মাঠে তাঁরা কাউকে ভয় পান না। প্রতিপক্ষ যতই শক্তিশালী হোক না কেন, ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে হারিয়ে দেন বিপুল বিক্রমে। বাংলাদেশ পায় একের পর এক সাফল্য। সাফল্যের অন্যতম দুই কারিগর মাশরাফি বিন মুর্তজা ও তামিম ইকবালের সঙ্গে কথা হলো সম্প্রতি। ভাবছ ক্রিকেট নিয়ে? উঁহু, কথা হলো ভূত নিয়ে। তোমাদের মতো তাঁদেরও ভূত নিয়ে রয়েছে মজার গল্প। তবে দুজনের ভূতের অভিজ্ঞতা দুই রকম। চলো শোনা যাক মাশরাফি-তামিমের সেসব ভূতের গল্প।
মাশরাফি যখন ভূত
বাংলাদেশ দলের ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক মাশরাফি মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে মজার এক চরিত্র। মাঠে যেমন বীরোচিত ভূমিকা, মাঠের বাইরেও তা-ই। যখন জিজ্ঞেস করা হলো, ভূতের ভয় পেয়েছেন কখনো? মাশরাফির পরিষ্কার উত্তর, ‘না, কখনো ভূতের ভয় পাইনি।’
কেন ভূতের ভয় পাননি, এর একটা ব্যাখ্যা দিলেন, ‘নড়াইলে আমাদের বাড়ির সঙ্গেই বিরাট বাগান। ছোটবেলায় রাতে নিয়মিত ওই বাগান পার হয়ে স্যারের বাসায় পড়তে যেতে হতো। রাত নয়টা, দশটা এমনকি আরও গভীর রাতে বাগানের ভেতর দিয়ে চলাচল করতে হতো। রাতে নিয়মিত বাগানের ভেতর দিয়ে চলাচলের কারণে আপনা-আপনি একধরনের অভ্যস্ততা তৈরি হয়েছে। ভয়টয় আর কাজ করেনি।’
তবে এরপরই মাশরাফি একগাল হেসে বললেন, ‘ভয় পাইনি, তবে ভূতের ভয় দিয়েছি! অবশ্য এ গল্পটা আগেও বলা হয়েছে।’ বায়না ধরি, আরও একবার বলুন। এ গল্প যতই শোনা যায়, ততই শিহরিত-রোমাঞ্চিত হতে হয়। মাশরাফি খুলে দেন গল্পের ঝাঁপি। মুগ্ধশ্রোতা হয়ে শুনতে হয় তা।
রেডওয়ার্থ হলের কথা শুনে থাকবে হয়তো। ডারহামের বিখ্যাত হোটেল। এ হোটেলটা বিখ্যাত কিন্তু ভৌতিক কারণেই! অবশ্য ইংল্যান্ড সফরের সময় বাংলাদেশ দল কখনো সেখানে ভৌতিক ঘটনার মুখোমুখি হয়নি। তবে মুখোমুখি হয়েছে কল্পিত ভূতের। ২০০৫ সালের ঘটনা। তখনকার অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমন গভীর রাতে শুনতে পেলেন বাচ্চার কান্নার শব্দ আসছে বাইরে থেকে। বাচ্চাটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে একটানা কেঁদেই চলেছে।
এমনিতে ভূতের ভয়ে রেডওয়ার্থ হলে কেউ এক রুমে একা থাকতেন না। দুজন, পারলে তিন-চারজন থাকতেন একসঙ্গে। অবশ্য হাবিবুলকে সতীর্থদের সঙ্গে রুম ভাগাভাগি করতে হয়নি। কেননা, সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী শাওন। তো কান্নার শব্দে হাবিবুল আর তাঁর স্ত্রীর একটু একটু ভয় লাগতে শুরু করল। অগত্যা সাহস করে রুম থেকে বেরিয়ে এলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
দরজা খুলেই হাবিবুলের ‘ও মাগো মা’ বলে এক চিত্কার! করিডরে সাদা চাদরে ঢাকা একটা লাশ পড়ে আছে। আর কোথা থেকে যেন ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। যে হাবিবুল দুনিয়ার ডাকাবুকো বোলারকে পিটিয়ে সীমানাছাড়া করেন, তাঁরই কিনা ভয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলার মতো উপক্রম! ঠিক তখন চাদরের ভেতর থেকে একটা মানুষ ফট করে লাফ দিয়ে উঠে বলল, ‘ভয় পাইয়েন না। আমি, আমি।’ চিত্কার-চেঁচামেচি শুনে ততক্ষণে সতীর্থ তাপস-রাজিনও বেরিয়ে এসেছেন পাশের রুম থেকে। ওই ‘আমি’টা ছিলেন মাশরাফি!
অন্ধকারে ছায়াটা কে?
২২ গজে তাঁকে সমীহ করে না, এমন বোলার কমই আছে। ‘মুডে’ থাকলে দুমদাম চার-ছক্কায় নাচিয়ে তোলেন গ্যালারি। মাঠে যতই অসীম সাহসী হন না কেন, ভূতকে কিন্তু ঠিকই ভয় পান তামিম। বললেন, ‘সবাই কমবেশি ভূতের ভয় পায়। ভয় কাজ করে সবার অবচেতন মনেই।’ তামিমের প্রিয় ভূতের সিরিজ ‘জি-হরর’। ওই সিরিজটা দেখে কী যে ভয় পেতেন! তবু দেখতেন। এ ভয়ে বুঝি মজা আছে? তামিমের মুখে সলজ্জ হাসি।
ভূতের গল্প বলতে গিয়ে মনে পড়ল ছেলেবেলায় সেই মানুষটির কথা; যাকে ভয় পেতেন ভীষণ। স্মৃতির পাতা উল্টে তামিম বললেন, ‘ছেলেবেলার সবারই ভয়ের গল্প থাকে। আমাদের এলাকায় (চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ি) একটা লোক ছিল, নামটা মনে করতে পারছি না। তাকে দেখে ভীষণ ভয় পেতাম। একান্নবর্তী পরিবার আমাদের। বাসার সব বাচ্চাই তাকে ভয় পেত। রাস্তায় হেঁটে যেতে দেখলেই ভয়ে লুকাতাম। শুরু হয়ে যেত দৌড়াদৌড়ি। তবে সে কখনো আমাদের ক্ষতি করেনি।’
তা না হয় হলো, এবার একটা ভূতের গল্প শোনান। তামিম হাসলেন। বললেন, ‘ভৌতিক গল্প বলার চেয়ে শুনতে বেশি ভালো লাগে। ছেলেবেলায় ফুপিরা ভূতের গল্প শোনাত। সে গল্প শুনে রাতে ওয়াশরুমে পর্যন্ত যেতে ভয় লাগত!’
একটু দম নিলেন। এরপরই শুরু করলেন ভূতের গল্প, ‘এই তো বছর দুয়েক আগে, জাতীয় দলে খেলছি। ছুটিতে গেলাম বাড়িতে। চট্টগ্রামে তো আমরা একসঙ্গেই থাকি। ওই রাতে ভূতের নানা গল্প হচ্ছিল। সবাই যার যার মতো ভূতের গল্প বলছে। রাতে সাড়ে তিনটা পর্যন্ত ভূতের গল্প শুনে ঘুমাতে গিয়েছি। ঘুম প্রায় এসেও গিয়েছে। হঠাত্ একটা আওয়াজ...। চোখ খুলে দেখলাম অন্ধকার ঘরে একটা ছায়া ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে! ভয়ের চোটে বালিশ-টালিশ জড়িয়ে ধরেছি। নিশ্বাস গরম হয়ে উঠেছে। ভয়ে মুখ থেকে আওয়াজ বের হচ্ছে না...।’
একটু থেমে ঘড়িটার দিকে তাকালেন। তারপর, তারপর কী হলো? আমাদের ব্যাকুলতা দেখে মুখে মৃদু হাসি তামিমের ঠোঁটে। বললেন, ‘হঠাত্ মনে হলো, আরে এক বন্ধু আসার কথা ঢাকা থেকে! রাতে রওনা দিয়ে ভোরেই তো আমাদের বাসায় পৌঁছার কথা। ও যখন কাছে এল, নাম ধরে ডাকলাম। সে উত্তর দিল। তখন ধড়ে পানি এল।’
এবার ঘড়িটার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘আমাকে বাইরে বের হতে হবে। আজ এ পর্যন্তই। সামনে কোনো একদিন আবারও গল্প হবে।’