২৫ দিন, ৪৫ ম্যাচ, ১২,১৬২ রান, ৫২৬ উইকেট। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট্ট ফরম্যাটের বিশ্বকাপ যেমন শুরু হয়েছিল ধুমধাম করে, তেমনি করে শেষও হয়ে গেল। পাঁচবার ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলা অস্ট্রেলিয়ার কাছে অধরাই ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। অ্যারন ফিঞ্চের অধিনায়কত্বে সেটাও পূরণ করে ফেলল অজিরা। ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের লাইমলাইট হয়ে রইল ওয়ার্নার আর অস্ট্রেলিয়ার ফিরে আসা। কিন্তু বিশ্বকাপ কি একটি দলে আটকে থাকলে চলে? টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জন্ম দিয়েছে এমন সব মুহূর্তের, যা অবাক করে দিয়েছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। আজকের লেখাটা এই বিশ্বকাপের সেরা মুহূর্তগুলো নিয়েই।
স্কটল্যান্ডের বাংলাদেশ জয়
বিশ্বকাপের মূল পর্বে সরাসরি খেলার সুযোগ পায়নি বাংলাদেশ। বাছাইপর্বে দুই গ্রুপে থাকা বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কাকেই ফেবারিট ধরে নিয়েছিল সবাই। ছয় দলের মধ্যে টেস্ট খেলুড়ে দেশ তো এই দুটিই। কিন্তু সেই ফেবারিট বাংলাদেশকে ধুলোয় মিশিয়ে দিয়েছে স্কটল্যান্ড। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচেই বাংলাদেশকে আটকে দিয়ে অবাক করে দিয়েছে বিশ্বকে। প্রথমে ব্যাটিং করে ১৪১ রানের টার্গেট দিয়েছিল স্কটল্যান্ড। কিন্তু সেই রান তাড়া করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হয় বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপকে। শেষ পর্যন্ত ৬ রানে জিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দেয় স্কটল্যান্ড। প্রথম পর্বের সব ম্যাচ জিতে সুপার টুয়েলভে ওঠে স্কটল্যান্ড। সুপার টুয়েলভে কোনো ম্যাচ জিততে না পারলেও বেশ ভালো লড়াই করেছিল তারা।
নামিবিয়ার স্বপ্নযাত্রা
বাংলাদেশকে হারিয়ে স্কটল্যান্ড যদি চমকে দিতে পারে, তবে নামিবিয়ার স্বপ্নযাত্রাও কম যায় না। সবাই ধরেই নিয়েছিল, গ্রুপ ‘এ’-তে লড়াইটা হবে আয়ারল্যান্ড আর নেদারল্যান্ডসের মধ্যে। শ্রীলঙ্কার নতুন দল হয়তো পার হয়ে যাবে, তবে দ্বিতীয় অবস্থানটার জন্য লড়াই হবে এ দুই দেশের। গ্রুপের চতুর্থ দল নামিবিয়াকে সেভাবে হিসাবেই ধরেনি কেউ। কিন্তু টুর্নামেন্ট শুরু হতে না হতেই দেখা গেল র৵াঙ্কিংয়ের দিক থেকে শেষ থাকা দলটাই এসেছে চমক দেখাতে।
শ্রীলঙ্কার সঙ্গে শক্তির ব্যবধানে পেরে ওঠা সম্ভব ছিল না নামিবিয়ার। কিন্তু গ্রুপ পর্বের পরের দুই ম্যাচেই আয়ারল্যান্ড আর নেদারল্যান্ডসকে হারিয়ে সুপার টুয়েলভে জায়গা করে নেয় নামিবিয়া। সেখানেই শেষ নয়, সুপার টুয়েলভের প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডকেও আটকে দেয় নামিবিয়া। ‘বিশ্বকাপে অংশগ্রহণই বড় কথা’, নামিবিয়াকে অনেকেই ভেবেছিল সেই তালিকার দল। অথচ তারাই কিনা বিশ্বকাপ শেষ করেছে তিনটি জয় নিয়ে। আফ্রিকান দেশটির আনাচকানাচে ছড়িয়ে পড়ছে ক্রিকেট। তাদের জন্য এমন তিন জয় অবিস্মরণীয়ই বটে।
ভারতের বিপক্ষে পাকিস্তানের প্রথম জয়
বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভের সবচেয়ে আলোচিত ছিল ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। এমনিতেই দুই দেশের রাজনৈতিক মতবিরোধের কারণে দ্বিপক্ষীয় সিরিজ হয় না অনেক দিন ধরে। তাই প্রতিটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টেই চেষ্টা করা হয় তাদের ম্যাচ রাখতে। তবে এবারের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচটা ইতিহাসে লেখা থাকবে একটু অন্যভাবে। কারণ, বিশ্বকাপ ম্যাচে এবারই হাসিমুখে ড্রেসিংরুমে ফিরেছে পাকিস্তান দল।
বিশ্বকাপের শুরু থেকে এ পর্যন্ত যতবারই ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছে, প্রতিবারই জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ভারত। বিশ্ব আসরে পাকিস্তানকে পাত্তাই দিত না ভারত। সেই জুজু কেটেছে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির ফাইনালে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম জয়কে মহিমান্বিত করে রাখলেন বাবর আজম। প্রথম অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপে ভারতকে হারিয়েছেন তিনি। তা–ও আবার যে সে জয় নয়। একেবারে ১০ উইকেটের জয়। ভারতের দেওয়া ১৫২ রানের টার্গেট হেসেখেলে কোনো উইকেট না হারিয়েই পার করে ফেলেছে তারা। সেই সঙ্গে এত দিন যা করতে পারেননি পাকিস্তানি অধিনায়কেরা, সেটাই করে দেখিয়েছেন বাবর। টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব ছাড়ার আগে বেশ বড় ধাক্কা খেলেন বিরাট কোহলি।
হ্যাটট্রিক
ক্রিকেটে অন্যতম কঠিন ব্যক্তিগত অর্জনের তালিকায় সবার ওপরে নাম থাকবে হ্যাটট্রিকের। টানা তিন বলে তিন উইকেট নেওয়া সহজ কাজ নাকি? তা–ও আবার ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট ফরম্যাটের বিশ্বকাপে? ব্যাপারটা একপ্রকার অসম্ভবই ছিল এত দিন। ২০০৭ বিশ্বকাপে বাংলাদেশের বিপক্ষে একমাত্র হ্যাটট্রিক ছিল ব্রেট লির। এরপরের পাঁচ আসরে কেউ বসতে পারেননি তাঁর পাশে। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ষষ্ঠ আসরেই দেখা মিলল তিন-তিনটি হ্যাটট্রিকের। তিনটি হ্যাটট্রিকই একে অপরের থেকে বেশ আলাদা। প্রশ্ন করতে পারো, হ্যাটট্রিক আবার আলাদা হয় কীভাবে? সেটাই বলছি।
কার্টিস ক্যাম্ফারের ৪ বলে ৪ উইকেট | বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের হাইলাইট ছিল কার্টিস ক্যাম্ফারের ওভার। সুপার টুয়েলভে ওঠার লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয়েছিল আয়ারল্যান্ড। ম্যাচের দশম ওভারে বল করতে আসেন ক্যাম্ফার। দশম ওভারের দ্বিতীয় বলে অ্যাকারম্যানকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ বানান তিনি। পরের বলে এলবিডব্লু রায়ান টেন ডেসকাট। পরের বলে আবারও এলবিডব্লুর শিকার স্কট এডওয়ার্ডস—হ্যাটট্রিক! তখনো ক্যাম্ফারের ম্যাজিক শেষ হয়নি। পরের বলেই রোয়েলফ ফন ডার মারউইকে বোল্ড করে রেকর্ড বুকে নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেন তিনি।
ক্যাম্ফার আয়ারল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রিক করা বোলার। তবে ডাবল হ্যাটট্রিকের এমন কীর্তি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখল এই প্রথমবার। টি-টোয়েন্টি ইতিহাসেই এমন ঘটনা আছে আর মাত্র দুটি। রশিদ খান (আয়ারল্যান্ডেরই বিপক্ষে, ২০১৯ সালে) ও লাসিথ মালিঙ্গা (২০১৯ সালেই, নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে)। ক্যাম্ফার নিজের নাম লেখালেন সেই কিংবদন্তিদের সঙ্গে।
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার ‘দুই ওভারের’ হ্যাটট্রিক | দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে করা ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার হ্যাটট্রিকটি ছিল একটু অন্য রকম। পরপর তিন বলে তিন উইকেট নিলেই পাওয়া যায় হ্যাটট্রিকের স্বাদ। হাসারাঙ্গা সেটিই করেছেন। ১৫তম ওভারের শেষ বলে এইডেন মার্করামকে সরাসরি বোল্ড করেন হাসারাঙ্গা। পরে আবার বল করতে আসেন ১৮তম ওভারে। সে ওভারের প্রথম দুই বলেই তুলে নেন টেম্বা বাভুমা ও ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসকে। পরপর তিন বলে তিন উইকেট নিয়ে পূরণ করেন নিজের হ্যাটট্রিক। যদিও সে হ্যাটট্রিক দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে পারেনি। শেষ ওভারে পরপর দুই বলে ছক্কা হাঁকিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় নিশ্চিত করেন ডেভিড মিলার।
কাগিসো রাবাদার হ্যাটট্রিক | বিশ্বকাপের শেষ হ্যাটট্রিক দিয়েই শুরু করা যাক। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের মুখোমুখি হয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শর্ত ছিল ১৩০-এর মধ্যে আটকে রাখতে পারলেই সেমিতে যেতে পারবে দক্ষিণ আফ্রিকা। সে আশা ছিটকে গিয়েছিল আগেই। শেষ ওভার করতে এসে ঝলক দেখান কাগিসো রাবাদা। শেষ ওভারের প্রথম তিন বলে ক্রিস ওকস, ইয়ন মরগ্যান ও ক্রিস জর্ডানের উইকেট নিয়ে এই হ্যাটট্রিক গড়েন তিনি। শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৩ রান। সেটি নিতে উড়িয়ে মারতে চেয়েছিলেন ব্যাটসম্যানরা। আর তাতেই প্রত্যেকে ধরা পড়েছেন সীমানার সামনে।
জস বাটলারের শতক
২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে একমাত্র শতকের দেখা পেয়েছেন ইংল্যান্ডের জস বাটলার। আর তাঁর নাম থাকবে না বিশ্বকাপের সেরা মুহূর্তে, তা কি হয়? এক দিনে শুধু নিজের স্বপ্নই গড়েননি, রেকর্ডের বন্যা বইয়েছেন এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।
এবারের বিশ্বকাপে নজর কাড়বেন কারা কারা, সে তালিকায় ওপরের দিকেই নাম ছিল বাটলারের। এমনকি ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপের বড় কান্ডারি ছিলেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেটাই যেন প্রমাণ করতে নেমেছিলেন। লঙ্কান বোলারদের সামনে রীতিমতো অসহায় হয়ে পড়েছিল ইংলিশ ব্যাটিং লাইনআপ। কিন্তু তার মধ্যেই একা দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন বাটলার। একাই ইংল্যান্ডকে পৌঁছে দিয়েছিলেন সম্মানজনক একটি স্কোরে। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন অধিনায়ক ইয়ন মরগান। ৬ চার, ৬ ছক্কায় ৬৭ বলে ১০১ রানের ইনিংসটি এই বিশ্বকাপের লাইমলাইট হয়ে থাকবে অনেকের কাছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগের সমাপ্তি
টি-টোয়েন্টি নিয়ে আলোচনা হলেই চোখে ভেসে ওঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের খেলোয়াড়দের মুখ। ক্রিকেটের সবচেয়ে ছোট সংস্করণকে নতুন এক রূপ দিয়েছেন তাঁরা। ক্রিস গেইল, ডিজে ব্রাভো, কাইরন পোলার্ড, সুনীল নারাইন কিংবা আন্দ্রে রাসেল—সবাই টি-টোয়েন্টিকে নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। আর সেই সঙ্গে তাঁদের দলকেও।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিন্তু কোনো দেশ নয়। বরং ক্যারিবীয় অঞ্চলের কয়েকটি দ্বীপরাষ্ট্র মিলে গঠিত একটা ক্রিকেট বোর্ড। ক্যারিবীয় অঞ্চল থেকে খেলোয়াড়ের অভাব কোনো দিনও হয়নি, তাই তাঁদের সম্মিলিত করে একসঙ্গে খেলানোর বুদ্ধিটা বেশ পুরোনো। কিন্তু সবাই এক দেশের নয় বলে তাঁদের মধ্যে মিলও ততটা থাকে না। প্রায়ই বোর্ডের সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকে। প্রতিবার একটি করে বিশ্বকাপ আসে, বোর্ড খেলোয়াড়দের টাকাপয়সা মিটিয়ে দল তৈরি করে, বিশ্বকাপ শেষে আবার সেই গড়িমসি। এমনটাই চলছে অনেক বছর ধরে। কিন্তু সেই প্রভাব কোনো দিনও মাঠে পড়তে দেননি খেলোয়াড়েরা।
টি-টোয়েন্টির দুনিয়ায় বিনোদন হিসেবে পরিচিত ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানরা কখনোই নিরাশ করেননি বিশ্বকাপে। ২০১২ বিশ্বকাপ জিতে নিজেদের চার দশকের অপেক্ষা দূর করেছিলেন গেইল-পোলার্ড-ব্রাভোরা। ২০১৬ বিশ্বকাপেও ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফিরে এসেছিল নতুন রূপে। সেবার নিজেদের ক্যাপ বানানোর টাকাও ছিল না বোর্ডের। ড্যারেন স্যামির অধীনে খেলোয়াড়েরা নিজ উদ্যোগে নেমেছিলেন মাঠে। শেষ ওভারে চমক দেখিয়ে বিশ্বকাপ নিজেদের করে নিয়েছিলেন তাঁরা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ মানেই তাঁদের জয়জয়কার। ২০২১-এ এসেও বিনোদন দেওয়ার বেলায় বিন্দুমাত্র ছেদ পড়তে দেননি গেইল-পোলার্ড-ব্রাভোরা। কিন্তু বয়সের ছাপটা ঠিকই পড়েছে। তাই এই বয়সে এসে গেইল-ব্রাভো-পোলার্ডরা নিজেদের সেরাটা দেখাতে পারেননি বটে, কিন্তু পুরো বিশ্বকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতে ভুল করেননি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে শেষ ম্যাচটাও ব্রাভো-গেইল কাটিয়েছেন হাসি-আনন্দে। ব্রাভো আগেই অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন, গেইলও অনানুষ্ঠানিকভাবে বলে দিয়েছেন বিদায়। শেষবেলায় হেসেখেলে বিদায় নিয়েছেন দুজন। গেইল তো উইকেটের উদ্যাপন করেছেন প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যান মিচেল মার্শকে জড়িয়ে ধরে।
২০১২ আর ২০১৬ বিশ্বকাপ যদি স্মরণীয় হয়ে থাকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিশ্বজয়ের জন্য, তাহলে ২০২১ বিশ্বকাপ স্মরণীয় হয়ে থাকবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণযুগের শেষ স্মৃতিস্মারক হিসেবে।
ম্যাথু ওয়েড–ঝড়
খোদ অস্ট্রেলিয়া দলেই মাঝেমধ্যে তাঁর জায়গা নিয়ে টানাটানি পড়ে। গিলক্রিস্ট, হেইডেনের পর উইকেটের পেছনে ভরসার পাত্র হওয়ার পাশাপাশি ব্যাট চালাতে পারার ক্ষমতা আছে, এমন খেলোয়াড়ের খোঁজ পায়নি অস্ট্রেলিয়া। ম্যাথু ওয়েড হয়ে আছেন মন্দের ভালো। আগের সিরিজগুলোতে ফর্ম ছিল যাচ্ছেতাই। তাঁর অধীনে বাংলাদেশে খেলতে এসে ৪-১–এ সিরিজ হেরেছে অস্ট্রেলিয়া। সব মিলিয়ে বিশ্বকাপ ছিল তাঁর শেষ সুযোগ।
শেষ ৩ ওভারে প্রয়োজন ৩৭ রান। ব্যাটিংয়ে অফ ফর্মে থাকা মার্কাস স্টয়নিস আর ম্যাথু ওয়েড। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা পাকিস্তানের বোলিং লাইনআপের বিপক্ষে এখান থেকে ম্যাচ বের করবেন এই দুজনে, এমন বিশ্বাস খোদ অস্ট্রেলিয়ানরাও হয়তো রাখতে পারেননি। ওয়েডের রান তখন ৯ বলে মাত্র ৮।
সেখান থেকেই ওয়েডের খেলার ফর্মে ১৮০ ডিগ্রি বদল। হাসান আলীর ১৮তম ওভারে নিলেন ১৩ রান। এর মধ্যে ছিল ১ চার, ১ ছয়। ম্যাচ তখনো হাতে আসেনি, বাকি আরও ২২ রান। অসাধারণ স্পেল করে যাওয়া শাহিন শাহ আফ্রিদি তখন বোলিংয়ে। অস্ট্রেলিয়ার শেষ তখনই সবাই দেখে ফেলেছেন। তৃতীয় বলে স্ট্রাইকে আসেন ওয়েড। শাহিন শাহর মুখোমুখি হওয়া প্রথম বল ওয়াইড। এরপর প্রথম বলই ওয়েড উঠিয়ে দিলেন ডিপ স্কয়ার লেগে। হাসান আলীর হাতে সহজ ক্যাচ। কিন্তু সেটা জমাতে পারলেন না হাতে। সহজ ক্যাচ মিস করে প্রাণ দিলেন ম্যাথু ওয়েডকে। সেটুকুই যথেষ্ট ছিল তাঁর জ্বলে ওঠার জন্য।
জীবন পেয়ে নিজের খোলস ছেড়ে বেরোলেন ওয়েড। আগের ওভারে হাসান আলীর ওপরে যে তাণ্ডব চালিয়েছিলেন, সেটাই আবার করে দেখালেন শাহিন শাহর ওপর। চতুর্থ বল, ফুল টস; ঘণ্টায় ১৪৮ কিলোমিটার বেগে আসা বলটার দিক পরিবর্তন করে দিলেন শুধু। বল গিয়ে পড়ল ফাইন লেগ দিয়ে সীমানার বাইরে। পরের বল, একদম স্লটে। এবার বল মিড উইকেট দিয়ে সীমানার বাইরে। গ্যালারিতে পাকিস্তানি সমর্থকদের মুখ দিয়ে তখন একটা শব্দও বেরোচ্ছে না। শেষ বল, মাপজোখ করে বলটা শাহিন শাহ ফেললেন একদম ডেথ জোনে, ইয়র্কার। ওয়েডের তাতে থোড়াই কেয়ার। স্কুপ—ফাইন লেগ দিয়ে বল সীমানার বাইরে। নিজ হাতে ৯ বছর পর দেশকে বিশ্বকাপের ফাইনালে তুললেন ওয়েড। যাকে একাদশে নেওয়া সঠিক সিদ্ধান্ত কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন চলছিল এত দিন মানুষের মনে, সেই ওয়েডই হয়ে উঠলেন কান্ডারি। ১৭ বলে ৪১ করে দলকে পৌঁছে দিলেন ফাইনালে।