।
বিজ্ঞানী আলবার্ট আইনস্টাইন প্রথমে কল্পনা করেন যে টাইম ট্রাভেল বা সময়ের সামনে বা পেছনে যাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, সব জায়গায় সময় একই রকম গতিতে যায় না।
যেমন যমজ দুটো শিশুর একজনকে যদি সমুদ্রের পাশে রাখা হয়, আরেকজনকে পাহাড়ের চূড়ায় রাখা হয়, তাহলে বহু বছর পরে দেখা যাবে, দুজনের বয়স দুই রকম। পাহাড়ের জনের বয়স হবে বেশি। কারণ, সময় ওপরে দ্রুত চলে।
আরেকটা ব্যাপার হলো, তুমি যত দ্রুত চলবে, সেখানকার সময় তত ধীরে চলবে। এটা পরীক্ষা করার জন্য বিজ্ঞানীরা একটা ঘড়ি রেখেছিলেন মাটিতে, আরেকটা ঘড়ি পাঠিয়েছিলেন উড়োজাহাজে। উড়োজাহাজটা পৃথিবীর ঘোরার দিকেই ছুটে গিয়েছিল। দেখা গেল, উড়োজাহাজের ঘড়িটা সামান্য ধীরে চলেছে।
আর মাধ্যাকর্ষণের জন্য পৃথিবীতে সময় চলে তুলনামূলকভাবে আস্তে। অনেক ওপরে গেলে সেখানে সময় জোরে চলে।
ভাবছ, এটা একটা কল্পনা। না। কল্পনা নয়, বাস্তব। সে জন্য মহাকাশে যে স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে, তাদের সময় আর পৃথিবীর সময় আলাদা হয়।
এখন ধরো, স্যাটেলাইট থেকে পাওয়া ছবির মাধ্যমে জিপিএস গাড়ির ড্রাইভারকে বলে, কোন দিকে যেতে হবে। দুই সময় যে আলাদা, সেটা যদি বিজ্ঞানীরা হিসাবে না ধরতেন, তাহলে তোমার গাড়ি আসলে আছে এক জায়গায়, আর জিপিএস তোমাকে দেখাত আরেক জায়গায়। গন্তব্য থেকে হয়তো এক মাইল দূরে তোমাকে নিয়ে যেত। স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবীর মাটি থেকে ১২ হাজার ৫৫৫ মাইল উচ্চতায় চলছে।
এখন টাইম ট্রাভেল করে তুমি কি কোটি কোটি বছর পেছনের জিনিস দেখতে চাও? আসলে, আমরা আকাশে যে নক্ষত্র দেখি, টেলিস্কোপে বা খালি চোখে, সেগুলো কিন্তু তাদের বর্তমান রূপ নয়, বহু বহু বছর আগের রূপ। আলো বহু আলোকবর্ষ দূরত্ব পেরিয়ে আমাদের চোখে বা টেলিস্কোপে ধরা পড়ছে।
টাইম ট্রাভেল করার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো নক্ষত্র দেখা। টেলিস্কোপে দেখা। যেমন জেমস ওয়েব টেলিস্কোপ ১৩০০ কোটি বছর আগের ছবি তুলেছে। আসলে কি ওই টেলিস্কোপ ১৩০০ কোটি আগে চলে গেছে? তা নয়। তার ক্যামেরায় ধরা ছবিটি যার, তা আসলে ১৩০০ কোটি আলোকবর্ষ দূরে। তার মানে যা আমরা এখন দেখছি, তা তার এখনকার রূপ নয়। ১৩০০ কোটি বছর আগের।
হুমায়ূন আহমেদ লিখেছেন, টাইম ট্রাভেল সম্ভব নয়। যদি তা হয়, তাহলে একটা লোক তার জন্মের আগে চলে গিয়ে তার বাবাকে হত্যা করে যদি, তাহলে সে তো জন্মই নিতে পারবে না।
আর টাইম ট্রাভেল করতে গেলে আলোর চেয়ে বেশি গতিতে ছুটতে হবে। তা–ও সম্ভব নয়। আইনস্টাইন বলে গেছেন, জগতের কেউ আলোর চেয়ে বেশি গতিতে চলতে পারে না।
আর আলোর গতিতে যদি আমরা ছুটি কী হবে? আলোর গতিতে ছুটলে আমরা আর বস্তু থাকব না, তরঙ্গ হয়ে যাব।
সূত্র: নাসার ওয়েবসাইট, আ ব্রিফ হিস্ট্রি অব টাইম, স্টিফেন হকিং, উইকিপিডিয়া