প্যারা-সাইক্লিং

সাইক্লিং কী? এমন প্রশ্ন বোধ হয় তোমাদের করা ঠিক হবে না। সাইক্লিং ব্যাপারটার সঙ্গে তোমরা সবাই বেশ ভালোভাবেই পরিচিত। তবে প্যারা-সাইক্লিং ব্যাপারটা অনেকেরই অজানা। সহজভাবে বললে প্যারা-সাইক্লিং হলো সাইকেল চালানো, তবে সেটা সাধারণ সাইক্লিং নয়। শারীরিকভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণ বিকলাঙ্গদের সাইক্লিংয়ের মাধ্যমকে বলা হয় প্যারা-সাইক্লিং।

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর অলিম্পিক গেমস। প্রতি চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত অলিম্পিক আসর সমাপ্তির কিছুদিন পরই একই শহরে অনুষ্ঠিত হয় প্যারালিম্পিক গেমস। আধুনিক অলিম্পিক ১৮৯৬ সালে শুরু হলেও প্যারালিম্পিক প্রথম অনুষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে। প্যারালিম্পিক হলো আংশিক বা সম্পূর্ণ বিকলাঙ্গদের একটি আন্তর্জাতিক বহু-ক্রীড়া প্রতিযোগিতা। শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি, মানসিক দক্ষতা—মোটকথা পঞ্চেন্দ্রিয়ের যেকোনো এক বা একাধিক বিকল ইন্দ্রিয়, প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদরাই প্যারালিম্পিকে অংশগ্রহণ করে। প্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদদের সবচেয়ে বড় ক্রীড়া আসর প্যারালিম্পিক।

অলিম্পিক গেমসের সর্বশেষ আসরের পর্দা নামে ৮ আগস্ট। এরপরই ২৪ আগস্ট টোকিও শহরে শুরু হয় প্যারা–অলিম্পিক ২০২০। অলিম্পিকের মতো অনেক ইভেন্টের মধ্যে প্যারালিম্পিকে আছে একঝাঁক প্যারা-সাইক্লিং ইভেন্ট। তবে অলিম্পিকের সাইক্লিংয়ের চেয়ে অনেকটাই আলাদা প্যারালিম্পিকের সাইক্লিং ইভেন্টগুলো। আজ জানব প্যারা-সাইক্লিংয়ের খুঁটিনাটি।

প্যারা-সাইক্লিং ক্যাটাগরি

প্যারালিম্পিকে অংশ নেওয়া ক্রীড়াবিদদের মধ্যে সবার শারীরিক অক্ষমতা এক নয়। তাই প্যারা–সাইক্লিংয়ের ইভেন্টগুলো ভাগ করা হয় সাইক্লিস্টদের আলাদা আলাদা শারীরিক অক্ষমতা অনুযায়ী। প্যারা–সাইক্লিংয়ে অনেকগুলো ইভেন্টে প্রতিযোগিতা হলেও প্যারা-সাইক্লিস্টদের মূলত পাঁচটি ক্যাটাগরি রয়েছে। এই পাঁচটি ক্যাটাগরিকে কেন্দ্র করে ভাগ করা হয় ইভেন্টগুলো। চলো জেনে নিই এই পাঁচ ক্যাটাগরি সম্পর্কে।

বি (ট্যান্ডম বাইসাইকেল)

বি ক্যাটাগরিতে দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী সাইক্লিস্টরা ট্যান্ডম বাইসাইকেল ব্যবহার করে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। একটি ট্যান্ডম বাইসাইকেলে একসঙ্গে একাধিক সাইক্লিস্ট সাইক্লিং করতে পারে। তাই এই ক্যাটাগরির প্রতিযোগীরা দৃষ্টিশক্তিযুক্ত সাইক্লিস্টের (পাইলট হিসেবে পরিচিত) সঙ্গে মিলে সাইকেল চালায়। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী ক্রীড়াবিদরা প্যারালিম্পিকের অন্যান্য ইভেন্টেও বি ক্যাটাগরিতে অংশ নেয়।

এইচ ১-৫ (হ্যান্ডসাইকেল)

এইচ ক্যাটাগরি সেই সব সাইক্লিস্টের জন্য, যারা শরীরের নিচের অংশ প্যারালাইজড, প্যারাপেলজিয়া ও অঙ্গহানির ফলে হ্যান্ডসাইকেল ব্যবহার করে এবং প্যাডেল ঘোরানোর জন্য ব্যবহার করে হাত। এইচ ১-৪ শ্রেণির সাইক্লিস্টরা শারীরিকভাবে নিচু অবস্থানে এবং এইচ ৫ সাইক্লিস্টরা নতজানু অবস্থানে প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

টি ১-২ (ট্রাইসাইকেল)

এই ক্যাটাগরির সাইক্লিস্টরা পেশির টান, অসংযত চলাফেরা ও ভারসাম্যের অভাবের কারণে ট্রাইসাইকেল ব্যবহার করে রেসে অংশ নেয়। ট্রাইসাইকেল ব্যবহারের ফলে সহজে সাইকেলের ভারসাম্য ধরে রাখা যায়। তবে টি ক্যাটাগরির সাইক্লিস্টরা ট্র্যাক সাইক্লিংয়ের কোনো ইভেন্টে অংশ নিতে পারে না। তারা শুধু রোড সাইক্লিংয়ের ইভেন্টগুলোতে অংশ নেয়।

সি ১-৫ (স্ট্যান্ডার্ড বাইসাইকেল)

সি ক্যাটাগরিতে অংশ নেয় সেই সব প্রতিযোগী, যাদের অঙ্গের অভাব, পেশিশক্তির প্রতিবন্ধকতা ও দুর্বলতা রয়েছে। এই ক্যাটাগরির সাইক্লিস্টরা সাধারণ সাইকেল চালিয়ে অংশ নেয় রেসে। প্যারালিম্পিকে সাইক্লিংয়ের মোট ইভেন্টের প্রায় অর্ধেক ইভেন্ট সি ক্যাটাগরির সাইক্লিস্টদের। এই ক্যাটাগরিতে একই রেসে বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগীর দেখা মেলে।

প্যারালিম্পিক ২০২০

সদ্য সমাপ্ত টোকিও প্যারালিম্পিকে মোট ৫১টি ইভেন্টে অংশ নেয় প্যারা-সাইক্লিস্টরা। এবারের আসরে ১৫৩টি পদকের লড়াইয়ে অংশ নিয়েছে ৪৪টি দেশের ২২২ জন প্যারা-সাইক্লিস্ট। এ ছাড়া রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটির হয়ে আরও ৮ প্যারা-সাইক্লিস্ট অংশ নিয়েছে এ বছরের প্যারালিম্পিকে।

টোকিও প্যারালিম্পিকে সাইক্লিং ইভেন্টগুলোর মূলত দুটি ভাগ ছিল। রোড–সাইক্লিং ও ট্র্যাক–সাইক্লিং। রোড–সাইক্লিংয়ে রোড টাইম ট্রায়াল ও রোড রেসের ইভেন্টগুলোতে আলাদাভাবে অংশ নেয় পুরুষ ও নারী প্রতিযোগীরা। তবে রোড রেসের একটি ইভেন্ট হলো দলগত মিশ্র রিলে (এইচ ১-৫)। এই ইভেন্টে নারী-পুরুষ দলগতভাবে অংশ নেয়।

ট্র্যাক–সাইক্লিংয়ে টাইম ট্রায়াল ও ইনডিভিজুয়াল পারস্যুটের ইভেন্টগুলোতে আলাদাভাবে অংশ নেয় পুরুষ ও নারী সাইক্লিস্টরা। রোড–সাইক্লিংয়ের মতো ট্র্যাক–সাইক্লিংয়েরও ছিল একটি মিশ্র ইভেন্ট। এই দলগত মিশ্র স্প্রিন্টে সি ১-৫ ক্যাটাগরির পুরুষ ও নারী সাইক্লিস্টরা দলগতভাবে স্বর্ণ লড়াইয়ে নামে।

অদম্য ইচ্ছাশক্তি

প্যারালিম্পিয়ানরা নিজের শারীরিক অক্ষমতা শক্তিতে পরিণত করেছে। মনের জোরে এগিয়ে গেছে অনেক দূর। বিশাল মঞ্চে দাঁড়িয়ে দেশের হয়ে পদক জিতে দেশকে করছে গর্বিত। প্রত্যেক প্যারালিম্পিয়ানের ঝুলিতে রয়েছে হার না মানার গল্প। বিশ্বজুড়ে থাকা অসংখ্য প্যারালিম্পিয়ানের অদম্য ইচ্ছাশক্তি হতে পারে তোমার অনুপ্রেরণা।