মোহাম্মদ সালাহ মিসর জাতীয় দলের ফরোয়ার্ড। মো সালাহ নামেই বেশি পরিচিত এই ফরোয়ার্ড ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব লিভারপুলে খেলেন। বিশ্বকাপে মিসরের মূল ভরসা সালাহ ১৯৯২ সালের ১৫ জুন জন্মগ্রহণ করেন। রাশিয়াতে নিজের জন্মদিনেই উরুগুয়ে ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপে অভিষেক হচ্ছে সালাহর। এফসি বাসেলের হয়ে দুটি সুইস সুপার লিগ জয় করা সালাহ ক্যারিয়ারে সেরা সময় কাটাচ্ছেন লিভারপুলে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে লিভারপুলে যোগ দিয়ে অভিষেক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড গড়েছেন। প্রথম কোনো খেলোয়াড় হিসেবে এক মৌসুমেই তিনবার মাসের সেরা খেলোয়াড় হয়েছেন। ২০১৭ / ১৮ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হয়েছেন সালাহ। মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই প্রিমিয়ার লিগের এক মৌসুমে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডও ছুঁয়েছেন সালাহ।
মিসরের বাসইয়ুন শহরের নাগরিগ গ্রামে জন্ম নেওয়া সালাহর ফুটবলে হাতেখড়ি ভাইয়ের সঙ্গে খেলে। কিন্তু ফুটবলে নিজের প্রতিভা আলোর মুখ দেখাতে কঠিন পরিশ্রমের পথ বেছে নিয়েছিলেন সালাহ। গ্রাম থেকে আধা ঘণ্টা দূরের এক ক্লাবে নাম লেখান। এতেও তৃপ্ত না হয়ে দেড় ঘণ্টা দূরে তান্তার আরেক ক্লাবে যোগ দিয়েছেন। ১৪ বছর বয়সেই যোগ দিলেন কায়রোর আরব কন্ট্রাক্টরসে (এল মোকাওলুন)। গ্রাম থেকে চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে ক্লাবের অনুশীলনে যেতেন। কখনো তিনটি, কখনো চার-পাঁচটি বাস বদলাতে হতো। সকাল সাতটায় বিদ্যালয়ে ঢুকে নয়টায় ক্লাবের উদ্দেশ্যে বের হয়েছে। অনুশীলন শেষে ছয়টা নাগাদ গ্রামের উদ্দেশ্যে আবার ফিরতি যাত্রা। রাত ১০ টা-সাড়ে ১০টা নাগাদ বাড়িতে পৌঁছানো। পরদিন সকালে আবারও একই রুটিন। এভাবেই চলেছে তাঁর কৈশোর। এরই ফল পেয়েছেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে পেশাদার ফুটবলে অভিষিক্ত হয়ে।
দুই বছর মোকাওলুনে কাটিয়ে ২০ বছর বয়সেই ইউরোপে চলে আসেন সালাহ। এফসি বাসেলের হয়ে চ্যাম্পিয়নস লিগে দুর্দান্ত খেলে ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোর নজরে পড়েন। ২০১৪ সালে মাত্র ১১ মিলিয়ন পাউন্ডে তাঁকে দলে টানে চেলসি। কিন্তু দেড় মৌসুমে মাত্র তিন গোল এবং খেলার সুযোগ না পেয়ে ইতালিতে চলে যান সালাহ। রোমার হয়ে দুর্দান্ত দুই মৌসুম আবারও সালাহকে পাদপ্রদীপের আলোয় নিয়ে আসে। দুর্দান্ত গতি ও ড্রিবলিং ক্ষমতার কারণে ইতালিতে মিসরের মেসি নামে ডাকা হতো তাঁকে। তিন বছর আগে তাঁকে কেনার সুযোগ হাতছাড়া করা লিভারপুল ২০১৭ সালে ৪২ মিলিয়ন ইউরোতে আবার ইংল্যান্ডে ফিরিয়ে আনে সালাহকে। লিভারপুলের হয়ে অভিষেকেই গোল করে সিদ্ধান্তটা সঠিক প্রমাণ করেছেন মিসরীয় ফরোয়ার্ড। সালাহর খেলায় মুগ্ধ লিভারপুল সমর্থকেরা তাঁকে নিয়ে গান বেঁধেছেন।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে প্রত্যাবর্তনের মৌসুমেই রেকর্ড ভাঙাগড়ার খেলায় মেতেছেন সালাহ। এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোলের রেকর্ড গড়েছেন। আফ্রিকান খেলোয়াড় হিসেবে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ডটাও তাই হয়ে গেছে সেই ফাঁকে। গোল করায় বাঁ পা বেশি প্রিয় হওয়ায় রবি ফাওলারের বাঁ পায়ে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ডটাও দখল করেছেন সালাহ। অভিষেক মৌসুমে লিভারপুলের হয়ে সর্বোচ্চ গোল তাঁর। এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি ম্যাচে গোলের রেকর্ডটাও মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই করে ফেলেছিলেন। শুধু ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ নয়, ক্লাবের হয়ে ইউরোপেও রেকর্ড গড়ে চলেছেন সালাহ। চ্যাম্পিয়নস লিগে আফ্রিকান খেলোয়াড় হিসেবে সর্বোচ্চ গোলের রেকর্ড এখন মিসরীয় ফরোয়ার্ডের।
তবে এ সব রেকর্ড কোনোটাই খুব একটা গুরুত্ব পাবে না সালাহর কাছে। রাশিয়া বিশ্বকাপে স্বাগতিক দলের গ্রুপে পড়েছে সালাহর মিসর। ‘এ’ গ্রুপে আরও আছে দুবারের বিশ্বকাপজয়ী উরুগুয়ে ও সৌদি আরব। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের দ্বিতীয় পর্বে ওঠার স্বপ্ন দেখছে মিসর। সে স্বপ্নটা অর্জনে দেশটি তাকিয়ে আছে সালাহর বাঁ পায়ের দিকে।
ব্যক্তিগত জীবনে এক সন্তানের জনক সালাহ। ২০১৩ সালে বিয়ে করা সালাহ পরের বছর এক কন্যার পিতা হয়েছেন। পবিত্র নগরী মক্কার নামে কন্যার নাম দেওয়া সালাহ ইসলাম ধর্মচর্চা করেন নিয়মিত।