চলে এসেছে আরেকটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের সপ্তম বিশ্বকাপ বসেছে ওমান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ভারতে হওয়ার কথা থাকলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে বিশ্বকাপের ভেন্যু বদলে গিয়েছে রাতারাতি। আইপিএল দিয়ে বিশ্বকাপের ড্রেস রিহার্সেলও সেরে ফেলেছে আরব আমিরাত। বাকি শুধু বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর।
কিন্তু বিশ্বকাপ মাঠে গড়ালেও বিশ্বকাপ কাঁপানো খেলোয়াড়দের অনেকেই যাচ্ছেন না ওমানে। কেউ চোটে ভুগে, কেউ আবার ক্রিকেটকেই বলেছেন বিদায়। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টির সেরা যেসব তারকাকে দেখা যাবে না এবারের বিশ্বকাপে, তাঁদের নিয়েই আজকের লেখা।
তামিম ইকবাল
বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ওপেনার তিনি। কিন্তু এবারে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ মিশন শুরু হচ্ছে তাঁকে ছাড়াই। চোটের কারণে অনেক দিন ধরেই ছিলেন দলের বাইরে। খেলেননি অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেও। যে কারণে বিশ্বকাপের আগে আগে ফিট হলেও নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন আগেভাগেই। কারণটা স্পষ্ট, চাইছেন না দলে উড়ে এসে জুড়ে বসতে। বিশ্বমঞ্চে তাঁকে ছাড়া বড় একটা পরীক্ষার মধ্যেই পড়তে হবে বাংলাদেশকে।
মহেন্দ্র সিং ধোনি
খেলার ফরম্যাট যখন টি-টোয়েন্টি, মহেন্দ্র সিং ধোনির নাম তখন আসবেই। টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটকে জনপ্রিয়তায় আনার পেছনেও তাঁর ভূমিকা কম নয়। নতুন এক দল নিয়ে ২০০৭ সালে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ শিরোপা উঁচিয়ে ধরেছিলেন লম্বা চুলের ধোনি। সেই থেকে টি-টোয়েন্টি আর মহেন্দ্র সিং ধোনি একে অপরের পরিপূরক। গত বছরের মাঝামাঝি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলেছেন তিনি। যে কারণে এবার উইকেটের পেছনে দেখা যাবে না ‘ক্যাপ্টেন কুল’কে।
তাই বলে ভেবো না মহেন্দ্র সিং ধোনির সান্নিধ্য পাচ্ছে না বিশ্বকাপ। আইপিএল শিরোপা জিতে আরব আমিরাতেই থেকে যাচ্ছেন তিনি। বিশ্বকাপে ভারত দলের সঙ্গে তিনি থাকছেন মেন্টর হয়ে। খেলোয়াড় হিসেবে না থাকলেও বিশ্বকাপে তিনি থাকছেনই।
এবি ডি ভিলিয়ার্স
‘মিস্টার ৩৬০’ নামে পরিচিত এবি ডি ভিলিয়ার্স। উইকেটের চারপাশে তাঁর মতো সুনিপুণভাবে খেলতে পারেন এমন কয়জন আছে বর্তমান বিশ্বে? দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বিশ্বকাপে দেখা যাবে না এবিকে। ২০১৮ সালে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর থেকে ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটে নিয়মিতই খেলছেন দক্ষিণ আফ্রিকার এই কিংবদন্তি।
লাসিথ মালিঙ্গা
টি-টোয়েন্টিকে ব্যাটসম্যানদের খেলা মনে করেন অনেকেই। এই ব্যাটসম্যানদের খেলাতেও বল হাতে ত্রাস সৃষ্টি করেছেন লাসিথ মালিঙ্গা। অন্য রকম বোলিং স্টাইল দিয়ে আজীবনই ক্রিকেটপ্রেমীদের নজরে ছিলেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কা দলের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু চোটের কারণে অনেক দিন বাইরে থাকায় অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। ফলে শুধু বিশ্বকাপ নয়, আর কোনো ফরম্যাটেই তাঁকে বল হাতে দেখা যাবে না তাঁকে।
শিখর ধাওয়ান
একসময় ভারতের ওপেনিং লাইনআপ মানেই রোহিত শর্মা আর শিখর ধাওয়ান। আস্তে আস্তে সে তালিকায় পরিবর্তন এসেছে। কয়েক বছর ধরেই ধাওয়ানের ফর্মটা পড়তির দিকে। কে এল রাহুলের উত্থান আর বিরাট কোহলির ওপেনিংয়ে ভালো খেলার কারণে ধাওয়ানকে বাদ দেওয়ার সাহসটা পেয়েছে ভারত। আইপিএলেও তেমন কিছু করে দেখাতে পারেননি বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়ার জন্য। যে কারণে তাঁকে ছাড়াই বিশ্বকাপ দেখতে হবে দর্শকদের।
বেন স্টোকস
বর্তমান ক্রিকেটের সেরা অলরাউন্ডারদের তালিকা করা হলে ওপরের দিকেই থাকবে বেন স্টোকসের নাম। কিন্তু গত বিশ্বকাপটা হয়ে আছে বেন স্টোকসের জীবনের কালো অধ্যায়। শেষ ওভারে ২১ রান দিয়ে বিশ্বকাপটা হাতছোঁয়া দূরত্বে রেখে বেরিয়ে আসতে হয়েছিল তাঁকে। সেখান থেকে নিজের ক্যারিয়ারকে ১৮০ ডিগ্রি ঘুরিয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। নিজে সামনে থেকে জিতিয়েছেন বিশ্বকাপ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অ্যাশেজের সে বীরত্বগাথা কে ভুলবে? এবারে সুযোগ ছিল ইংল্যান্ডের দর্শকদের হাতে সেই শিরোপা তুলে দেওয়ার। কিন্তু আঙুলের চোটে পুরো বিশ্বকাপই মিস হতে যাচ্ছে তাঁর।
কার্লোস ব্রাথওয়েট
বেন স্টোকসের কথা এলে মনে পড়বে কার্লোস ব্রাথওয়েটের কথাও। গত বিশ্বকাপে রাতারাতি এক ম্যাচের নায়ক হয়ে উঠেছিলেন ব্রাথওয়েট। ফাইনালে টার্গেট ছিল ৬ বলে ২১ রান। বেন স্টোকসের ৪ বলে ৪ ছক্কা মেরে দ্বিতীয়বারের মতো ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতিয়েছিলেন ব্রাথওয়েট। গতবার ফাইনালের শেষ ওভারের নায়ক-খলনায়ক কাউকেই দেখা যাবে না এবারের বিশ্বকাপে।
জফরা আর্চার
গত কয়েক বছরে রাতারাতি পেস বোলিংয়ে নিজের নাম উঁচুতে উঠিয়েছেন জফরা আর্চার। অসাধারণ বোলিংয়ে ইংল্যান্ডের। অন্যতম ভরসা হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু কনুইয়ের চোটে পুরো বছরের জন্য ছিটকে পড়েছেন আর্চার। ফলে তাঁকেও মিস করবে দর্শকেরা।
সুনীল নারাইন
টি-টোয়েন্টির ফেরিওয়ালা বলা হয় তাঁকে। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলোতে নিয়মিতই খেলেন। এবারের আইপিএলেও ছিলের দারুণ ফর্মে। কিন্তু দিন শেষে তাঁকে ছাড়াই দল গঠন করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। টি-টোয়েন্টির অন্যতম সেরা অলরাউন্ডারকে দেখা যাবে না বিশ্ব আসরে।
বিশ্বকাপের এই আসরে এত নাম না থাকলেও রোমাঞ্চ কিন্তু থাকবে ঠিকই। টি-টোয়েন্টির জগতে এক রাতেই রাতারাতি হিরো হয়ে যেতে পারে যে কেউ। আবার এক রাতেই সর্বস্ব হারিয়ে ফেলাও সম্ভব। ২০ ওভারের খেলা এ রকমই!