হাতি (The Bishop)
দাবা বোর্ডে হাতি চলে কোনাকুনিভাবে। এর স্বভাব অনেকটা নৌকার মতোই, হাতির চলার পথে কোনো বাধা, অর্থাৎ ঘুঁটি থাকলে এটিও ঠিক তার আগের ঘুঁটি পর্যন্ত যেতে পারে। পাশের ছবিতে যেভাবে দেখতে পাচ্ছ তোমরা, ঠিক এভাবেই হাতি বোর্ডের এক মাথা থেকে আরেক মাথায় চলাচল করে।
এবার এই ছবি দেখলে তোমরা বুঝতে পারবে যে কালো রঙের হাতিটি a4 ও e2—এই দুটো ঘরের ঠিক আগপর্যন্ত যেতে পারবে। তবে যেহেতু e2 ঘরটিতে বিপক্ষ দলের নৌকা বসে আছে, ফলে কালো হাতিটি চাইলে নৌকাটিকে কেটে দিয়ে সেই ঘরটায় বসে যেতে পারবে। একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, নিজের ঘুঁটিকে কখনোই নিজের অন্য কোনো ঘুঁটি দিয়ে কাটা যায় না, শুধু অন্যের ঘুঁটিকেই কাটতে পারবে তুমি।
দাবা খেলায় হাতি ও ঘোড়ার শক্তি একই, কিন্তু এটি রানি ও নৌকার তুলনায় বেশ কম শক্তিশালী। হাতি ও ঘোড়াকে বলা হয় ‘Minor Pieces’। হাতি ও ঘোড়ার শক্তি যেহেতু একই, এদের পয়েন্টও একই, ৩ পয়েন্ট।
মাঝেমধ্যেই হাতি অন্যান্য ঘুঁটির কারণে বোর্ডে আটকা পড়ে যেতে পারে, ঠিক পাশের ছবিটার মতো।
এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, সাদা সৈন্যগুলো সামনে যেতে পারছে না। কারণ, তাদের রাস্তা আটকে দিয়েছে দুটো কালো সৈন্য (আমরা সৈন্যদের চাল সম্পর্কে একটু পরই শিখব) এবং এর ফলে সাদা সৈন্য দুটো নিজেরাই তার নিজের দলের হাতির রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। এভাবে যদি কোনো হাতি বোর্ডে আটকা পড়ে যায়, তাহলে এ ধরনের হাতিকে দাবার ভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘Bad Bishop’, আমরা বাংলায় একে বলতে পারি অকেজো হাতি। সব সময় খেয়াল রাখবে যেন তোমার হাতি এমন কোনো অবস্থায় না পড়ে যায়।
খেলার শুরুতে প্রতি দল দুটি করে হাতি নিয়ে খেলা শুরু করে। নিচের ছবিতে আমরা খেলার শুরুতে বোর্ডে হাতির অবস্থান দেখতে পাব, c8 ও f8 ঘরে বসেছে কালো দলের দুই হাতি এবং c1 ও f1 ঘরে বসেছে সাদা দলের দুই হাতি।
তোমরা লক্ষ করবে, প্রতি দলের দুটি হাতির চলার পথ একটু ভিন্ন। আমরা জানি, বোর্ডে দুই ধরনের ঘর আছে, সাদা ও কালো। প্রতি দলের দুটি হাতি এই ঘরগুলো দিয়ে আলাদাভাবে চলাচল করে। অর্থাৎ ধরো, সাদা দলের দুটি হাতি আছে, একটি হাতি বোর্ডের সাদা ঘরগুলো দিয়ে কোনাকুনি চলবে এবং আরেকটি হাতি বোর্ডের কালো ঘরগুলো দিয়ে কোনাকুনি চলবে। কালো দলের হাতিগুলোও একই নিয়মে চলাচল করবে।
যখন বোর্ডের এক মাথা থেকে আরেক মাথার কোনাকুনি লাইনগুলো ফাঁকা থাকে, এমন পজিশনে হাতি খুবই শক্তিশালী এবং তখন হাতি দিয়ে খুব ভালো আক্রমণ করা যায়। কিন্তু যখন বোর্ডের ঘরগুলোতে সৈন্য বা অন্যান্য ঘুঁটি থাকে বা হাতি যে রঙের ঘরগুলো দিয়ে চলবে, সেই ঘরগুলো যদি ফাঁকা না থাকে, তাহলে হাতি বোর্ডে তেমন কিছু করতে পারে না।
হাতি ব্যবহারের কিছু মাস্টার টিপস
সৈন্যকে যদি আমরা বাদ দিই, তাহলে হাতি ও ঘোড়াকে দাবার সবচেয়ে কম শক্তিশালী ঘুঁটি হিসেবে ধরা হয়।
এদের দাবার ভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘Minor Pieces’।
যখন বোর্ডে ঘুঁটি কমে আসে এবং অনেক ঘর খালি হয়ে যায়, এমন অবস্থায় হাতি খুবই শক্তিশালী, পক্ষান্তরে যখন অনেক ঘুঁটির ফলে বোর্ডে জায়গা কম থাকে, তখন এটি অপেক্ষাকৃত দুর্বল ঘুঁটি।
বিপক্ষ দলের রাজাকে তুমি নিজের রাজা ও একটি হাতি দিয়ে চেকমেট করতে পারবে না। কিন্তু তোমার রাজার সঙ্গে যদি দুটি হাতি অথবা একটি হাতি ও একটি ঘোড়া থাকে, তাহলে তুমি বিপক্ষ দলের রাজাকে চেকমেট করতে পারবে। এর জন্য বিপক্ষ দলে অবশ্যই রাজা ছাড়া অন্য কোনো ঘুঁটি থাকা যাবে না।
রানি (The Queen)
দাবা খেলার সবচেয়ে শক্তিশালী ঘুঁটি হলো রানি। নৌকা ও হাতি, এই দুটি ঘুঁটির চাল একত্র করলেই রানির চাল পাওয়া যাবে। যেহেতু আমরা নৌকা ও হাতির চাল সম্পর্কে জেনে গেছি, ফলে আমরা খুব সহজেই রানির চাল বুঝতে পারব।
এত দিনে তোমরা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ যে রানিই তোমার প্রধান ঘুঁটি। ধরো, তোমার ভুলে অন্য যেকোনো ঘুঁটি বোর্ডে কাটা গেলেও সেখান থেকে জেতার অনেক সুযোগ থাকে, কিন্তু তোমার রানি যদি এভাবে কাটা যায়, তাহলে খেলায় আর টিকে থাকা যায় না। রানি খুব সহজেই ধ্বংসাত্মক হয়ে উঠতে পারে, বিশেষ করে এটি যদি বিপক্ষ দলের রাজার আশপাশে যেতে পারে। কিন্তু যেহেতু এটি তোমার খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘুঁটি, ফলে এটিকে সাবধানে ব্যবহার করতে হবে। বলা হয়ে থাকে, একটি রানি প্রায় দুটি নৌকার সমান শক্তিশালী। নৌকা ও রানিকে দাবার ভাষায় বলা হয়ে থাকে ‘Major Pieces’। অর্থাৎ এই দুই ঘুঁটিই বোর্ডের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও শক্তিশালী ঘুঁটি।
এবার এসো আমরা রানির চাল সম্পর্কে ভালোমতো জেনে নিই।
পাশের ছবিটি লক্ষ করো। ছবিতে বোর্ডের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা যে ঘরগুলো চিহ্নিত করা আছে, রানি সেই ঘরগুলোতে যেতে পারবে। ঘরগুলো গুনলে তোমরা দেখবে যে এখন বোর্ডটির মোট ২৭টি ঘরে রানি যেতে পারবে। দাবা বোর্ডে ঘর আছে ৬৪টি। যে বোর্ডের মাঝে দাঁড়িয়েই প্রায় এর অর্ধেক ঘর পাহারা দিতে পারে, তার ক্ষমতা সম্পর্কে নিশ্চয়ই নতুন করে আর কিছু বলে দিতে হবে না! কিন্তু একটা বিষয় হলো, এটিও হাতি ও নৌকার মতোই এর সামনে কোনো ঘুঁটি থাকলে ঠিক তার আগের ঘর পর্যন্তই যেতে পারবে এবং বিপক্ষ দলের ঘুঁটি হলে সেটি কেটে সেই ঘরের জায়গা দখল করবে।
এবার পাশের ছবিটি দেখি। ছবিতে দেখা যাচ্ছে, আশপাশের কয়েকটি ঘুঁটির জন্য রানির চলার পথ একটু সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে।
রানির যে এত ক্ষমতা, এ জন্য তোমাদের অনেকে হয়তো যত দ্রুত সম্ভব রানিকে খেলায় নিয়ে আসতে চাইবে। কিন্তু মনে রাখবে, খেলার শুরুতে রানিকে বোর্ডের মাঝখানে বের না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। আর বের করলেও তা করতে হবে খুব সতর্কতার সঙ্গে। কারণ, খেলার শুরুতে যেহেতু বোর্ডে অনেক ঘুঁটি থাকে, তখন খুব সহজেই অন্য ঘুঁটিগুলো দিয়ে রানিকে আক্রমণ করা যায় এবং অনেক সময় রানির পালানোর পথও থাকে না। ফলে খেলার শুরুতে ধৈর্য ধরে রানিকে কিছুক্ষণের জন্য অন্য ঘুঁটিগুলোর পেছনে রাখাই উত্তম।
দাবা খেলায় উভয় দল একটি করে রানি নিয়ে খেলা শুরু করে। নিচের ছবিতে তোমরা খেলার শুরুতে বোর্ডে রানির অবস্থান দেখতে পারবে। সাদা রানি বসবে d1 ঘরে এবং কালো রানি বসবে d8 ঘরে।
একনজরে
রানির মূল্য ৯ পয়েন্ট। অর্থাৎ বিপক্ষ দলের রানিকে কেটে দিলে তুমি ৯ পয়েন্ট পাবে।
বোর্ডে ঘুঁটি কমে এলে আক্রমণ করার জন্য রানির চেয়ে ভালো অস্ত্র আর কিছুই হয় না।
রানি ঘুঁটিটি ব্যবহারের কিছু মাস্টার টিপস
মনে রাখবে, রানি তোমার সবচেয়ে মূল্যবান ঘুঁটি। রানি ও নৌকাকে দাবায় ‘Major Pieces’ বলা হয়।
রানি খুবই আক্রমণাত্মক ঘুঁটি। খুব সহজেই একে দিয়ে বিপক্ষ দলের রাজাকে চেকমেট করা যায়। ফলে যখন খেলার কোনো পর্যায়ে দুই দলের রানির ‘Trade’ হয়, অর্থাৎ এক নিজের রানির বিনিময়ে অপর দলের রানিকে কেটে দেওয়া হয়, তখন খেলায় খুব সহজেই চেকমেট করার বা হওয়ার সম্ভাবনা কমে আসে।
খেলার শুরুতে এ ঘুঁটি সাবধানে ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়। সবচেয়ে ভালো হয় যদি খেলার শুরুর কিছুক্ষণ পর কয়েকটি ‘Minor Piece’, অর্থাৎ হাতি বা ঘোড়া কাটা যাওয়ার পর যদি রানিকে বের করা হয়।
বিপক্ষ দলে যখন রাজা ছাড়া আর কোনো ঘুঁটি থাকে না, তখন তুমি তোমার রানি ও রাজাকে ব্যবহার করে খুব সহজেই প্রতিপক্ষকে চেকমেট করতে পারবে। এভাবে চেকমেট করতে শেখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমরা সামনের পর্বগুলোতে পর্যায়ক্রমে এগুলো শিখে নেব।