টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামতে প্রস্তুত স্কটল্যান্ড। জার্সি পরা খেলোয়াড়েরা ঢুকছেন মাঠে। বাসায় বসে টিভিতে চোখ হাজারো স্কটল্যান্ড সমর্থকের। সেই আগ্রহভরা চোখগুলোর মাঝেও বোধ হয় আলাদা করা যাচ্ছিল ১২ বছর বয়সী রেবেকা ডাউনিকে। আগ্রহের কারণ স্কটিশ ক্রিকেটারদের গায়ে জড়ানো চমৎকার জার্সিটা। যেটা ডিজাইন করেছে রেবেকা নিজে।
টিভির সামনে বসে বিশ্বমঞ্চে নিজের দেশকে, নিজের ডিজাইন করা জার্সি পরতে দেখার রোমাঞ্চটা ছোট্ট রেবেকাকে কতটা আনন্দ দিচ্ছিল, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। ১২ বছর বয়সে যখন আমরা সবে চারপাশের পৃথিবী বুঝতে শুরু করি, তখন রেবেকা ডিজাইন করে ফেলেছে একটা জাতীয় দলের বিশ্বকাপ জার্সি!
আইসিসির বেশির ভাগ দলের জার্সির ডিজাইন করেন পেশাদার ডিজাইনাররা। বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের বেলায় জার্সির দিকে আরও বেশি গুরুত্ব দেয় দলগুলো। ভক্তরাও মুখিয়ে থাকেন নতুন জার্সির অপেক্ষায়। তাই স্কটল্যান্ড দলের জার্সি ১২ বছরের এক স্কুলপড়ুয়া ডিজাইন করবে, এমনটা ভাবতেই পারেনি কেউ।
রেবেকার গল্পটা শুরু হয়েছিল পাঁচ মাস আগে। যখন স্কটল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ সামনে রেখে আয়োজন করে ‘ডিজাইন আওয়ার শার্ট’ প্রতিযোগিতার। নিয়ম ছিল, অংশ নিতে পারবে ১৮ কিংবা তার কম বয়সীরা। বিজয়ীর জন্য থাকবে স্কটল্যান্ড ক্রিকেট দলের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ। দুরু দুরু বুকে প্রতিযোগিতায় নিজের করা ডিজাইন পাঠায় রেবেকা। তার ডিজাইনে ছিল বেগুনি আর গাঢ় নীল রঙের সুন্দর সমন্বয়। রংগুলোর ভিত্তি স্কটল্যান্ডের জাতীয় প্রতীক দ্য এমব্লেম (কাঁটাগাছ)। যে স্কটিশ ঐতিহ্যের প্রতীক। সব মিলিয়ে আদর্শ জার্সি। সময়সীমা শেষে প্রতিযোগিতায় জমা পড়ে রেবেকার মতো আরও ২০০ প্রতিযোগীর ডিজাইন। ফলাফল আমাদের সবার জানা, স্কটিশ ক্রিকেট বোর্ড শেষ পর্যন্ত মুগ্ধ হয় রেবেকার ডিজাইনে।
রেবেকা নিজেই জানায় খবরটা তার কেমন লাগল, ‘প্রতিযোগিতায় জিতেছি শুনে সত্যিই আমি অভিভূত হয়ে পড়েছিলাম, বিশ্বাসই করতে পারিনি। প্রচণ্ড খুশি বাস্তবে জার্সিটার দেখা পেয়ে। কী সুন্দর দেখতে হয়েছে! স্কটল্যান্ড দলের সঙ্গে দেখা করতে পারাটাও ছিল দারুণ। আমি আমার জার্সি পরে স্কটল্যান্ডকে বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচের জন্য সমর্থন জানাব।’
রেবেকার সঙ্গে দেখা করে খুশি স্কটল্যান্ড ক্রিকেট দলের অধিনায়ক কাইল কোয়েটজারও, ‘রেবেকা আর তার পরিবারের সঙ্গে দেখা করে দারুণ লাগল। দল জার্সিটা নিয়ে গর্বিত। আশা করছি, বিশ্বকাপে নিজেদের খেলা দিয়ে আমরা জার্সির মর্যাদা রাখতে পারব। ভক্তরাও নিশ্চয়ই এই নতুন ডিজাইন পছন্দ করবেন। গর্বের সঙ্গে জার্সি পরে ঘর থেকে পাঠাবেন নিজেদের শুভকামনা।’
সেই শুভকামনা সঙ্গে নিয়েই ওমানে স্কটল্যান্ড দল মুগ্ধ করে চলেছে ক্রিকেট বিশ্বকে। বাংলাদেশ আর পাপুয়া নিউগিনিকে হারিয়ে তাদের সুপার টুয়েলভে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল। কিন্তু জয়ের জন্য ছুটে চলা স্কটিশদের স্বপ্ন আরও বহুদূর। স্বপ্নযাত্রায় বিভোর সেই তরুণদের গায়ে জড়ানো রেবেকার বেগুনি-নীল জার্সি।