গোলের খেলা ফুটবল। ম্যাচের জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে দেয় এই গোল। আর গোল করার কারিগর হন স্ট্রাইকাররা। যদিও ফুটবলের এমন কোনো পজিশন নেই, যেখান থেকে গোল আসেনি, তবু স্ট্রাইকারদের কাছ থেকেই আশা থাকে দর্শকদের। তাঁদের ওপরই ভরসা করে সবাই, বল জালে পাঠানোর কাজ যে তাঁদের ওপরেই বর্তায়। কিন্তু কখনো যদি শোনা যায়, এমন একজন খেলোয়াড় আছেন, যিনি তাঁর পুরো ক্যারিয়ার কাটিয়ে দিয়েছেন স্ট্রাইকার হিসেবে কিন্তু কোনো গোল করা দূরে থাক, কোনো পুরো ম্যাচই খেলেননি? অবাক লাগছে? এমনটা কখনো হয় নাকি? একজন খেলোয়াড় কখনো না খেললে খেলোয়াড় হয় কীভাবে? তাহলে অপেক্ষা করো কার্লোস কাইজারের পুরো গল্প শোনার। ২৬ বছর যিনি খেলেছেন বল পায়ে না লাগিয়েই।
কার্লোস কাইজারের জন্ম ১৯৬৩ সালের ২ এপ্রিল। প্রত্যেক ব্রাজিলিয়ান শিশুর স্বপ্ন দেখা যেভাবে শুরু হয়, সেভাবেই শুরু কাইজারের স্বপ্ন দেখা। ব্রাজিলের পাড়ায় পাড়ায় ফুটবল নিয়ে মাতোয়ারা বাচ্চাদের একজন কাইজার। ফুটবল নিয়ে ছোটবেলায় পড়ে থাকা কাইজারই কিনা বড় হয়ে ফুটবলের সবচেয়ে বড় প্রতারক হয়ে উঠলেন। প্রায় ২০ বছরের ক্যারিয়ারে খেলেছেন ১০টি ক্লাবে, শুধু ব্রাজিল নয়, পাড়ি দিয়েছেন মহাদেশ। মেক্সিকো, আমেরিকা, এমনকি ফ্রান্সের ক্লাবের হয়েও নাম লিখিয়েছেন শুধু নিজের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে। কাইজারের পুরো নাম অবশ্য কাইজার নয়, বরং কার্লোস হেনরিক র৵াপোসো। কিন্তু ফুটবলে আসার পর ‘কাইজার’ নামেই বেশি পরিচিত হয়ে যান। তিনি নিজে অবশ্য দাবি করেন, দেখতে তিনি জার্মান তারকা ফ্রাঞ্জ বেকেনবাওয়ারের মতো দেখতে বলে সতীর্থরা তাঁকে ডাকতেন ‘কাইজার’ নামে। আরেক সতীর্থের দাবি, কাইজার কোম্পানির বিয়ারের প্রতি বেশ টান ছিল তাঁর। তা থেকেই তাঁর ডাকনাম হয়ে গেছে ‘কাইজার’।
কাইজারের গল্পে আসা যাক, ১৯৭২ সালে মাত্র ৯ বছর বয়সে বোটাফাগোর যুবদলে নাম লেখান তিনি। তখন থেকেই আস্তে আস্তে পরিচিত হতে থাকেন ব্রাজিলের ফুটবল–ধর্মের সঙ্গে। ব্রাজিলে ফুটবল শুধু একটা খেলা নয়, বরং আরাধনার বিষয়, সাধনার বিষয়। কাইজারও সেই মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই তাঁর মনে খেলল অন্য এক চিন্তা। এমন যদি হয়, না খেলেই টাকা আয় করা যায়? ৬ বছর ফ্লামেঙ্গোর যুবদলে খেলে ব্রাজিল ছেড়ে পাড়ি জমান মেক্সিকোতে।
মেক্সিকোতে প্রথম প্রফেশনাল চুক্তি করেন পুয়েবলা নামের এক ক্লাবের সঙ্গে। তত দিনে ব্রাজিলে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে অনেক খেলোয়াড় আর সাংবাদিকের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেই মেক্সিকান ক্লাবের খোঁজ পেয়েছিলেন কাইজার। আর মেক্সিকান ক্লাব যখন এত কম দামে ভালো খেলোয়াড় পেল, তখন আর না করেনি। তিন মাসের ছোট্ট চুক্তি করেন কাইজার। আর সেই সময়েই শুরু করেন তাঁর ট্রিক। ট্রেনিংয়ে, মাঠের বাইরে যথারীতি তাঁর দেখা মেলে। যেই না মাঠে নামার সময় এল, হুট করেই চোটের কথা বলে কেটে পড়লেন তিনি। তখন এখনকার মতো চোট পরীক্ষা করার এত প্রযুক্তি ছিল না, খেলোয়াড় যখন বলছে তাঁর অবস্থা খেলার মতো নয়, অগত্যা দলকে বিশ্বাস করতেই হতো।
এ তো শুরুর গল্প। চোটে পড়ে বসে থাকতেন না তিনি; বরং থাকতেন সতীর্থদের সঙ্গে, খেলতে হয়তো পারতেন না, কিন্তু সতীর্থদের চিয়ারআপ করতে ব্যস্ত থাকতেন। ফলে মাঠে না থাকলেও ঠিকই খেলোয়াড়দের মনে জায়গা পেয়ে যেতেন। এমনকি ম্যাচ দেখতে আসা সাংবাদিকদের সঙ্গেও গল্প জুড়ে দিতেন খেলার সময়। ফলে সম্পর্ক শুধু মাঠের খেলোয়াড় নয়, মাঠের বাইরের লোকজনের সঙ্গে ভালো হওয়া শুরু করে।
ছয় মাসের মাথায় কোনো ম্যাচ না খেলেই ব্রাজিলে ফেরত আসেন কাইজার। কারণ হিসেবে দেখিয়েছিলেন, দেশের বাইরে ঠিক মানাতে পারছেন না। হয়তো ঘর থেকে এত দূরে থাকার কারণেই মাঠে সামলাতে পারছেন না নিজেকে। ফলে দলও আর জোরাজুরি করেনি। ব্রাজিলে ফিরেই কাজে লাগাতে শুরু করেন নিজের পাতানো বন্ধুত্ব। মেক্সিকোতে থাকা সাংবাদিক বন্ধুদের বললেন তাঁর সম্পর্কে কিছু রিপোর্ট লিখে পাঠাতে, যাতে দেশে ফিরে ক্লাব পেতে সুবিধা হয়। বন্ধুর জন্য এটুকু করতে কার্পণ্য করেননি তাঁরা; বরং গালভরা রিপোর্ট করেছেন, কাইজার এতটাই ভালো খেলেছেন পুয়েবলার হয়ে যে মেক্সিকান সরকার তাঁকে নাগরিকত্ব দেওয়ার চিন্তাভাবনা করছিল, যাতে আজীবন মেক্সিকোর হয়ে খেলতে পারেন।
এই রিপোর্ট পড়ার পর কেই–বা তাঁকে দলে ভেড়াতে না করবে? কেউ করেওনি। ব্রাজিলে ফিরে কাইজার যোগ দেন বোটাফাগোতে। একদম আগের পদ্ধতিতেই, খুবই কম সময়ের জন্য, যাতে কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই চম্পট দিতে পারেন।
আগের মতোই দলে নিজের নাম লেখাতে থাকলেন, আর ঠিক ম্যাচের আগে আগে এসে চোটের দোহাই দিয়ে কেটে পড়তেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই বুঝলেন, এভাবে আসলে থাকা সম্ভব নয়। যদি ধরা পড়ে যান? তাই বন্ধুত্বের পরিসর বাড়াতে থাকলেন। বন্ধুতালিকায় এবার শুধু সাংবাদিক নন, যুক্ত হলেন চিকিৎসক, এমনকি খেলোয়াড়েরাও। চিকিৎসকের সংযুক্তির কারণ নিশ্চয় বুঝতে পারছ, যাতে অসুস্থ হলেই হুট করে মেডিকেল রিপোর্ট যোগ করা যায় সহজেই। আর খেলোয়াড়েরা তাঁর বন্ধুত্বের আওতায় থাকলে সহজেই ক্লাবের কাছে বাড়াতে পারবেন নিজের আবেদন। সব সময় যে নাটক করতেন, তা কিন্তু নয়। যে দলে ভালো ফিজিশিয়ান থাকতেন, সে দলে সাহায্য নিতেন যুবক খেলোয়াড়দের। তাঁদের বলতেন তাঁকে ফাউল করতে, যাতে তাঁকে চোটের কারণে বাইরে বেরিয়ে যেতে হয়।
বোটাফাগোতে থাকলেই শুরু হয় তাঁর আরেক খেলা। কম দামে একটা খেলনা ফোন কিনে ফেলেন কাইজার। তখনকার যুগে কারও হাতে ফোন থাকা তো অমাবস্যার চাঁদের থেকেও বড় ঘটনা। ১৯৮১ সালে এসে ফোন নিয়ে কথা বলতেন বিদেশি ভাষায়। পর্তুগিজ আর ইংরেজির মিশ্রণে এক অদ্ভুত ভাষায় ডিল করতেন বড় বড় দলের সঙ্গে। মনে হতো বিশ্বের অন্যতম সেরা খেলোয়াড়, বড় বড় ক্লাবকে রিজেক্ট করছেন বোটাফাগোতে খেলার জন্য। কাইজারের জারিজুরি ধরা পড়ে যায় এক ট্রেইনারের কাছে, যিনি প্রথম আবিষ্কার করেন, এই ফোন আসল ফোন নয়, বরং একটা খেলনা। সে জায়গা থেকে কীভাবে পার পেয়েছেন কাইজার, তা তাঁর ক্যারিয়ারের মতোই ধোঁয়াটে।
পৃথিবীর একমাত্র স্ট্রাইকার, যিনি তাঁর পুরো প্রফেশনাল ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন কোনো গোল না করেই।
বোটাফাগোকে ধোঁকা দেওয়ার ঘটনার পরও ঠিকই পরবর্তী ক্লাব ম্যানেজ করে ফেললেন কাইজার। রিওর অন্যতম বড় ক্লাব ফ্লামেঙ্গোর সঙ্গে চুক্তি সারলেন। আর এখানেই পরিচয় হলো বন্ধু রিকার্দো গাউচোর। গাউচো খেলতেন সান্তা ক্রুজের হয়ে, দুজনের বন্ধুত্বও ভালোই জমেছিল। ছিলেন নাইটক্লাবের সঙ্গী। তবে এখানে কাইজারের জারিজুরির চেয়ে ক্লাবের ভুলটাই মুখ্য। তাদের মূল লক্ষ্য আসলে ছিল আর্জেন্টাইন তারকা কার্লোস এনরিকেকে দলে ভেড়ানো। ১৯৮৪ কোপা লিবার্তাদোরেস জিতে যিনি দক্ষিণ আমেরিকার স্টার। কিন্তু কার্লোস এনরিকের বদলে কার্লোস হেনরিককে সাইন করিয়ে বসে তারা। ভুল বুঝতে পেরেও কিছু করার ছিল না ক্লাবের। অগত্যা ছোট্ট চুক্তি শেষে তাঁকে এমনিতেই ছেড়ে দেয় তারা। এই ক্লাবের সঙ্গে অবশ্য বনিবনা ভালো হয়েছিল, ক্লাবও তাঁকে খেলতে বলেনি, তিনিও খেলতে চাননি; একেবারে সোনায় সোহাগা।
ফ্লামেঙ্গোর ঘটনার পর ব্রাজিল ছাড়েন কাইজার, যোগ দেন ফ্রেঞ্চ সেকেন্ড ডিভিশনের দল গ্যাজেলেক আজাক্সিও নামের এক ক্লাবে। পুরো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন এই ক্লাবে। কত দিন জানো? আট মাস! ক্লাবটি তাঁকে স্বাগত জানায় দর্শকভর্তি স্টেডিয়াম নিয়ে। কিন্তু এখানেই তো তাঁর ভয়। ফলে স্কিল দেখানোর নাম করে সব বল বিলিয়ে দেন দর্শকদের মধ্যে। দর্শকও খুশি, তিনিও খুশি, ক্লাবও খুশি। এরপর আবারও সেই পুরোনো নিয়মে ফেরত। ট্রেনিং সেশনে অ্যাকটিভ, ম্যাচের আগে চোট আর সাংবাদিক-খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক। ব্রাজিলিয়ান স্টার আর সাংবাদিকদের রিকমেন্ডেশন দেখে ক্লাবে নেওয়া কাইজারকে সহজে ছাড়তে চায়নি তারা। হাজার হলেও ব্রাজিলিয়ান স্টারকে কে ছাড়তে চায়? কিন্তু জারিজুরি তো আর বেশি দিন থাকে না। আর ইউরোপে গিয়ে মদের নেশাতেও পড়ে গিয়েছিলেন কাইজার। ফলে আবারও ব্রাজিলে ফিরলেন নিজের বন্ধুদের কাছে একঝাঁক গল্প নিয়ে।
মেক্সিকোর পর ফ্রান্স কাঁপিয়ে আসা তারকা কাইজার। এসে অবশ্য বড় দলের দিকে গেলেন না, ভিড়লেন বাঙ্গো ক্লাবে। রিও ডি জেনিরোর এই এলাকার তাপমাত্রা অন্যান্য এলাকার চেয়ে একটু বেশিই। এই ক্লাবে এসে শুরু করলেন আরেকটু স্টান্টবাজি। এবার ক্লাবের বলবয়দেরও ভাড়া করলেন। ম্যাচে না থাকলেও যেন তাঁর নামে জয়ধ্বনি না থামে। ক্লাবের মালিক ছিলেন কাইজারের ভক্ত। কাইজারের না বলে তাঁর নামের ভক্ত বললেই ভালো হয়। যে কারণে যেকোনো মূল্যেই চেয়েছিলেন মাঠে দেখতে। এ জন্য তাঁকে ট্রেনিংও করতে দেননি, বলেছেন, দেখা হবে একেবারে মাঠে। শেষমেশ মাঠে নামার দ্বারপ্রান্তে কাইজার।
ম্যাচের শুরুতেই ২ গোল খেয়ে বসে বাঙ্গু। আট মিনিটের মাথায় পিছিয়ে থাকা বাঙ্গুকে বাঁচাতে পারে একমাত্র কোনো দারুণ গোলস্কোরারই। আর কে আছে বেঞ্চে? ফ্রান্স-মেক্সিকো–কাঁপানো স্ট্রাইকার কার্লোস কাইজার। ওয়াকিটকি দিয়ে ক্লাবের মালিক একপ্রকার নির্দেশই দিলেন কাইজারকে যত দ্রুত সম্ভব মাঠে নামাতে, কোচও অপারগ, বললেন ওয়ার্মআপ করো, মাঠে নামতে হবে।
ইনজুরির জারিজুরি মাঠের এক কোনায় চলে, ভরা মজলিশে নয়। কাইজার খুব ভালোমতোই জানতেন। ফলে খুঁজছিলেন ছুতো, কীভাবে পাশ কাটানো যায় আরকি। কথায় আছে, ‘ভাগ্য সাহসীদের পক্ষে থাকে।’ (কাইজারকে ঠিক এই তালিকায় ফেলা যায় কি না, জানা নেই কিন্তু সবকিছু কাটিয়ে যখন মাঠে ওয়ার্মআপ করতে নেমেছেন, তখন তাঁকে এটুকু ক্রেডিট দেওয়াই যায়।) হুট করে দর্শকদের কাছ থেকে শুনলেন হট্টগোল। মুহূর্তে মাথায় খেলে যায় বুদ্ধি। গিয়ে মারামারি শুরু করে দেন দর্শকদের সঙ্গে। মাঠে নামার আগেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান কাইজার। ফলে নিষিদ্ধ হন কয়েক ম্যাচের জন্য। কিন্তু কয়েক দিন বাকি থাকা চুক্তি ধুপ করে বেড়ে হয় ছয় মাস, বেতন হয় দ্বিগুণ। পরে জানা গেল, ক্লাব ম্যানেজমেন্টের কাছে বলেছেন, ক্লাব আর তাঁর পরিবার নিয়ে নাকি অসম্মানজনক কথা বলেছিলেন দর্শকেরা। ক্লাবের লোকদের কাছে এ যুক্তি ফেলনা লাগেনি। ফলাফল পুরস্কার। যদিও চুক্তি শেষ হতেই দল ছাড়েন আবার।
এবার গন্তব্য হয় ফ্লুমিয়েন্স। কিন্তু এত দিনে ব্রাজিলিয়ান লিগে কাইজারের নামে কথা রটতে শুরু করেছে। ফ্রড ধরা পড়ল বলে, এমনকি মারামারির ঘটনাও ক্যারিয়ারে বেশ খারাপ প্রভাব ফেলেছে। যদিও নিজের বন্ধুত্বের সুযোগ নিয়ে ক্লাবের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন তিনি। কিন্তু তখনই একেবারে নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ফলে তাঁকে দলে নিয়েও খেলানো সম্ভব হয়নি। খুব কম বয়সেই হয়ে পড়েন স্কোয়াড প্লেয়ার।
পরের বছর যোগ দেন ভাস্কো দা গামায়। এই ক্লাব অবশ্য চুক্তির আগে বলেই নিয়েছিল, ‘তোমার খেলার প্রয়োজন হবে না, বরং তুমি দলে এসে বাড়তি কিছু যোগ করো।’ দলের খেলোয়াড়দের মোরাল, অন্য প্লেয়ারদের উৎফুল্ল রাখা, এই আরকি। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে মাদকাসক্ত কাইজারকে কিছুটা ধাতস্থ করতে চেয়েছিল তারা। হাজার হলেও তাঁর সুনাম ঠিকই ছিল, মেক্সিকো-ফ্রান্স জয়ে করে আসা খেলোয়াড় হিসেবে। এবার চুক্তি শেষে পাড়ি দেন আমেরিকা।
সেখানে যোগ দেন এল প্যাসো সিক্সশুটারের হয়ে। সেখানকার ৩৫ ডিগ্রি তাপমাত্রা সামলানো সম্ভব ছিল না তাঁর পক্ষে। ফলে সেখানেই ক্যারিয়ারের ইতি টেনে দেন কাইজার। আর হয়ে থাকেন পৃথিবীর একমাত্র স্ট্রাইকার, যিনি তাঁর পুরো প্রফেশনাল ক্যারিয়ার কাটিয়েছেন কোনো গোল না করেই।
কাইজার অবশ্য এগুলো নিয়ে সরাসরিই আলোচনা করেন। তাঁর কাছে ভয়টা ছিল আসলে মাঠে নামা নিয়ে। মাঠে না নামা ছাড়া সবকিছুতেই পারদর্শী তিনি। এত বড় ধোঁকাবাজি করেও তাঁর মনে অনুশোচনা খুবই কম। ‘আমি আমার ক্যারিয়ারে অনেক দেখেছি, এখনো দেখি, খেলোয়াড়েরা ক্লাবের লালসা-ধোঁকাবাজির শিকার হয়। কাউকে না কাউকে এটার প্রতিশোধ নিতে হতো।’ তাঁকে নিয়ে আমাজন প্রাইমে ডকুমেন্টারিও আছে, Kaiser: The Greatest Footballer Never To Play Football। চাইলে দেখে ফেলতে পারো। পেলে, গারিঞ্চা, জিকো, রোনালদো, কাকাদের মতো কাইজারও ব্রাজিলিয়ান ফুটবলের লিজেন্ড। শুধু তাঁর গল্পটা অন্যদের থেকে একটু অন্য রকম। অন্যরা বল পায়ে নিয়ে তারকা হয়েছেন, আর তিনি না ছুঁয়েই।