কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছিলাম না কোত্থেকে শুরু করব এই লেখা। আধা ঘণ্টা ধরে কি-বোর্ডটা কেমন বোকা বোকা বোবা হয়ে পড়ে আছে। আঙুলের ডগায় জমা হতে থাকা শব্দেরা নিশপিশ করছে অক্ষরে রূপান্তরিত হতে। ঠিক তখন মনে হচ্ছিল, পরতে পরতে ঠাসা নাটকীয়তার এই গল্পের কোনো শুরু নেই, শেষ নেই। অনেকবার পড়া যেন প্রিয় কোনো বই। আপন মনে বুকশেলফ থেকে টেনে বের করে যেকোনো পৃষ্ঠা থেকে পড়তে শুরু করে দিলেই হয়!
২০১১ বিশ্বকাপ, তাঁর জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময়। নিজের দেশে বিশ্বকাপ, অথচ দলে রাখা হলো না মাশরাফি বিন মুর্তজাকে। দুঃসময় যখন আসে, চারদিক থেকে বাঁধভাঙা বানের জলের তোড়ের মতোই নাকি ধেয়ে আসে। মাঠের কঠিন সময়টার চেয়েও মাশরাফি মুখোমুখি হলেন জীবনের ধূসর উইকেটে। প্রথমবারের মতো বাবা হতে যাওয়ার রোমাঞ্চ ফিকে হতে হতে তখন তিনি শুধু একটাই প্রার্থনায়: আল্লাহ, বউডারে বাঁচায়ে দাও!
তাঁর স্ত্রী সুমী তখন আইসিইউতে। মাশরাফি আর তাঁর স্বজনদের বুক প্রতিমুহূর্তে ধুকপুক করে, এই বুঝি সেই দুঃসংবাদটা শুনতে হয়! মাশরাফি নিজের ভেতরে কুঁকড়ে যেতে থাকেন এই ভেবে, ‘সুমী কেন বলল ওই কথা?’ ওটিতে নেওয়ার সময়, হয়তো মজা করেই বলা, সুমী মাশরাফিকে তাঁর প্রিয় ডাকনাম ধরে বলেছিলেন, ‘কৌশিক, কিছু ভুল করে থাকলে ক্ষমা করে দিয়ো!’
মাশরাফির অপরাধবোধ কিছুতেই কাটে না। ভুল তো তিনিই করেছেন। নড়াইলের ঘুমঘুম একটা মফস্বল শহর থেকে বিয়ে করে সুমীকে এনে ফেলেছেন রাজধানী শহরে, ক্রিকেটের গ্ল্যামারে; এর চেয়ে বড় কথা, জড়িয়ে ফেলেছেন তাঁর পরতে পরতে জমে থাকা অনিশ্চয়তামাখা জীবনের জটিলতায়।
জীবন মাশরাফিকে শিখিয়েছে সব সময় একটা বড় ট্র্যাজেডির জন্য প্রস্তুত থাকতে। রাম সন্যা লোকটাকে মাশরাফি চেনেন না। তবে তিনি জানেন, হাসির পরে সত্যিই বাঘের মতো ওত পেতে থাকে কান্না। তবে এও কি সত্যি নয়, কান্নার পরেও লুকিয়ে থাকে হাসি!
এ কারণেই বুঝি মাশরাফি জীবনটাকে সরল দর্শনে বদলে নিয়েছেন। এ কারণে হাসির প্রতিটা মুহূর্ত তিনি তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে চান। হাসির পৃষ্ঠা উল্টে কখন কান্না হাজির হবে, তিনি নিজেও যে জানেন না।
যেমন হাজির হয়েছিল ২০১৫ বিশ্বকাপে। গত বিশ্বকাপের হতাশা যিনি মুছে দেবেন বলে পণ করেছিলেন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দলে মাশরাফি-অধ্যায়ের নতুন সূচনা হয়েছে যখন; সেই মুহূর্তে তিনি আবারও শুনলেন দুঃসংবাদ। এবার দ্বিতীয় সন্তানকে ঘিরে। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাঠে বাংলাদেশ যখন একের পর এক সাফল্যে আমাদের হাসিতে ভরিয়ে দিচ্ছে; ভেতরে-ভেতরে মাশরাফি তখন কী এক ঝড় সামলে নিচ্ছেন, কেউ জানে না! তাঁর সদ্যজন্ম নেওয়া ছেলেকে নিয়ে তখন একের পর এক সংকটের খবর।
আপন মনে তাঁর জীবনের পৃষ্ঠা ওল্টাতে ওল্টাতে দুটো বিশ্বকাপের গল্প বলে ফেলার পর মনে হলো, এও হয়তো কাকতালীয় নয়। একজন খেলোয়াড়ের জীবনে সবচেয়ে বড় মঞ্চ বিশ্বকাপ। মাশরাফির কাছে তাঁর গত দুুটি বিশ্বকাপ এসেছিল অদ্ভুত অভিজ্ঞতার পসরা নিয়ে। মানুষ মাশরাফিকে বুঝতে হলে এই দুটি বিশ্বকাপে পর্দার আড়ালে ঘটে যাওয়া তাঁর জীবনের সব সংকটকে বুঝতে হবে।
দুটির সঙ্গেই জড়িয়ে আছে তাঁর দুই সন্তানের জন্ম। এর মধ্যে যে অন্য এক মাশরাফির জন্ম নেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে চলেছে; তা আমরাও বুঝেছি ঢের পরে।
জীবন তাঁর জন্য চলমান এক শিক্ষাসফর। নিজের সেরা সময়টার মধ্যে চলতে চলতেই অকস্মাত্ এক ইনজুরি তাঁকে ছিটকে দিয়েছে বারবার। মাশরাফি মজা করে বলেন, এত এতবার নিজেকে অস্ত্রোপচার টেবিলে শুইয়ে দিয়েছেন, যেকোনো অর্থোপেডিকস চিকিত্সকের চেয়ে তিনি কম জানেন না! তাঁর সবচেয়ে পরিচিত চিকিত্সক ডেভিড ইয়াংয়ের কাছে শেষবার যখন গেলেন, অস্ট্রেলীয় এই ডাক্তার জানতে চেয়েছিলেন, ‘কৌশিক, কী করছ তুমি এখন?’ মাশরাফি বললেন, ‘কেন, খেলছি।’
ইয়াং তাঁর চশমার ফাঁক দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছিলেন, ছেলেটা তাঁর সঙ্গে রসিকতা করছে কি না। ইয়াং তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে জানতেন, এত এত অস্ত্রোপচারের পর অনেকের স্থায়ী ঠিকানা হয়ে যায় হুইলচেয়ার। কেউ কেউ ঠিকমতো সিঁড়ি ভাঙতেই পারে না, টলোমলো পায়ে হাঁটাতেই খুশি। কিন্তু মাশরাফি চিকিত্সাবিজ্ঞানের সব সংজ্ঞাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন। মাশরাফি ভুল প্রমাণ করে দিয়েছেন যেকোনো প্রত্যাবর্তনের গল্পকেও। রূপকথা শব্দটিকেও যাঁর সামনে বড় বিবর্ণ লাগে!
এই অভিজ্ঞতাগুলোর ভেতর দিয়ে না হাঁটলে, সত্যি বলতে কি, আজকের মাশরাফিকে আমরা হয়তো পেতামই না। মাশরাফি প্রথম যখন দলে এলেন, কিংবদন্তিতুল্য কোচ ডেভ হোয়াটমোরের সৌজন্যে তাঁর একটা ডাকনাম বিখ্যাত হয়ে গেল—পাগলা। ডেভ এখনো তাঁকে এই নামেই ডাকেন।
সেই পাগলা সত্তা এখনো বেশ ভালোভাবেই জাঁকিয়ে বসে আছে তাঁর ভেতরে। এই পাগলা মাশরাফি তাই এখনো দলের সবচেয়ে নবীন সদস্য তাসকিনকে বেছে নিতে পারেন ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত উদ্যাপনগুলোর একটির জন্ম দিতে। দলের মধ্যে এখনো দুষ্টুমির প্রতিযোগিতায় তাঁর সঙ্গে পেরে উঠবে না কেউ। সে সময় তিনি যেন চিত্রার বুকে ঝাঁপ দেওয়া কিংবা পড়শির পেয়ারাগাছটা সাফ করে দেওয়া সেই দুরন্ত কিশোরটিই। আবার ক্রিকেটীয় প্রজ্ঞায় অধিনায়ক মাশরাফি গত প্রায় আড়াই বছরে একের পর এক চমক দিয়ে আমাদের বিবশ করে রেখেছেন।
বাংলাদেশের ক্রিকেট পৌঁছে গেছে তাঁর স্মরণীয় সাফল্যের সময়টায়। ক্রিকেট নিয়ে এত এত উন্মাদনার মধ্যেই আবার মাশরাফি চমকে দিয়ে বলছেন, ক্রিকেটার নিয়ে এত উন্মাদনার কারণ তিনি দেখেন না। ক্রিকেটাররা হিরো নন, তাঁরা এন্টারটেইনার। বিনোদন দেওয়াই তাঁদের কাজ। বলেছেন, ‘আমাদের নিয়ে কিছু মোহ তৈরি হয়েছে। সেই মোহ আজ আমি ভেঙে চূর্ণ করে দিতে চাই। আমরা কিন্তু এন্টারটেইনার, বিনোদন দেওয়া আমাদের কাজ। আমরা নায়ক নই। সত্যিকারের নায়ক আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বীর লড়াকুরা। জাতির জন্য আমরা এমন কিছু আত্মত্যাগ করি না, যেটা করেছেন মুক্তিযোদ্ধারা। আমাকে ভুল বুঝবেন না। ক্রিকেটই সবকিছু নয়, আমরা শুধু চেষ্টা করে যাই এই জাতির মুখে হাসি ফোটানোর।’
কী অকপট স্বীকারোক্তি! পৃথিবীর সব দেশেই তাদের ক্রীড়া তারকাদের ‘হিরো’ বানানো হয়। বাংলাদেশ বা ভারতে যেমন ক্রিকেটাররা; ব্রাজিল-আর্জেন্টিনায় একই উন্মাদনা চলে ফুটবলারদের নিয়ে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো ক্রীড়া তারকাকে নিজ মুখে এভাবে বলতে শুনিনি কখনো। এ কারণেই তিনি মাশরাফি। এ কারণেই তিনি সারা বিশ্বের সব ক্রীড়া তারকার চেয়ে আলাদা।
মাশরাফি কথাটা শুধু বলার জন্য বলেননি। মন থেকে বিশ্বাস করেন বলেই বলেছেন। বারবার বলেছেন। ক্রিকেটকে দেশপ্রেমের প্রতীক বানানোর মধ্যেও তাঁর আপত্তি আছে। ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, একটা দেশ এগিয়ে যায় অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে। এর একটা অংশ খেলাধুলা। আর খেলাধুলার একটা অংশ ক্রিকেট। কিন্তু সব ছাপিয়ে ক্রিকেটটাই যখন বড় হয়ে ওঠে, মাশরাফি বলেন, ‘ক্রিকেট কখনো দেশপ্রেমের প্রতীক হতে পারে না। সোজা কথায় খেলাধুলা হচ্ছে একটা বিনোদন।’
এই যে দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ক্রিকেটের আলোচনায় আড়াল হয়ে যায়, সেটিও পছন্দ নয় মাশরাফির। রাষ্ট্রীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে তরুণ প্রজন্ম কথা বলুক, তিনি তা-ই চান। কিন্তু বারবার দেখা গেছে, সামাজিক মাধ্যমে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলো নিয়ে বিতর্ক জমতে না-জমতেই ক্রিকেটের স্রোতে সব ভেসে গেছে। কখনো কখনো ক্রিকেটের প্রতি অন্ধ ভালোবাসা আমাদের চোখে ঠুলি পরিয়ে দিচ্ছে। অন্ধত্ব কোনো অর্থেই তো ভালো নয়!
মাশরাফি বরং কড়া ভাষায় বলেছিলেন, দেশের সত্যিকারের সমস্যাগুলোর বেলায় আমরা উটপাখি হয়ে থাকি, পালিয়ে যেতে চাই। এ কারণেই ঢাল হিসেবে ব্যবহার করি ক্রিকেট। বলেছেন, ‘খেলা কখনো দেশের প্রধান আলোচনা হয়ে উঠতে পারে না। দেশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার আছে, যার সমাধান বাকি। সেখানে পুরো জাতিরাষ্ট্র এভাবে ক্রিকেট নিয়ে ব্যস্ত হয়ে থাকতে পারে না। আমাদের সবচেয়ে বড় তারকা বানানো হচ্ছে, বীর বলা হচ্ছে, মিথ তৈরি করা হচ্ছে। এগুলো সবই বাস্তবতা থেকে পালানোর ব্যাপার।’
মাশরাফির কাছে তারকা হচ্ছেন একজন চিকিত্সক, যিনি জীবন বাঁচাতে পারেন। একজন লেখক, যিনি সমাজের মানস তৈরি করেন। একজন শিল্পী, যিনি তাঁর গান-চিত্রকর্ম-অভিনয় দিয়ে মানুষকে ‘মানুষ’ বানাতে পারেন।
মাশরাফির কাছে হিরো হচ্ছেন আমাদের দেশের কৃষকেরা; যাঁরা কী ছোট্ট একটা চাষের ভূখণ্ড নিয়ে ১৬ কোটি মানুষের মুখের খাবার ঠিক জোগান দিয়ে যাচ্ছেন। মাশরাফির কাছে সত্যিকারের হিরো আমাদের দেশের ও প্রবাসের শ্রমিকেরা; যাঁরা রোদ-ঝড় গায়ে মেখে দেশের মেরুদণ্ডের ইট গেঁথে চলেছেন প্রতিদিন।
মাশরাফির কাছে আসল হিরো আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা। জীবন চলে যাবে জেনেও যাঁরা একটুও ভয় পাননি। চলে গেছেন যুদ্ধক্ষেত্রে। সেই মুক্তিযোদ্ধারা না থাকলে আজ মাশরাফিরা যে লাল-সবুজ পতাকাটাই পেতেন না।
মাশরাফি মনে করেন, ক্রিকেটাররা নিজের দায়িত্ব ঠিক করে পালন করছেন। নিজের দায়িত্বটা ঠিকমতো পালন করাও দেশপ্রেম। যার কাজ পড়াশোনা করা, সে ঠিকমতো পড়াশোনা করুক। মাশরাফি আরও বলেছেন, ‘যারা ক্রিকেটে দেশপ্রেম দেশপ্রেম বলে, তাদের প্রত্যেকে যদি এক দিন রাস্তায় কলার খোসা ফেলা বন্ধ করত, রাস্তায় থুতু না ফেলত, এক দিন সবাই ট্রাফিক আইন মানত, তাহলেও দেশটা বদলে যেত। নিজের কাজটা যদি সততার সঙ্গে সবাই একটা দিনও মানে, সেটাই সত্যিকারের দেশপ্রেম দেখানো।’
তার মানে এমন নয় ক্রিকেটকে, ক্রিকেটের অবদানকে তিনি খাটো করছেন। ক্রিকেট হতে পারে সারা বিশ্বে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, তার একটা প্রতীক। শুভেচ্ছাদূত। কিন্তু এখানেও কথা আছে তাঁর। শুধু একটা খেলা দিয়েই কোনো দেশের সত্যিকারের প্রতিনিধিত্ব হতে পারে না। মাশরাফির তাই অন্তহীন আক্ষেপ, বাকি খেলাগুলো নিয়ে আমাদের কেন মাথাব্যথা নেই কারও। অন্য খেলায় যে সাফল্যগুলো আসছে, সে নিয়ে সারা দেশের মানুষ কি সেভাবে উত্সাহ দিচ্ছে? এ নিয়ে একটা ক্ষোভও আছে তাঁর, ‘আমি ভেতর থেকে বিশ্বাস করি, আমাদের সমর্থন করছেন খুব ভালো। আমার দল কৃতজ্ঞ। কিন্তু সেই মেয়েটিকেও সমর্থন করুন, যে সাফ গেমসে চারটি সোনা জিতে সবার অলক্ষ্যে ঢাকায় ফিরেছে। আমরা যদি স্পোর্টসের লোক হই তো ওই মেয়েটিও স্পোর্টসেরই। সমর্থন জীবনের সব বিভাগে করুন। তাহলেই তো বাংলাদেশ এগোতে পারবে। শুধু ক্রিকেটে পড়ে থেকে কী লাভ?’
এ কারণেই হয়তো প্রথম আলোর তথ্যচিত্র ‘অধিনায়ক ও নায়কেরা’ বানানোর সময় মাশরাফি তাঁর হিরো হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এমন চারজনকে। তাঁদের একজন আবদুল্লাহ, হাঁটুর নিচ থেকে অচল পা’জোড়া যাঁকে দমাতে পারেনি। সদরঘাটের মুটে শ্রমিক আবদুল্লাহ শুধু মাথায় ভারী বস্তা বয়ে নিয়ে যান না; ওই পা’জোড়া দিয়েই খেলেন ফুটবল! কে বলেছে ফুটবলার হতে গেলে এক জোড়া পা লাগে, লাগে স্বপ্ন আর সাহস!
মাশরাফির সত্যিকারের হিরো শারমিনের মতো সেই সব সাহসিকা, যে নিজের বাল্যবিবাহই শুধু আটকায়নি; অন্যদেরও সচেতন করে তুলেছে। স্কুলপড়ুয়া একটি মেয়ের বিয়ে মানেই তো সেখানেই তার স্বপ্নের ইতি! মাশরাফির হিরো সেই স্বল্প আয়ের তরুণ সাইফুল, যিনি সন্ধ্যায় বাড়ি না ফিরে ঘোরেন হাসপাতালে হাসপাতালে। যে রোগীর স্বজন নেই, তাঁর আপনজন হয়ে ওঠেন।
খেলার পৃথিবী থেকেও তাই মাশরাফি নায়ক বেছে নিতে গিয়ে বলেন মাবিয়া আক্তার সীমান্তের কথা, অভাবের সীমানার কাঁটাতার যাঁকে আটকে রাখতে পারেনি। সাউথ এশিয়ান গেমসে মাবিয়া বাংলাদেশকে এনে দিয়েছেন প্রথম সোনা, সেটিও ভারোত্তোলন নামের একটি এ দেশের জন্য অপ্রচলিত একটি খেলায়। মাবিয়ার জন্য তাই লম্বা বারের দুই পাশের লোহার ভারী চাকতি তোলা নয়; তাতে মিশে থাকে আরও অনেক অদৃশ্য ওজনের ভার তোলার দায়! সেই মাবিয়া যখন পদক মঞ্চে আমার সোনা বাংলা গাইতে গাইতে কেঁদে ওঠেন; দেশের সেরা ক্রীড়াবিদদের একজন হয়েও বস্তির ঘরের টিনের চালায় বসবাসের গ্লানি যেন মুছে যায়।
মাশরাফি তাই প্রশ্ন তোলেন, দেশের অন্য খেলার সেরারা অন্তত তাদের প্রাপ্যগুলো ঠিকঠাকমতো কি পাচ্ছে?
আমরা বুঝে যাই, মাশরাফির দৃষ্টিসীমা কত বড়! কত দূর পর্যন্ত চোখ যায় তাঁর! এ কারণেই তিনি হয়তো মাশরাফি। এ কারণেই তিনি হয়তো অধিনায়ক নন, নেতা!
(সূত্র: প্রথম আলো, আনন্দবাজার, দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের লেখা মাশরাফি)
গ্রাফিকস: মনিরুল ইসলাম