শহরের রাস্তা সাধারণত ফাঁকা পাওয়া খুব কঠিন। তবু সাইক্লিংয়ের সময় রাস্তা একটু ফাঁকা পেলে নিশ্চয়ই তোমারও খুব জোরে চালাতে ইচ্ছা করে। একটু স্পিডে চালাতে গিয়েই নিজেকে সাইকেল রেসের ট্র্যাকে ভেবে বোসো না আবার। সাইকেল রেসের জন্য আছে বড় বড় ট্র্যাক, বড় বড় প্রতিযোগিতার আসর।
চলছে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’ খ্যাত অলিম্পিক গেমস। গ্র্যান্ড ট্যুরের পর সাইক্লিং রেসের সবচেয়ে বড় ও মর্যাদাপূর্ণ ইভেন্টগুলো হয় এখানেই। পৃথিবীর বাঘা বাঘা সব সাইক্লিস্ট এসে হাজির হন অলিম্পিকে। চেষ্টা চলে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার। স্বর্ণ, রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ জয়ের নেশায় সব ইভেন্টের মতো সাইক্লিংয়ের ইভেন্টগুলোও হয়ে ওঠে জমজমাট। ৪টি বিভাগে ২২টি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হচ্ছে সাইক্লিংকে ঘিরে। অলিম্পিকের সাইক্লিং নিয়েই এবারের আয়োজন ‘সাইকেলম্পিক’!
অলিম্পিকে সাইকেলের ইতিহাস
খ্রিষ্টপূর্ব অষ্টম শতাব্দীতে প্রথম অলিম্পিকের আয়োজন করা হয়। তবে ১৮৯৬ সালে আধুনিক অলিম্পিকের প্রথম আসর বসে গ্রিসের এথেন্স শহরে। সে বছর থেকেই সাইক্লিং ইভেন্ট চালু হয়। সাইকেলকে ঘিরে সে সময় ছিল মাত্র ছয়টি ইভেন্ট। বর্তমানের ইভেন্টের সঙ্গে সে সময়ের ইভেন্টগুলোর অনেকটা পার্থক্য ছিল।
অলিম্পিকের সাইক্লিং ইভেন্টের ইতিহাস ১০০ বছরের বেশি। প্রায় ৩০টি আসরে অনেক অনেক পদকজয়ী সাইক্লিস্ট থাকলেও, প্রথম পদকজয়ীদের ব্যাপারটা একটু আলাদা। সেবার সাইকেলের ছয়টি ইভেন্টের মধ্যে চারটিতেই পদক জিতে নেন ফরাসি দুই সাইক্লিস্ট। লিওন ফ্লেমিং ও পল ম্যাসেন নামের এই দুই ফরাসি সাইক্লিস্ট জিতে নেন চারটি স্বর্ণ এবং একটি করে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জ।
আধুনিক অলিম্পিকের সব আসরেই সাইক্লিং ইভেন্ট ছিল। প্রথম আসরে দুই ফরাসির জয়জয়কার ধারবাহিকভাবে আছে আজও। প্রথম আধুনিক অলিম্পিক থেকে শুরু করে এখনো সাইক্লিং ইভেন্টের পদক তালিকায় সবার ওপর রয়েছে ফ্রান্সের নাম। সাইক্লিংয়ে ৪১টি স্বর্ণসহ মোট ৯১টি অলিম্পিক পদক আছে ফ্রান্সের ঝুলিতে। তালিকার সেরা ১০ দেশের মধ্যে ৭টিই ইউরোপের। যেন ইউরোপের দেশগুলোই শাসন করছে অলিম্পিকের সাইক্লিং!
অলিম্পিক সাইক্লিং ইভেন্টের টুকিটাকি
টোকিও ২০২০ অলিম্পিক সাইক্লিংয়ে মোট ৪ ফরম্যাটে প্রতিযোগিতা হয়। ১১ ধরনের ইভেন্টে পুরুষ ও মহিলারা আলাদাভাবে মোট ২২টি ইভেন্টে অংশ নেন। চলো জেনে নিই সেসব ফরম্যাট ও ইভেন্ট সম্পর্কে।
রোড সাইক্লিং (৪): সাইকেল রেসের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফরম্যাট রোড সাইক্লিং। এই ফরম্যাটের সব ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয় রাস্তায়। রোড রেস ও টাইম ট্রাভেলে মোট ৪টি ইভেন্টে পদকের জন্য লড়েন সাইক্লিস্টরা।
মাউন্টেন বাইকিং (২): মাউন্টেন বাইকিং ফরম্যাটের একমাত্র ইভেন্ট ‘ক্রস কান্ট্রি’। সবচেয়ে লম্বা পথ সাইক্লিং করতে হয় এই ইভেন্টে। এই ইভেন্টের পদকের লড়াইয়ে মাউন্টেন বাইক চালিয়ে পাড়ি দিতে ৪০ কিলোমিটার পথ।
বিএমএক্স (৪): বিএমএক্স রেসিং ও বিএমএক্স ফ্রি স্টাইল সাধারণ সাইক্লিংয়ের চেয়ে অনেকটা আলাদা রকম ইভেন্ট। বিএমএক্স বাইকে করে আঁকাবাঁকা ও উঁচু-নিচু পথ পার করতে হয় এই ইভেন্টে। বিএমএক্স ফ্রি স্টাইল ইভেন্ট অলিম্পিকে আকর্ষণীয় ইভেন্টগুলোর একটি।
ট্র্যাক সাইক্লিং (১২): অলিম্পিকে সবচেয়ে বেশি ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয় ট্র্যাক সাইক্লিং ফরম্যাটে। দলীয়ভাবে সাইক্লিং করার সুযোগ রয়েছে এই ফরম্যাটে। টিম স্প্রিন্ট ও টিম পারস্যুট (Pursuit) ইভেন্ট দুটিতে দলীয়ভাবে অংশ নেন সাইক্লিস্টরা। স্প্রিন্ট, কেরিন (Keirin), ম্যাডিসন (Madison) ও অমনিয়াম (Omnium) ইভেন্টগুলোয় সাইক্লিং ট্র্যাকে এককভাবে অংশ নেন সাইক্লিস্টরা।
টোকিও অলিম্পিকে সাইক্লিং বিভাগে ৬৬টি পদকের লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছেন ৭১টি দেশের ৫১০ জন সাইক্লিস্ট। এ ছাড়া আরও ২০ সাইক্লিস্ট অলিম্পিকে অংশ নিচ্ছেন রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটি ও শরণার্থী অলিম্পিক দলের হয়ে। এত এত ইভেন্ট শেষে পদক তালিকায় কোন দেশ শীর্ষস্থান দখল করবে, সেটাই দেখার পালা।
বাংলাদেশ ১৯৮৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেস অলিম্পিকে প্রথমবারের মতো অংশ নেয়। সেবার থেকে নিয়মিত অলিম্পিক আসরেই অংশ নেয় । তবে সাইক্লিংয়ের কোনো ইভেন্টে এখনো অংশ নেওয়ার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। পেশাদার সাইক্লিংয়ে তোমার আগ্রহ থাকলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে পারো। হয়তো তোমার হাত ধরেই অলিম্পিকের সাইক্লিংয়ে বাংলাদেশের পতাকা উড়বে একদিন।