গ্যারি কিমোভিচ কাসপারভ। বিশ্বের অন্যতম সেরা গ্র্যান্ডমাস্টার। সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন। ১৯৮৪ সাল থেকে একটানা ২১ বছর র্যাংকিংয়ের এক নম্বরে ছিলেন কাসপারভ। ২০০৫ সালে পেশাদার দাবা থেকে অবসর নেন এই রুশ তারকা। ১৯৮৫ সালে সর্বকনিষ্ঠ দাবাড়ু হিসেবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার রেকর্ড গড়েছিলেন কাসপারভ। একটানা সবচেয়ে বেশি টুর্নামেন্ট জেতার রেকর্ডটাও তাঁরই দখলে। দাবা নিয়ে অসংখ্য বই লিখেছেন কাসপারভ। চেকমেট-মাই ফার্স্ট চেসবুক বইটি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত। তোমাদের জন্য ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে বইটি। আজ রইল প্রথম পর্ব। চেকমেট!
দাবাকে বলা হয়ে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় বোর্ডগেম। যুগ যুগ ধরে সারা পৃথিবীর মানুষ দাবা খেলে আসছে। একে বলা যায় একটি যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। মূলত দুজন মিলে দাবা খেলা যায়, যেখানে তুমি ও তোমার প্রতিদ্বন্দ্বী দুজনই একই ধরনের দুটি সৈন্যদল পরিচালনা করবে। তোমার সৈন্যদলকে তুমি যদি তোমার প্রতিপক্ষের তুলনায় বেশি ভালোভাবে ব্যবহার করতে পারো, তাহলেই তুমি জিততে পারবে।
তাহলে আমরা বুঝলাম যে এ খেলায় দুটি দল থাকে। একটি দল হলো সাদা এবং অন্যটি কালো। ঘুঁটিগুলোকে যে একদম সাদা ও কালো হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। আসলে হালকা রঙের ঘুঁটিগুলোকে সাদা এবং গাঢ় রঙের ঘুঁটিগুলোকে কালো বলে ধরে নেওয়া হয়।
তো সৈন্যসামন্ত যখন আছে, এদের যুদ্ধ করার জন্য যুদ্ধের একটা ময়দানও তো প্রয়োজন, নাকি? দাবার বোর্ডটি হলো সেই যুদ্ধের ময়দান। এটি একটি বর্গাকৃতির বোর্ড, যেখানে ৮x৮ আকারে মোট ৬৪টি ঘর থাকে। অর্থাৎ প্রতি সারি ও কলামে আটটি করে ঘর থাকে। ঘরগুলো দাবার ঘুঁটির মতোই সাদা ও কালো রঙের। এক ঘর সাদা হলে এর পরের ঘর কালো—ঠিক এভাবে। তাহলে বোর্ডে ৩২টি করে সাদা ও কালো ঘর থাকে। যে সাদা রঙের ঘুঁটি নিয়ে খেলবে, তার হাতের ডান দিকের সবচেয়ে কোনার ঘরটা যেন সাদা হয়, খেলার শুরুতে এটি লক্ষ রাখতে হবে।
তোমার সৈন্যদের, অর্থাৎ দাবার ঘুঁটিগুলোকে খেলার শুরুতে বোর্ডে সব সময় নির্দিষ্টভাবে সাজিয়ে রাখতে হবে। এর মানে হলো, খেলার শুরুতে কোন ঘুঁটি কোন ঘরে থাকবে, তা নির্দিষ্ট করে দেওয়া আছে, খেলার শুরুতে সেভাবে ঘুঁটিগুলোকে রেখে তবেই খেলা শুরু করতে হবে।
দাবায় একজনের পর আরেকজনকে চাল দিয়ে খেলা চালিয়ে নিতে হয়। এ ক্ষেত্রে সাদা ঘুঁটি যে নেবে, সে খেলায় শুরুতে একটু এগিয়ে থাকবে। কারণ, নিয়মানুযায়ী প্রথম চাল সাদা ঘুঁটিই দেয়। খেলার শুরুতে মূলত টসের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হয়ে থাকে যে কে কোন ঘুঁটি নিয়ে খেলবে। একজন কখনো একসঙ্গে টানা দুই চাল দিতে পারবে না অথবা চাল না দিয়েও থাকতে পারবে না কেউ। অর্থাৎ যার যখন চাল দেওয়ার পালা আসবে, তখন চাল দিতেই হবে তাকে।
দাবার প্রতিটি ঘুঁটির চাল ভিন্ন। অর্থাৎ ভিন্ন ধরনের ঘুঁটি ভিন্ন ভিন্নভাবে বোর্ডের এক ঘর থেকে আরেক ঘরে যায়। চাল দেওয়ার জন্য বোর্ড থেকে একটা ঘুঁটি তুলে নিয়ে তাকে বোর্ডের আরেকটি ঘরে রাখতে হবে। চাল দেওয়ার সময় মনে রাখতে হবে, নিজের ঘুঁটিকে কখনোই এমন একটা ঘরে নিয়ে যাওয়া যাবে না, যেখানে আগে থেকেই তোমার আরেকটি ঘুঁটি দাঁড়িয়ে আছে। তোমার নিজের ঘুঁটিকে বোর্ডের কোনো ফাঁকা ঘরে অথবা তোমার প্রতিপক্ষের কোনো ঘুঁটির ঘরে তুমি নিতে পারবে। এ ক্ষেত্রে নিয়মটা লুডুখেলার মতো, প্রতিপক্ষের কোনো ঘুঁটির ঘরে তোমার ঘুঁটি নিলে, তার ঘুঁটিটা কাটা যাবে। যুদ্ধক্ষেত্রে এক সৈন্য আরেক সৈন্যকে যেমন কুপোকাত করে ফেলে, অনেকটা সে রকম।
এ খেলায় তোমার লক্ষ্য একটাই—প্রতিপক্ষকে চেকমেট করা। এককথায় বলা যায়, প্রতিপক্ষের অন্য ঘুঁটিকে কেটে দেওয়ার মতোই তার রাজাকে কেটে দেওয়া। শুধু পার্থক্য হলো, খেলায় রাজাকে কাটা হয় না, যখন এক দলের রাজার ওপর আক্রমণ করা হয় এবং তার আর পালানোর কোনো পথ থাকে না, তখন অন্য দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। তবে মাঝেমধ্যে এমনও পরিস্থিতি হয়, যখন কোনো পক্ষই অন্য পক্ষের রাজাকে চেকমেট করতে পারে না। তখন ম্যাচটিকে ড্র বলা হয়। বড় বড় দাবাড়ুর মধ্যকার খেলা প্রায়ই ড্র হয়।
তাহলে আমাদের যা মনে রাখতে হবে
খেলার শুরুতে বোর্ড এমনভাবে রাখতে হবে, যেন সাদা ঘুঁটি নিয়ে যে খেলবে, তার হাতের সর্বডান কোনার ঘরটা সাদা হয়।
সাদাকে সব সময় প্রথম চাল দিয়ে খেলা শুরু করতে হবে এবং এরপর একজনের পর আরেকজন চাল দিয়ে যাবে। নিজের চালের সময় চাল দিতেই হবে, অর্থাৎ ‘পাস’ বলা যাবে না।
খেলা শুরুর সময় প্রতিটি ঘুঁটি বোর্ডে একই রকমভাবে সাজানো থাকবে।
যখন তুমি প্রতিপক্ষের কোনো ঘুঁটি কেটে নেবে, তখন সেই ঘুঁটি বোর্ড থেকে তুলে নেওয়া হবে এবং সেই ঘুঁটি আর বাকি খেলায় অংশ নিতে পারবে না।
খেলার মূল উদ্দেশ্য হলো প্রতিপক্ষের রাজাকে কেটে দেওয়া বা ‘চেকমেট’ করে দেওয়া। তবে মাঝেমধ্যে খেলা ড্র–ও হতে পারে।