বিরাট কোহলি

১৯৮৮ সালের পাঁচ নভেম্বরে দিল্লিতে পাঞ্জাব পরিবারে জন্ম নেন বিরাট কোহলি। নিজের ব্যাটিং স্কিল এবং টেকনিকের জন্য গ্রেট খেলোয়াড়দের সঙ্গে তাঁকে তুলনা করা হয়। মনে করা হয় শচীন টেন্ডুলকারকে যদি কেউ টপকাতে পারেন তিনি কোহলি-ই। ওয়ানডে, টেস্ট, টি-টোয়েন্টি; ক্রিকেটের তিন সংস্করণেই ভারতীয় দলের নেতৃত্ব দেন কোহলি। কোহলির বাবা প্রেম কোহলি পেশায় আইনজীবী এবং মা সারোজ কোহলি গৃহিণী। বিশাল ভারতী পাবলিক স্কুলে শিক্ষা জীবন শুরু করেন কোহলি। ১৯৯৮ সালে পশ্চিম দিল্লি ক্রিকেট একাডেমিতে রাজকুমার শর্মার অধীনে ক্রিকেটের অ-আ, ক-খ শেখেন। যদিও ৩ বছর বয়সেই নাকি ক্রিকেট ব্যাটের সঙ্গে তাঁর সখ্য তৈরি হয়েছিল বলে জানান পরিবারের লোকজন। ২০০৬ সালের ১৮ ডিসেম্বর কোহলির বাবা মারা যান।

জুলাই ২০০৬ সালে ভারতের অনূর্ধ্ব ১৯ দলের জন্য নির্বাচিত হন কোহলি। সেবার দলের সঙ্গে ইংল্যান্ড সফরে যান তিনি। ইংল্যান্ড অনূর্ধ্ব ১৯ দলের বিপক্ষে ৫০ ওভারের ৩ ম্যাচে কোহলির ব্যাটিং গড় ছিল ১০৫। আর ৩ ম্যাচ টেস্ট সিরিজে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৪৯। তাঁর পারফরম্যান্সে ভারত ওয়ানডে এবং টেস্ট দুই সিরিজই জেতে। কোহলির প্রতিভায় তখনকার ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯’র কোচ লাল চাঁদ রাজপুত মুগ্ধ হন। ওই বছরই সেপ্টেম্বরে পাকিস্তান সফরে যান কোহলিরা। সেখানে পাকিস্তান অনূর্ধ্ব ১৯’র বিপক্ষে কোহলির টেস্ট গড় ছিল ৫৮ এবং ওয়ানডে গড় ছিল ৪১ দশমিক ৬৬। নভেম্বর ২০০৬ সালে ১৮ বছর বয়সে দিল্লির হয়ে তামিল নাড়ুর বিপক্ষে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট শুরু করেন কোহলি। প্রথম ম্যাচে ১০ রানে আউট হলেও কর্ণাটকের বিপক্ষে ৯০ রানের ইনিংস খেলেন কোহলি। ওই ম্যাচের ঠিক আগের দিনই তাঁর বাবা মারা গিয়েছিলেন। কোহলি আউট হওয়ার পর মাঠ থেকে সোজা বাবার অন্তিষ্টিক্রিয়ায় যান।

২০০৮ সালে ভারতীয় অনূর্ধ্ব ১৯ দলের অধিনায়ক নির্বাচিত হন কোহলি। সেবারই মালয়েশিয়ায় আইসিসি অনূর্ধ্ব ১৯ ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ওই টুর্নামেন্টে তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ৪৭। একই বছরের আগস্টে ভারতীয় এক দিনের জাতীয় দলে ডাক পান বিরাট কোহলি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সফরে ভারতের দুই ওপেনার শচীন এবং শেওয়াগ চোটে থাকায় আকস্মিকভাবেই দলে জায়গা পান তিনি। এ পর্যন্ত ২০৮টি ওয়ানডে ম্যাচের দু শ ইনিংসে ৫৮ দশমিক ১১ গড়ে তাঁর মোট রান ৯ হাজার ৫৮৮। এর মধ্যে শতক আছে ৩৫টি আর অর্ধশতক ৪৬টি। ওয়ানডেতে কোহলির সর্বোচ্চ রান ১৮৩। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ২০ জুন ২০১১ সালে কোহলির টেস্ট ক্যারিয়ার শুরু হয়। এ পর্যন্ত ৬৬ টেস্টে ১১২ ইনিংসে ৫৩ দশমিক ৪ গড়ে তাঁর মোট রান ৫ হাজার ৫৫৪। টেস্টে তাঁর সর্বোচ্চ রান ২৪৩। শতক আছে ২১ টি আর অর্ধশতক ১৬ টি। এ ছাড়া দু শ করেছেন ছয়বার। টি টোয়েন্টিতেও কোহলির ব্যাটিং গড় ৫০ এর ওপর (৫০ দশমিক ৮৫)। ২০১০ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তাঁর টি টোয়েন্টি ক্যারিয়ার শুরু। ৫৭ টি টোয়েন্টি ম্যাচে ৫৩ ইনিংসে তাঁর মোট রান ১ হাজার ৯৮৩। কোনো শতক না থাকলেও ১৮টি অর্ধশতক আছে ভারতীয় ডানহাতি এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানের। টি টোয়েন্টিতে তাঁর সর্বোচ্চ রান ৯০।

ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) ২০০৮ সালে প্রথম ম্যাচ খেলেন কলকাতার হয়ে। আইপিএলে ১৪৯ ম্যাচের ১৪১ ইনিংসে তাঁর মোট রান ৪ হাজার ৪১৮। জনপ্রিয় এই টুর্নামেন্টে ৩৭ দশমিক ৪৪ গড়ে সর্বোচ্চ রান ১১৩। আইপিএলে তাঁর শতক ৪টি আর অর্ধশতক ৩০টি। ২০১৪ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ভারতীয় অধিনায়ক ধোনি চোটে পড়লে অধিনায়কের দায়িত্ব পান কোহলি এবং ৪ নম্বর ভারতীয় হিসেবে অধিনায়কত্ব পাওয়ার প্রথম ম্যাচে শতক করেন। ওই সিরিজেই অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন ধোনি, কোহলি তাঁর জায়গা পাকা করে নেন। তাঁকে সবচেয়ে সফল অধিনায়কদের একজনও মানেন অনেকে।

২০১৩ সালে বলিউড-কন্যা আনুশকা শর্মার সঙ্গে মন দেওয়া-নেওয়া শুরু করেন। শ্যাম্পুর বিজ্ঞাপণের শুটিংয়ে তাঁদের প্রথম পরিচয় হয়েছিল। দীর্ঘদিনের প্রেমের অধ্যায় চুকিয়ে ২০১৭ সালের ১১ ডিসেম্বর বিয়ে করেন কোহলি-আনুশকা। দুই ভুবনের এই জুটি বিরাস্কা নামেও পরিচিত।