পর্দা নামল জু্নিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের

সকাল আটটা। ভোরের আবহ সবে কাটতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছে খুদে বিজ্ঞানীরা। সকাল আটটায় শিক্ষার্থীরা উপস্থিত হয় জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে। কারণ, ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি কমপ্লেক্সে দিনব্যাপী আয়োজিত হয় খুদে বিজ্ঞানীদের এ মিলনমেলা। দেশব্যাপী প্রায় ৫০০ বিজয়ী এতে অংশ নেয়।

ঘড়ির কাঁটা ৯টা ছুঁতেই শুরু হয় পরীক্ষা। এ পরীক্ষায় পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের দুটি করে ছয়টি ছোট সমস্যা ও তিন বিষয়ে ভাগ করে বড় সমস্যা সমাধান করে শিক্ষার্থীরা।

পরীক্ষা শেষে শুরু হয় বিজ্ঞান–বক্তৃতা। শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে বিজ্ঞান বিষয়ে কথা বলেন। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন বিচারকেরা। এরপরই শুরু হয় বিজ্ঞান জাদুঘরের আয়োজনে বিজ্ঞান কুইজ প্রতিযোগিতা। বিজয়ীদের জন্য জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পক্ষ থেকে ছিল শুভেচ্ছা পুরস্কার। এরপর বিনা মূল্যে জাদুঘরের প্রদর্শনীগুলো ঘুরে দেখে শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে ছিল সিক্স-ডি মুভি দেখার সুযোগ। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পিতা–মাতারও ঘুরে দেখার সুযোগ ছিল। মাঝখানে দুপুরের খাবারের পর রোবট শো দেখে শিক্ষার্থীরা। সঙ্গে ছিল বিজ্ঞানবিষয়ক মুক্ত আলোচনা ও রোবট নিয়ে প্রশ্নোত্তর পর্ব।

এরপর শুরু হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব। ‘ব্ল্যাকহোল দেখা না গেলে আমরা এর ছবি তুলি কীভাবে?’—এমনই সব কৌতূহলী প্রশ্ন ছুড়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। সবার প্রশ্নের জবাব দেন শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।

বিকেল চারটায় শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতির সহসভাপতি মুনির হাসান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী, বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লাফিফা জামাল, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নোভা আহমেদ, আল–আরাফাহ্‌ ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক সাব্বির আহমেদ ও সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জালাল আহমেদ, জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘরের পরিচালক এ কে এম লুৎফুর রহমান সিদ্দীক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মুশতাক ইবনে আয়ুব।

মুশতাক ইবনে আয়ুব বলেন, ‘বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে হলে দুটি গুণের দরকার। পর্যবেক্ষণক্ষমতা ও উদার মন। তোমাদের এই গুণগুলো চর্চা করতে হবে।’

ফারসীম মান্নান মোহাম্মদী বলেন, ‘এবারের ব্যাংকক আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের প্রশ্ন খুব কঠিন হবে। এবারের আইজেএসও আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং হবে। এ জন্য আমাদের কৌশলী হতে হবে।’

মুনির হাসান বলেন, ‘মানুষের সঙ্গে পশুপাখির পার্থক্য হলো মানুষ বই পড়ে। তার অর্জিত জ্ঞান, অর্জিত অভিজ্ঞতা এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মের জন্য লিখে যেতে পারে। এটাই তার বড় গুণ।’

এরপর শুরু হয় পুরস্কার বিতরণী। জাতীয় পর্বে তিন ক্যাটাগরিতে মোট ৫২ জনকে পুরস্কার দেওয়া হয়। ১২ জন চ্যাম্পিয়ন, ১৭ জন ফার্স্ট রানারআপ, ২৩ জন সেকেন্ড রানারআপ।

উল্লেখ্য, জাতীয় পর্যায়ের বিজয়ীদের নিয়ে ১০ থেকে ১২ সেপ্টেম্বর আয়োজন করা হচ্ছে নবম বিডিজেএসও জাতীয় ক্যাম্প। সেখান থেকে আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডের জন্য ছয়জনের দল ঘোষণা করা হবে। তারাই ২০তম আন্তর্জাতিক জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াডে থাইল্যান্ডে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবে।

নবম বাংলাদেশ জুনিয়র সায়েন্স অলিম্পিয়াড যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশ বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণ সমিতি (এসপিএসবি), বাংলাদেশ ফ্রিডম ফাউন্ডেশন (বিএফএফ) এবং জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি জাদুঘর। টাইটেল স্পনসর হিসেবে ছিল আল–আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক। সহযোগী হিসেবে ছিল প্রথম আলো ও ম্যাসল্যাব। ম্যাগাজিন পার্টনার হিসেবে ছিল বিজ্ঞানবিষয়ক মাসিক ম্যাগাজিন বিজ্ঞানচিন্তা ও কিশোর আলো।

জাতীয় পর্বের ফলাফল এবং অন্যান্য বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে বিডিজেএসওর ওয়েবসাইটে। ওয়েবসাইট লিংক: www.bdjso.org।